নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-নিশ্চিত করা হোক শিক্ষার মান ও পরিবেশ
দেশের সার্বিক শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ কিংবা সাধারণ মানুষ- কেউই সন্তুষ্ট নন। শিক্ষা এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা বাণিজ্য একটি লাভজনক ব্যবসা। শিক্ষাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারের পাশাপাশি শিশুদের ভর্তি নিয়েও কোচিং বাণিজ্য রমরমা।
এই শিক্ষা বাণিজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রবণতাও লক্ষণীয়। লক্ষণীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়টিও। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা একেবারে কম নয়। কিন্তু এগুলো শিক্ষার মান কতটুকু নিশ্চিত করতে পারছে? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি শিক্ষার পরিবেশ ও মান নিশ্চিত করা গেছে? নাকি এগুলোর বেশির ভাগই কার্যত সনদ বিক্রির দোকানে পরিণত হয়েছে?জনসংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। গত কয়েক বছরে দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাসের হার বেড়েছে। বেড়েছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী মেডিক্যাল-ইঞ্জিনিয়ারিংসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ব্যর্থতার চেয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাবদ্ধতাকেই বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। উচ্চশিক্ষা লাভের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন সীমিত হওয়ায় অনেকে সামান্য ব্যবধানের কারণে সেখানে ভর্তি হতে পারে না। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পাস উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে ভর্তি হতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাওয়া যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু ১৯৯২ সালে। গত দুই দশকে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩তে। এ বছর নতুন ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছে। এই ক্রমবর্ধমান সংখ্যাই বলে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটি লাভজনক ব্যবসা। লাভের দিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে শিক্ষার দিকে কতটা দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যেমন নিজস্ব পর্যবেক্ষণ রয়েছে, তেমনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিকপক্ষের সংগঠনেরও রয়েছে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ। এসব পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এক নয়। পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও পাঠদানের উপযোগী নয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালাতে গিয়ে বাণিজ্যটাই প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে; উপেক্ষিত হচ্ছে শিক্ষা। ফলে উচ্চমূল্য দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের এক অর্থে প্রতারিতই হতে হচ্ছে।
দেশেরও উচ্চশিক্ষার মান উন্নত বিশ্বের কাছে আশানুরূপ গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা দুই দশকের হলেও দীর্ঘদিন এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোনো নীতিমালা ছিল না। একটি নীতিমালা তৈরি হলেও সেটা সবাই মেনে চলছে না। এসব দেখার সময় এসেছে। শিক্ষার মান নিশ্চিত করার স্বার্থে, দেশের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের স্বার্থে অনিয়ম দূর করতে হবে। আমরা চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সনদ বিক্রির দোকান না বানিয়ে সত্যিকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
No comments