কেউ কথা রাখেনি ১২০ বছর বয়সের ফটিক লালের by রফিকুল আলম
ঘরে বসার মতো কোনো ঠাঁই নেই। ঝুর ঝুর করে
ক্ষয়ে পড়ছে উঁইপোকা ধরা বোনের বেড়া। মাথার ওপর বাঁশের ঘুনে খাওয়া সিলিং।
ভাঙাচোরা ঘরে ঢুকতে হয় কুঁজো হয়ে। ঘাড় টান করে দাঁড়াতে চাইলেই সতর্ক করে
দেয় ঘরের আয়তন। এক কোনে জড়সড় বসা বৃদ্ধ ফটিক লাল। মুখে সকালের জলখাবার। বয়স
যার ১২০ বছর। জলন্ত চিতার হাতছানি। এখন পরকালের সুখ প্রাপ্তির অভিলাসে
প্রহর গুণে সময় কাটান। ছোটবেলা যখন তার বইখাতা বগলদা করে স্কুলের ঘণ্টা
শুনে দৌড়ে যাওয়ার কথা, তখন তাকে বাবাহারা সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। জীবিকার
তাগিদে নরম কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল পালকি। বাপ-দাদার পেশা বেহারা হিসেবে
সেদিন জীবনযুদ্ধে নামতে হয়েছিল তাকে। তার পালকিতে চড়ে জীবনের শুভ সূচনা
করেছে অনেক দম্পতি। তারা এখন সুখের স্বপ্নচূড়ায় বাস করছে। কিন্তু দীর্ঘ
কর্ম ইতিহাসে ফটিক লালের হিসেবের খাতায় জমা হয়েছে কায়ক্লেশী জীবন আর ভাজ
হওয়া শরীর। তার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার্ধক্য। চোখে তার কুয়াশার
ভোর। যেন সব কিছুর রং ধুসর। জন্মের পর থেকে অভাবের সঙ্গে বুনন করেন
বন্ধুত্ব। সেই সঙ্গে আমৃত্যু তাকে সঙ্গী করা এসব মানুষের একমাত্র স্বপ্ন
বেঁচে থাকা ছাড়া আর কী-ই-বা হতে পারে। ফটিক লাল ছিল সেকালের পালকি বাহক।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার জোলাগাতি গ্রামের গংগা ধরের ছেলে। ফটিক লাল ৬ ছেলে ও ৪
মেয়ের জনক। বর্তমানে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ ৪৬ জন তার বংশের
প্রদীপ। ফটিক লালের ছোট ছেলে শুকা চন্দ্রের বয়স ৫ বছর। প্রায় ১৫ বছর আগে
ফটিক লালের প্রথম স্ত্রী বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। এরপর নিজের দেখভাল
করার জন্য বুদ্ধি প্রতিবন্ধি এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর
ভিক্ষের আয় দিয়ে চলছে ফটিক লালের সংসার। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন
কাটছে। সহায় সম্বল বলতে মাত্র এক শতক জমি। সেখানে ছুপড়ি ঘরে ওদের মাথা
গোঁজার ঠাই হয়েছে। ফটিক লাল সরকারি সাহায্য সহযোগিতার জন্য এলাকার
জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেছেন। তারা বহুবার ফটিক লালকে কথা দিয়েছেন। কিন্তু
আজও কেউ কথা রাখেননি।
ফটিক লালের ছেলে আন্দাইরা চন্দ্র জানায়, নিজের সংসারই চালাতে পারছেন না। তাই বাবার ভরন-পোষণ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। এলাকার মেম্বরের কাছে বাবার জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ড চেয়েছেন। কিন্ু্ত বাবার কষ্টের দিকে কেউ একবারও ফিরে তাকায়নি। মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মাহবুবুর রহমান ফিরোজ বলেন, এমন লোকের কথা কেউ আমাকে অবগত করেনি। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই তার নামে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
No comments