রোহিঙ্গা প্রশ্নে ওবামা-বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সোমবারের মিয়ানমার সফরটি ছিল বাংলাদেশের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশ অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছে প্রেসিডেন্ট ওবামা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কী ভূমিকা রাখেন সেদিকে।
বেশ কিছুকাল ধরেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিগত যে সহিংসতা চলে আসছে, তা 'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে'র মতো বাংলাদেশের সমস্যা হয়ে চেপে বসে আছে। ফলে ওবামার এ সফর বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈকি। স্বস্তির বিষয়, প্রেসিডেন্ট ওবামা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। তিনি মিয়ানমারের (বার্মা) সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে ভাষণ দিতে গিয়ে সেখানকার মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাখাইন বৌদ্ধদের চলমান সহিংসতা ও উত্তেজনা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, 'দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন জাতিসত্তাসহ এ রাজ্যের সব মানুষই দুঃখ-দারিদ্র্যের কশাঘাত মোকাবিলা করে আসছে। তাই বলে নিরীহ জনগণের ওপর চালানো সহিংসতার পেছনে কোনো অজুহাত চলে না। তা ছাড়া আমি-আপনি যে মর্যাদার অধিকারী, রোহিঙ্গারাও সেই একই মর্যাদার অধিকারী।' অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এ মনোভাবের কথা আগেই জেনেছিল মিয়ানমার সরকার। গত শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে দেওয়া এক চিঠিতে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ অন্যান্য অধিকার দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে মিয়ানমার সরকার। উল্লেখ্য, গত জুন মাসে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন রাখাইন প্রদেশে মুসলমান রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা দেখা দেয়। সে সহিংসতায় প্রায় ২০০ মানুষ প্রাণ হারায়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জোরের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের আর আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন, রাখাইন প্রদেশে দীর্ঘকালের এ সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের মধ্যে শরণার্থী স্ট্যাটাস পেয়েছে, অর্থাৎ জাতিসংঘের স্বীকৃত রোহিঙ্গা শরণার্থী মাত্র ২৮ হাজার।বারাক ওবামার ঘোষণা, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের জাতিসংঘে প্রদত্ত আশ্বাস- সবই ইতিবাচক; কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক মহলের আত্মতুষ্টি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারকে দ্রুত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে আনতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি মিয়ানমারের ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি দলের নেতা অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের, তারা মিয়ানমারের নয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এ মানসিকতা থেকে মিয়ানমারের জনগণকে বের করে আনতে সে দেশের নেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতারা এমন কথা বললে সেখানে সরকার যে পদক্ষেপই নিক, সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না এবং রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা বজায় থাকলে তার রেশ বাংলাদেশকে টানতেই হবে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মহলের পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গেও নিবিড় কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
No comments