অটোরিকশায় ৭ ঘাট ঘুরে লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায়
কোন
ঘোষণা ছিল না। ছিল না বিরোধী জোটের হরতাল- অবরোধসহ কোন কর্মসূচি। তবু হঠাৎ
রাস্তাঘাট খালি। উধাও সব ধরনের গণপরিবহন। এ অবস্থায় লক্ষ্মীপুর থেকে
কর্মস্থল ঢাকায় রওয়ানা হন জাকির হোসেন। সিএনজি অটোরিকশায় ৭ ঘাট ঘুরে বেলা
১২টায় ঢাকায় পৌঁছান তিনি। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন
জাকির। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটিতে বাড়ি যান। গতকাল সকালে ঢাকার
উদ্দেশে রওয়ানা দেন জাকির। কিন্তু রাস্তায় আন্তঃজেলা বাস তো দূরের কথা
লোকাল কোন বাস নেই। এ অবস্থায় সিএনজি অটোরিকশায় লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুর যান
তিনি । ভাড়া দেন ৩০ টাকা। রায়পুর থেকে আবারও অটোরিকশায় চড়েন জাকির। ৪০
টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। ফরিদগঞ্জ থেকে
একইভাবে চাঁদপুর যান তিনি। ভাড়া পরিশোধ করেন ৫০ টাকা। এখান থেকে ৫ টাকায়
নদী পার হয়ে শ্রীবারের চর হয়ে আবার সিএনজি অটোরিকশায় উঠে পৌঁছান দাউদকান্দি
ব্রিজ। এখানে ভাড়া পরিশোধ করেন ৫০ টাকা। দাউদকান্দি থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায়
রাজধানীর উপকণ্ঠ চিটাগাং রোডে পৌঁছান। সেখান থেকে টেম্পোতে ৩০ টাকা ভাড়ায়
যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে ৫০ টাকায় রাজধানীর শাপলা চত্বরে পৌঁছে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন জাকির। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ঈদে
মিলাদুন্নবীর ছুটি সহ তিনদিন বন্ধ ছিল দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব
প্রতিষ্ঠান। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গণপরিবহনের ওপর সরকারের অঘোষিত
নিষেধাজ্ঞার কারণে জাকিরের মতো বহু লোক এমনিভাবে কর্মস্থলে পৌঁছেন। জাকির
হোসেন বলেন, সাম্প্রতিককালে বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধেও সীমিত আকারে হলেও
গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু গতকালের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তিন দিনের ছুটির পর প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ নানা নগরমুখী
হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ সড়ক পথে গণপরিবহন উধাও হয়ে যাওয়ায় মানুষকে সীমাহীন
দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা পথ ঘুরে গন্তব্যে
পৌঁছতে অনেকেরই গুনতে হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া। তবে যানবাহনের অভাবে বাড়ি
ফিরে গেছে বেশির ভাগ মানুষ। ওদিকে ঢাকা মহানগরীতেও গতকাল দিনভর অঘোষিত
অবরোধের চিত্র ছিল। বন্ধ ছিল বেশির ভাগ হোটেল, রেস্তরাঁ এমনকি আবাসিক
হোটেল। যানবাহনশূন্য রাজধানীতে কর্মস্থলগামী অধিকাংশ মানুষকে গন্তব্যে
পৌঁছতে হয়েছে পায়ে হেঁটে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী
শিক্ষার্থীরা। বছরের শুরুতে প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল খোলা। নতুন
ক্লাসের বই নেয়া, নতুন ক্লাসে নাম তোলাসহ বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থী এবং
অভিভাবকরা বের হয়েছেন বিদ্যালয়ের উদ্দেশে। কিন্তু যানবাহনের শূন্যতায়
অনেকেই বাসায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ওদিকে বেলা ১২টায় রাজধানীর টিকাটুলী,
মতিঝিল এলাকায় দেখা গেছে হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে শুরু করে পান দোকান পর্যন্ত
বন্ধ। গতকাল ভোর বেলায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ প্রতিটি হোটেল-রেস্তরাঁ এবং
রাস্তার পার্শ্বের পান দোকানে গিয়ে সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। সন্ধ্যা
পর্যন্ত পুলিশের এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল।
No comments