নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাজপথে আওয়ামী লীগ
দুই জোটের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে খোদ সরকারি দলই। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীতে মিছিল, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূটি পালন করে। মোটর র্যালিও হয়েছে কোথাও কোথাও। গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন ও বিএনপির নাশকতার প্রতিবাদে এসব কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। তবে বিষয়টি স্বীকার করেননি আওয়ামী লীগের মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্যের বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, সাংবাদিকরাই নিষেধাজ্ঞা প্রথম ভেঙেছেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তিনি গতকাল লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরে সমাবেশে যোগ দেন। সকাল দশটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, জিপিও মোড়, গুলিস্তান ও তার আশপাশ এলাকায় মিছিল সহযোগে মোটর র্যালি বের করে ছাত্রলীগ। এ সময় পুলিশের কাঁটাতারের ব্যারিকেড উপেক্ষা করে মোটরসাইকেল র্যালিটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে চক্কর দিলেও উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মিছিলে বাধা দেননি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। মিছিলটি ঝিগাতলা ও ধানমন্ডির কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবলা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিরপুরের কাফরুল, টেকনিক্যাল ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পৃথক পৃথক তিনটি মিছিল বের করে। মিরপুর-১ এ মিছিলের পাশাপাশি সমাবেশও করেছে মিরপুর থানা ছাত্রলীগ। ঝিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে র্যালি ও সমাবেশ করে মোটরচালক লীগ। এছাড়া শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, আদাবর এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে ছাত্রলীগ ও প্রেস ক্লাবের সামনে যুবলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। দুপুর পৌনে ২টায় ১২টি পিকআপ ভ্যান ও প্রায় ২০টি মোটরসাইকেল সহযোগে মিছিল ও সংগীত পরিবেশন করে আওয়ামী স্বাধীন লীগ। মিছিলটি শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, জিপিও মোড়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রদক্ষিণ করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন বাধা না দিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। এসময় মিছিলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের নামে স্লোগান দেয়া হয়। পরে গোলাপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারা মিছিল করছে এ তথ্য তার জানা নেই। এদিকে রাজধানীতে নিষেধাজ্ঞা জারির পরও মিটিং-মিছিল হলেও এর সত্যতা স্বীকার করেননি ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ডিএমপি’র উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানীতে আমাদের জানামতে এ নিষেধাজ্ঞা কেউ উপেক্ষা করেনি। হয়তো বা কেউ কেউ রাস্তার পাশে জমায়েত হয়ে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু সভা-সমাবেশ করা হয়েছে- এমন খবর পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মিছিল ও সমাবেশের বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কামরুল ইসলামের নজরে আনলে তিনি বলেন, মিছিল-মিটিং নয়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সকালে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। রাস্তা দখল করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে সভা করছে, স্লোগান দিচ্ছে, মিছিল করছে, এটা ডিএমপি’র নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন কিনা- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। কোথাও কোন স্লোগান-মিছিল হচ্ছে না। এই অবস্থান ডিএমপি’র নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন নয়। এদিকে ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, জিপিও মোড় ও বায়তুল মোকাররমের দিক থেকে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ। এসময় দলের নেতাকর্মীদের সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়। এসময় তারা কার্যালয়ের সামনেই অবস্থান করেন। ১১টার দিকে লুঙ্গি পরিহিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কার্যালয়ের নিচে নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে অবস্থান করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কোথাও মিছিল হচ্ছে না। আমাদের নেতাকর্মীরা পাড়ায়-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি সংস্কারের জন্য ইট ও বালুভর্তি ট্রাক রাখা হয়েছে, তাকে অবরুদ্ধ করার জন্য নয়।
No comments