প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরো ভাষণ
দশম
জাতীয় সংসদের বছরপূর্তী উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা সোয়া ৭টার জাতির উদ্দেশে ভাষণ
দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সেই ভাষণ পুরোপুরি তুলে
ধরা হল:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আজ ৫ জানুয়ারি। গত বছরের এই দিনে আপনারা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশের জনগণের দল, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সরকার গঠনের ম্যান্ডেট দিয়েছিলেন।
আজকের এই দিনে বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
স্মরণ করছি ৩ নভেম্বর জেলখানায় নিহত জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, স্বজন হারানো পরিবার ও একাত্তরের নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।
গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, আমার তিন ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, শেখ কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহোদর শেখ নাসের, কর্ণেল জামিলসহ সেই রাতের সকল শহীদকে।
স্মরণ করছি, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ শহীদ ২২ নেতা-কর্মীকে।
স্মরণ করছি বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে।
দশম সংসদের যে সকল সংসদ সদস্য ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির শিকার হয়ে নিরীহ বাসড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিশুও নিহত হয়েছে। আহত হয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আমি জামাত-বিএনপি জোটের নির্মমতার শিকার হয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আহতদের জন্য আমার আন্তরিক সহানুভূতি।
প্রিয় দেশবাসী,
৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
তারা শত শত গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ভাংচুর করেছে হাজার হাজার গাড়ি। মহাসড়কসহ গ্রামের রাস্তার দু’পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। পুলিশ-বিজিবি-আনসার-সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে।
তাদের সহিংস হামলা, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায় নিহত হয়েছে শত শত নিরীহ মানুষ।
সরকারি অফিস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান এমনকি নিরীহ পশুও তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর সামনে হাজার হাজার পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে এবং ফিসপ্লেট খুলে শতশত বগি এবং রেলইঞ্জিন ধ্বংস করেছে।
নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ সর্মথকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে।
সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগকে উপেক্ষা করে আপনারা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। ভোট দিয়েছেন। গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন।
নির্বাচনের আগে আমরা সংলাপে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সংবিধানের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরণের ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
বাংলাদেশের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকারের কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের শুধু একটাই দাবী ছিল, সংবিধানের মধ্য থেকে আমরা নির্বাচন করতে চাই। সেখানে যত ধরণের ছাড় দেওয়া সম্ভব, তা দিতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
বিএনপি-জামাত জোট চেয়েছিল দেশে একটা অরাজক এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল।
কিন্তু দেশের মানুষ তাদের সেই ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে পা দেননি।
প্রিয় দেশবাসী,
আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আপনাদের সহযোগিতার ফলে উন্নয়নের যে কাজগুলি আমরা শুরু করেছিলাম, তা সমাপ্ত করতে পারছি। পাশাপাশি নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।
আগামী দিনেও যে কোন ধরণের নাশকতা এবং জঙ্গিবাদী কর্মকা- সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবেন, আপনাদের কাছে আমি সেই অনুরোধ করছি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছি। এমন এক অবস্থায় আমরা সরকার গঠন করেছিলাম যখন সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং চরম খাদ্যাভাব চলছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন. দুর্নীতি, জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এবং দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করে সমাজের সকলস্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। মানুষের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস সঞ্চার করি। নব উদ্যমে দেশ গড়ার কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করি।
সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করি। দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি।
আজ দেশের মানুষ ভাল আছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে ২০১৪ সাল বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যের বছর।
আমাদের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ফলে গত মেয়াদের পাঁচ বছর এবং এই মেয়াদের প্রথম বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বের সামনে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি দেশের একটি- বাংলাদেশ।
আমরা ৬.২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করেছি।
বিএনপি-জামাত জোট আমলের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৯০ মার্কিন ডলারে।
৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি-জামাতের শেষ বছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। আমরা তা কমিয়ে ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
২০০৬ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.২ শতাংশ। তা এখন কমে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে।
মানুষের আয় বেড়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে আমরা এককোটি মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। ২৫ লাখ মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
২০০৬ সালে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে তা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.২৩ বিলিয়ন ডলারে।
২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ ছয়গুণ বেড়ে ২২.৩৯ বিলিয়ন ডলার।
২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল মাত্র ০.৭৯ বিলিয়ন ডলার যা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৬.৮৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০০১ সালে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন রেখে এসেছিলাম ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামাতের সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে।
এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৩ হাজার ২৮৩ মেগাওয়াট।
২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।
যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে।
মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।
সারাদেশে ১৪টি বৃহৎ সেতু, ৪ হাজার ৫০৭টি মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৩ হাজার ৭৫১টি কালভার্ট এবং ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
সচেতন দেশবাসী,
বিএনপি-জামাত জোট আমলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে খাদ্য-শস্য উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সার, সেচ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি বাবদ প্রায় ৪০ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার কৃষিসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। আমরা এখন চাল রপ্তানিও শুরু করেছি।
প্রিয় দেশবাসী,
২০০১-এ বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৬৯ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকার ৬ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি বই বিতরণ করেছে।
এবছরের পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরাও ব্রেইল পদ্ধতির বই পাচ্ছে।
প্রথম শ্রেণী থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
২৬ হাজার ১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে সহকারি শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।
সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ১৭২ টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ২০ হাজার ৫০০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা হবে।
এক হাজার ৪৯৭টি স্কুলে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ডসিস্টেম ও ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ৩ হাজার ৯৩০টি স্কুলে একই ধরণের উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়।
১৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে ৩০ পদের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।
৬ বছরে সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর।
দেশের প্রায় সব শিশুকে টিকাদান কর্মসূচী এবং সব মানুষকে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি এবং স্যানিটেশনের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
গত ছয় বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
৫ হাজার ২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরণের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহক ১১ কোটি ৯৭ লাখ। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৩০ লাখ।
২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল “জাতীয় তথ্য বাতায়ন” চালু করেছে সরকার।
আইটি সেক্টরে বিদেশ থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে এই প্রথম নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট তৈরি হচ্ছে।
আজ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদকে আমরা সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। সংসদীয় কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। তারা মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকি করছে।
সংসদের স্বচ্ছতা আনার জন্য আমরা সংসদ টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। সংসদের কার্যক্রম সরাসরি প্রচারিত হচ্ছে।
গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের ৬০ বছর করা হয়েছে।
সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন আবারও দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হবে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে ব্যাপকভাবে পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি।
জাতির পিতা প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল- ২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।
পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হয়েছে।
শ্রম আইন ও শ্রমনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন করা হয়েছে ৪ হাজার ১৭৫ টাকা।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকার পাটকল বন্ধ করেছিল। বিজেএমসির ২৭টি বন্ধ পাটকলের মধ্যে ২৩টি চালু করেছি। আরও ৩টি চালু করা হবে।
২৭ লাখ ২২ হাজার ৫০০ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক মানুষ প্রতিমাসে ৪০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
৪ লাখ প্রতিবন্ধী প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
আশ্রয়ণ, একটি বাড়ী একটি খামার, ঘরে ফেরা কার্যক্রম, দুস্থভাতাসহ ১২৮টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যক্রম থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সুবিধা পাচ্ছেন।
১ লাখ ২০ হাজার ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৫৫ হাজার একর কৃষি জমি বিতরণ করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখেরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বিজিবি’র মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার যশোর, সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার সংখ্যালঘু পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত উপাসনালয়, বাড়িঘর ও দোকানপাট পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী দ্বারা রামুর বৌদ্ধবিহার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, হিজড়া, দলিত, বেদে ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমরা দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করি। যারফলে দেশে দুর্নীতি অনেক কমে এসেছে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাক-স্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ।
১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০টি মামলা দায়ের এবং ৭৫০টি হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটে। অনেক সাংবাদিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
বাংলাদেশে মিডিয়া এখন পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার নতুন ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
‘সাংবাদিক সহায়তা ভাতা বা অনুদান নীতিমালা, ২০১২-এর আওতায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছেন।
সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুইটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাচিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও সুসংহত হয়েছে।
গত বছর বাংলাদেশ ওগঝঙ, ওঞট এবং হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে।
ইউনেসকো আমাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরষ্কারে ভূষিত করেছে।
জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন দপ্তর এবং অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস আমাকে ঠরংরড়হধৎু অধিৎফ-২০১৪ প্রদান করেছে।
আমরা এমডিজি ১ থেকে ৪ অর্জন করেছি।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবং ওঞট–এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জনের ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
“সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়” এই পররাষ্ট্রনীতির আলোকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থান করে নিতে পেরেছে।
শান্তিপ্রিয় দেশবাসী,
আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলছে। রায় কার্যকর করা হচ্ছে।। ইনশাআল্লাহ আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করব।
এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে।
বিএনপি’র নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা ছিল একটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে?
বিএনপি নেত্রীকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি- নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা-গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করুন।
আপনার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আজ আপনি ও আপনার দল সংসদে নেই। আপনি কাকে দোষ দেবেন? আপনার নিজেকেই দোষ দিতে হবে।
নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কী কী করতে চান তা মানুষকে জানান। নিজের দলকে গড়ে তুলুন। তাহলেই হয়ত ভবিষ্যতে সম্ভাবনা থাকবে।
যে পথে আপনি চলছেন তা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও হারাবেন।
মানুষ নিরাপত্তা চায়, শান্তি চায়, উন্নতি চায়।
আমরা অসুস্থ রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে রাজনীতি দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
প্রিয় দেশবাসী,
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। ইনশাআল্লাহ তার পূর্বেই আমরা সেটা করতে পারব।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা এ লক্ষ্যপূরণে সফল হব। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।
বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবেন। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আজ ৫ জানুয়ারি। গত বছরের এই দিনে আপনারা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশের জনগণের দল, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সরকার গঠনের ম্যান্ডেট দিয়েছিলেন।
আজকের এই দিনে বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
স্মরণ করছি ৩ নভেম্বর জেলখানায় নিহত জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, স্বজন হারানো পরিবার ও একাত্তরের নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।
গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, আমার তিন ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, শেখ কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহোদর শেখ নাসের, কর্ণেল জামিলসহ সেই রাতের সকল শহীদকে।
স্মরণ করছি, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ শহীদ ২২ নেতা-কর্মীকে।
স্মরণ করছি বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে।
দশম সংসদের যে সকল সংসদ সদস্য ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির শিকার হয়ে নিরীহ বাসড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিশুও নিহত হয়েছে। আহত হয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আমি জামাত-বিএনপি জোটের নির্মমতার শিকার হয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আহতদের জন্য আমার আন্তরিক সহানুভূতি।
প্রিয় দেশবাসী,
৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
তারা শত শত গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ভাংচুর করেছে হাজার হাজার গাড়ি। মহাসড়কসহ গ্রামের রাস্তার দু’পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। পুলিশ-বিজিবি-আনসার-সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে।
তাদের সহিংস হামলা, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায় নিহত হয়েছে শত শত নিরীহ মানুষ।
সরকারি অফিস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান এমনকি নিরীহ পশুও তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর সামনে হাজার হাজার পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে এবং ফিসপ্লেট খুলে শতশত বগি এবং রেলইঞ্জিন ধ্বংস করেছে।
নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ সর্মথকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে।
সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগকে উপেক্ষা করে আপনারা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। ভোট দিয়েছেন। গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন।
নির্বাচনের আগে আমরা সংলাপে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সংবিধানের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরণের ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
বাংলাদেশের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকারের কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের শুধু একটাই দাবী ছিল, সংবিধানের মধ্য থেকে আমরা নির্বাচন করতে চাই। সেখানে যত ধরণের ছাড় দেওয়া সম্ভব, তা দিতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
বিএনপি-জামাত জোট চেয়েছিল দেশে একটা অরাজক এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল।
কিন্তু দেশের মানুষ তাদের সেই ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে পা দেননি।
প্রিয় দেশবাসী,
আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আপনাদের সহযোগিতার ফলে উন্নয়নের যে কাজগুলি আমরা শুরু করেছিলাম, তা সমাপ্ত করতে পারছি। পাশাপাশি নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।
আগামী দিনেও যে কোন ধরণের নাশকতা এবং জঙ্গিবাদী কর্মকা- সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবেন, আপনাদের কাছে আমি সেই অনুরোধ করছি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছি। এমন এক অবস্থায় আমরা সরকার গঠন করেছিলাম যখন সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং চরম খাদ্যাভাব চলছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন. দুর্নীতি, জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এবং দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করে সমাজের সকলস্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। মানুষের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস সঞ্চার করি। নব উদ্যমে দেশ গড়ার কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করি।
সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করি। দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি।
আজ দেশের মানুষ ভাল আছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে ২০১৪ সাল বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যের বছর।
আমাদের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ফলে গত মেয়াদের পাঁচ বছর এবং এই মেয়াদের প্রথম বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বের সামনে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি দেশের একটি- বাংলাদেশ।
আমরা ৬.২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করেছি।
বিএনপি-জামাত জোট আমলের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৯০ মার্কিন ডলারে।
৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি-জামাতের শেষ বছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। আমরা তা কমিয়ে ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
২০০৬ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.২ শতাংশ। তা এখন কমে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে।
মানুষের আয় বেড়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে আমরা এককোটি মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। ২৫ লাখ মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
২০০৬ সালে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে তা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.২৩ বিলিয়ন ডলারে।
২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ ছয়গুণ বেড়ে ২২.৩৯ বিলিয়ন ডলার।
২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল মাত্র ০.৭৯ বিলিয়ন ডলার যা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৬.৮৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০০১ সালে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন রেখে এসেছিলাম ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামাতের সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে।
এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৩ হাজার ২৮৩ মেগাওয়াট।
২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।
যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে।
মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।
সারাদেশে ১৪টি বৃহৎ সেতু, ৪ হাজার ৫০৭টি মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৩ হাজার ৭৫১টি কালভার্ট এবং ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
সচেতন দেশবাসী,
বিএনপি-জামাত জোট আমলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে খাদ্য-শস্য উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সার, সেচ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি বাবদ প্রায় ৪০ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার কৃষিসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। আমরা এখন চাল রপ্তানিও শুরু করেছি।
প্রিয় দেশবাসী,
২০০১-এ বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৬৯ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকার ৬ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি বই বিতরণ করেছে।
এবছরের পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরাও ব্রেইল পদ্ধতির বই পাচ্ছে।
প্রথম শ্রেণী থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
২৬ হাজার ১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে সহকারি শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।
সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ১৭২ টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ২০ হাজার ৫০০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা হবে।
এক হাজার ৪৯৭টি স্কুলে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ডসিস্টেম ও ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ৩ হাজার ৯৩০টি স্কুলে একই ধরণের উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়।
১৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে ৩০ পদের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।
৬ বছরে সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর।
দেশের প্রায় সব শিশুকে টিকাদান কর্মসূচী এবং সব মানুষকে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি এবং স্যানিটেশনের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
গত ছয় বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
৫ হাজার ২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরণের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহক ১১ কোটি ৯৭ লাখ। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৩০ লাখ।
২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল “জাতীয় তথ্য বাতায়ন” চালু করেছে সরকার।
আইটি সেক্টরে বিদেশ থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে এই প্রথম নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট তৈরি হচ্ছে।
আজ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদকে আমরা সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। সংসদীয় কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। তারা মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকি করছে।
সংসদের স্বচ্ছতা আনার জন্য আমরা সংসদ টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। সংসদের কার্যক্রম সরাসরি প্রচারিত হচ্ছে।
গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের ৬০ বছর করা হয়েছে।
সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন আবারও দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হবে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে ব্যাপকভাবে পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি।
জাতির পিতা প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল- ২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।
পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হয়েছে।
শ্রম আইন ও শ্রমনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন করা হয়েছে ৪ হাজার ১৭৫ টাকা।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকার পাটকল বন্ধ করেছিল। বিজেএমসির ২৭টি বন্ধ পাটকলের মধ্যে ২৩টি চালু করেছি। আরও ৩টি চালু করা হবে।
২৭ লাখ ২২ হাজার ৫০০ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক মানুষ প্রতিমাসে ৪০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
৪ লাখ প্রতিবন্ধী প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
আশ্রয়ণ, একটি বাড়ী একটি খামার, ঘরে ফেরা কার্যক্রম, দুস্থভাতাসহ ১২৮টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যক্রম থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সুবিধা পাচ্ছেন।
১ লাখ ২০ হাজার ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৫৫ হাজার একর কৃষি জমি বিতরণ করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখেরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বিজিবি’র মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার যশোর, সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার সংখ্যালঘু পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত উপাসনালয়, বাড়িঘর ও দোকানপাট পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী দ্বারা রামুর বৌদ্ধবিহার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, হিজড়া, দলিত, বেদে ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমরা দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করি। যারফলে দেশে দুর্নীতি অনেক কমে এসেছে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাক-স্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ।
১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০টি মামলা দায়ের এবং ৭৫০টি হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটে। অনেক সাংবাদিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
বাংলাদেশে মিডিয়া এখন পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার নতুন ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
‘সাংবাদিক সহায়তা ভাতা বা অনুদান নীতিমালা, ২০১২-এর আওতায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছেন।
সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুইটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাচিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও সুসংহত হয়েছে।
গত বছর বাংলাদেশ ওগঝঙ, ওঞট এবং হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে।
ইউনেসকো আমাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরষ্কারে ভূষিত করেছে।
জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন দপ্তর এবং অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস আমাকে ঠরংরড়হধৎু অধিৎফ-২০১৪ প্রদান করেছে।
আমরা এমডিজি ১ থেকে ৪ অর্জন করেছি।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবং ওঞট–এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জনের ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
“সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়” এই পররাষ্ট্রনীতির আলোকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থান করে নিতে পেরেছে।
শান্তিপ্রিয় দেশবাসী,
আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলছে। রায় কার্যকর করা হচ্ছে।। ইনশাআল্লাহ আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করব।
এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে।
বিএনপি’র নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা ছিল একটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে?
বিএনপি নেত্রীকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি- নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা-গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করুন।
আপনার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আজ আপনি ও আপনার দল সংসদে নেই। আপনি কাকে দোষ দেবেন? আপনার নিজেকেই দোষ দিতে হবে।
নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কী কী করতে চান তা মানুষকে জানান। নিজের দলকে গড়ে তুলুন। তাহলেই হয়ত ভবিষ্যতে সম্ভাবনা থাকবে।
যে পথে আপনি চলছেন তা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও হারাবেন।
মানুষ নিরাপত্তা চায়, শান্তি চায়, উন্নতি চায়।
আমরা অসুস্থ রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে রাজনীতি দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
প্রিয় দেশবাসী,
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। ইনশাআল্লাহ তার পূর্বেই আমরা সেটা করতে পারব।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা এ লক্ষ্যপূরণে সফল হব। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।
বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবেন। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
No comments