সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ-দুই নেত্রীর দেখা হচ্ছে
আজ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এ উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার পরস্পর দেখা হচ্ছে। তিন বছর পর বিএনপির চেয়ারপারসন এবার অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দুই নেত্রীকে কাছাকাছি দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা সেদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ তাঁকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর ২০১০ ও ২০১১ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতার কয়েকজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরণীয় দিন ২১ নভেম্বর। প্রতিবছরের মতো এবারও সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। আমি অবশ্যই যাব।' বিএনপির চেয়ারপারসন অনুষ্ঠানে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গত বছর তিনি যাননি। আশা করি এবারের অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন।'
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, 'গত বছর চেয়ারপারসনকে একা দাওয়াত করা হয়েছিল। এবার চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য, বিএনপির নেতা সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ অনেককেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আমি যাব। খালেদা জিয়াসহ দলের অন্য আমন্ত্রিতরাও আশা করি যাবেন।'
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যোগ দেবেন।
বিএনপির যাঁরা দাওয়াত পেয়েছেন : খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির যাঁরা দাওয়াত পেয়েছেন তাঁরা হলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী মাহবুব আল-আমিন ডিউ, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, একান্ত সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ সুরাতুজ্জামান প্রমুখ। এ ছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদও দাওয়াত পেয়েছেন।
দিবসের কর্মসূচি : যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে আজ। দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানঘাঁটির মসজিদগুলোতে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতে দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রগতি কামনার মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াও এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তিন বাহিনীর প্রধানরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিতসংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন।
ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক বৈকালিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনাররা, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ঢাকা এলাকার সংসদ সদস্যরা এবং তিন বাহিনীর সাবেক প্রধানরা, ২০১২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নির্বাচিত রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, স্বাধীনতাযুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীরা, স্বাধীনতাযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/তাঁদের উত্তরাধিকারীরা, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তারা এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
দিবসটি উপলক্ষে তিন বাহিনীর প্রধানরা নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাঁদের উত্তরাধিকারীদের অনুরূপ সংবর্ধনা দেবেন।
ঢাকা ছাড়াও সাভার, বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা ও রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।
এ ছাড়া দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ-জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা (সদরঘাট), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনীর জাহাজগুলো আজ দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সেনানিবাসে যান চলাচল সীমিত থাকবে : সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তাগুলোতে (শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে স্টাফ রোড পর্যন্ত) যানবাহন চলাচল সীমিত থাকবে। আমন্ত্রিত অতিথিদের বহনকারী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০ এবং দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেনানিবাস এলাকা দিয়ে চলাচল পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
No comments