দাদার স্বপ্ন নির্মাণের ভূমি ঘুরে গেলেন ওবামা
মিয়ানমার সফর করে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম মিয়ানমার সফর ছিল এটা। তবে ওবামা বংশের কোনো পুরুষের মিয়ানমারে যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ওবামার কেনীয় দাদা হুসেইন ওনিয়াঙ্গো ওবামা এই দেশে দীর্ঘদিন কাটিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনের বাবুর্চি হিসেবে তৎকালীন বার্মায় যান তিনি। এ কারণেই মিয়ানমারের সঙ্গে বারাক ওবামার রয়েছে শেকড়ের সম্পর্ক। এ দেশে থাকাকালেই ওনিয়াঙ্গোর ভেতরে বসত গাড়ে স্বাধীন আফ্রিকার স্বপ্ন। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকার ইতিহাসবিষয়ক অধ্যাপক টিমোথি পারসনস বলেন, 'বার্মায়ও শিকড় রয়েছে ওবামার। তাঁর জীবনের এক বিস্ময়কর ছেদবিন্দু এটি, যা যুক্তরাষ্ট্র, পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ত্রিভুজের তিনটি কোনের মতো জুড়ে দিয়েছে।' মিয়ানমারের ইতিহাসবিদ ও লেখক থান্ত মিন্ত-উ বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো নেতার পক্ষেই ওবামার মতো করে মিয়ানমারকে অনুভব করা সম্ভব নয়। 'অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ১৯৪০-এর দশকে ওবামার দাদা যে মিয়ানমারকে রেখে গেছেন প্রেসিডেন্টও প্রায় অবিকল একই মিয়ানমারকে দেখবেন। গত ছয় দশকে সশস্ত্র সংঘাত, স্বৈরশাসন, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা এবং সর্বোপরি ২০ বছর ধরে চলা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা_সব মিলিয়ে দেশ হিসেবে খুব একটা এগোয়নি মিয়ানমার।'ওবামার আত্মানুসন্ধানমূলক গ্রন্থ 'ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার'-এ নিজ জীবনে দাদার প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। যদিও দাদা-নাতির কখনো দেখা হয়নি।
ধারণা করা হয়, ওনিয়াঙ্গো ওবামার জন্ম লুয়ো গোত্রে ১৮৯৫ সালে। কেনিয়ায় উপনিবেশ স্থাপনকারী শ্বেতাঙ্গদের পরিচারক হিসেবে বহু বছর কাজ করেছেন তিনি। প্রবল ইচ্ছাশক্তির কঠোর-অনমনীয় ব্যক্তিত্ব ছিল তাঁর। পাঁচটি বিয়ে করেছিলেন। তানজানিয়ার এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হুসেইন নামটি নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তৎকালীন বার্মায় যান তিনি। সে সময় নানা কাজে অন্তত ৭৫ হাজার কেনীয় মিয়ানমারে অবস্থান করছিল। যুদ্ধসূত্রে নানা দেশের মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান ওবামার দাদাসহ অন্য কেনীয়দের মানসিক গঠনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকার রাজনীতিবিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড এম অ্যান্ডারসন জানান, জাপানি সেনাদের বিরুদ্ধে ওই লড়াই সম্ভবত পরবর্তী সময়ে ওনিয়াঙ্গো ও তাঁর সহযোগীদের আফ্রিকার স্বাধীনতা লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে। জানা যায়, পরবর্তী সময়ে আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে মাও মাও বিদ্রোহীদের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। জেল-জুলুমেরও শিকার হন।
মিয়ানমারে একটি বিয়েও করেন ওনিয়াঙ্গো। সব মিলিয়ে ওবামার দাদার জীবনে মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা গভীর ছাপ রাখে। তবে মিয়ানমার তাঁর জীবনে যে পরিবর্তনই আনুক, তাঁর কল্পনায়ও সম্ভবত এমন কথা আনতে পারেননি যে সাত দশক পর তাঁর নাতির পা পড়বে ওই দেশে। এয়ারফোর্স ওয়ানের নীল-সাদা বিমান নামবে মিয়ানমারে। আর এর ভেতর থেকেই বের হয়ে আসবে তাঁর নাতি, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
No comments