পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়? -সাক্ষাৎকারে এম সাখাওয়াত হোসেন by মরিয়ম চম্পা
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন
বলেছেন, এমন নির্বাচন হোক যেখানে হয়রানি-ভয়ভীতি থাকবে না। ২০০৮-এর মতো
মানুষ ভোট দিতে পারবে। কারণ এর পরে আর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সাউথ এশিয়ান
ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি)-এর অনারারি ফেলো
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। দেশের রাজনীতি, সংলাপ, সামাজিক সংকটসহ নানা ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এত বছরের একটি রাজনৈতিক সংকট দুটি সেটিং বা সংলাপে সমাধান হবে- এটা আশা করা যায় না। এটা আশা করা অনেক বেশি হয়ে যাবে। তবুও বলা যায় যে, দেরিতে হলেও সরকারের তরফ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি যারা অংশ নিয়েছে উভয়কেই স্বাগত জানানো উচিত।
কিন্তু তারপরও বেসিক কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনটা কতটুকু ফেয়ার হবে এবং ভোটাররা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে। প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে এই কারণে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে সংসদ রেখে এবং ৩৫০ জন এমপি স্বপদে থেকে নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপিরা তৃণমূলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। গত দশ বছরে পালাক্রমে একধরনের প্রভাব বলয় তারা সৃষ্টি করেছে। সেখানে এমপিরা অকার্যকর থাকবেন এটা ঠিক কথা নয়। সর্বোপরি আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পর্যায় পর্যন্ত তাদের প্রভাবটা থেকে যাবে।
সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয় এবং একইসঙ্গে ভোটারদের কাছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় ও জেনারেল পারসেপশন যদি ভালো হয় তাহলেই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচন ভালো হয় নি বলে পরবর্তী কোনো নির্বাচনই ভালো হয় নি। সব নির্বাচনে একই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট সব ঘটনাই ঘটেছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে অতটা কার্যকর দেখা যায় নি। কাজেই আসন্ন নির্বাচনটা ভালো হলে বাকি নির্বাচনও ভালো হবে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকটি নির্বাচন কমিশন আস্থার সংকটে থেকে কাজ করেছে। কিছু কিছু নির্বাচন কমিশন সে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেক কমিশনই আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে নি। যারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পেরেছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ভালো হয় নি বলে ওটার কনটিনিউটি বজায় রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের যে সব প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক ধারা ও জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখার কথা সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখান থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে সমস্যা রয়েই যাবে।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত যেকোনো নির্বাচনে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ সিকিউরিটি অব ম্যান অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস। যেহেতু ১ দিনে ৩শ’ আসনে নির্বাচনটা করা হয় এবং প্রতিবছর ভোটার এবং ভোটিং সেন্টার সব মিলিয়ে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে পাহারা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ ফোর্স দরকার সেই ফোর্স কিন্তু কখনোই পাওয়া যায় না। তখন ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার হিসেবে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। সরকারের আওতায় যেহেতু আর কোনো রিজার্ভ ফোর্স নেই তাই এই সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনীকে দিয়ে একদিনের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় কারণ পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকার কথা থাকলেও প্রতিনিয়ত তারা বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। কাজেই সেখানে সামরিক বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে। তাদের কেউ খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেসি অর্ডারের বাইরে তাদের কোনো কার্যকারিতাও থাকে না।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এর জন্য দায়ী আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেম ও কালচার। পলিটিক্যাল সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য যে পদ্ধতি এখন পুরো দুনিয়াতে আছে সেগুলোতে আমরা এখনো যাই নি। আমরা সঠিক লোক নির্বাচন করে সঠিক জায়গায় দেই নি। এর কারণ হচ্ছে আমি যাকে দেবো তাকে বা সেই প্রতিষ্ঠানকে আমার মতো চলতে হবে। অন্যথায় তাকে বিতাড়ন, বা চরিত্র হনন করা হবে। এটা যদি হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠান মানে এই নয় দালানকোঠা ও বাড়ি-গাড়ি বানালাম, পতাকা দিলাম। এগুলো হচ্ছে অবকাঠামো। আমি অবকাঠামো বানালাম কিন্তু গায়ে রক্ত দিলাম না। ভাবার জন্য ব্রেইন দিলাম না। শোনার জন্য, দেখার জন্য, কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় সব যদি না থাকে তাহলে সুন্দর অবকাঠামো দিয়ে কি হবে? আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুন্দর অফিস আছে কিন্তু গায়ে রক্ত নেই, চিন্তা করার ব্রেইন নেই।
বিরোধী রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্টের আবির্ভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ছোট ছোট দলগুলো বড় দলের সঙ্গে ভিড়ে যায়। সে হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে বলা যায় যে, এক্ষেত্রে উভয় দিকেই লাভবান হয়েছে। বিএনপির এই মুহূর্তে নেতৃত্ব নেই। সেখানে ড. কামাল হোসেনের মতো ইন্টারন্যাশনাল ফিগারের নেতৃত্ব পাওয়া অনেক বড় একটি বিষয়। তিনিও বহু আগে থেকেই রাজনীতি করতেন। এদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে তিনি জড়িত। সবচেয়ে বড় কথা তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর। তাকে নেতা হিসেবে সামনে রাখা এবং তার সঙ্গে একাত্মতা স্বীকার করা, সেদিক থেকে মনে করি ঐক্যফ্রন্টের একটি প্লাস পয়েন্ট আছে। সম্প্রতি তাদের সংলাপের কারণে রাজনীতিতে যে একটি গুমোট হাওয়া ছিল সেখানে নাড়া পড়েছে। আমরা আশাবাদী যে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে এই সংলাপটি যদি সফল করতে পারেন সেটা হবে খুবই ভালো একটি উদ্যোগ।
সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, সিভিল সোসাইটি বলতে আমরা স্বল্প পরিসরে বুঝি ১০ জন লোক টকশোতে কথা বললো তারাই সিভিল সোসাইটি। এমনটা নয়। এটা আইনজীবী থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই যাদের কথাবার্তা ও চিন্তাধারা সমাজকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। সমাজের মানুষের ভালোর জন্য, গণতন্ত্রের ভালোর জন্য সরকার বা তার প্রতিষ্ঠানকে চাপ প্রয়োগ করবে- সেটাই সিভিল সোসাইটি। বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি গড়ে ওঠেনি কখনো। এটা শুনতে যদিও খারাপ শোনা যাবে। বাংলাদেশে যেটা গড়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে মোরাললেস চাটুকার সোসাইটি। এবং তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। আজকে কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কাজেই হয়রানির মধ্যে থেকে সিভিল সোসাইটির মুভমেন্ট হয় না। বাকিরা তো চাটুকার টাইপের। তাদের ভাব অনেকটা এমন যে, আপনি সরদার আর আমি ঝাড়ুদার। ঝাড়ু দিয়ে সব পরিষ্কার করে দেবো। তারা খুব অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দোষারোপ করা যেতে পারে ১৯৭২ থেকে ’৯১-এর পরিস্থিতিকে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও সিভিল সোসাইটির বিষয় ততোটা গুরুত্ব পায় নি। সিভিল সোসাইটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কারণ হালুয়া-রুটি তাদের সামনে চলে এসেছে। সহজভাবে যদি বলি বাংলাদেশে কোনো সিভিল সোসাইটি দেখি না। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ঐতিহাসিকভাবে সিভিল সোসাইটির কারণে অনেক বিপ্লব এসেছে।
অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমত হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তারপর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যে কাজ করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু সরকার এবং সরকারের ইনস্টিটিউশন ও সিভিল সোসাইটির। সেটা যদি না হয় তাহলে গত ৫ বছরের মারামারি-হানাহানি, গুম-খুন ৪০ দিনে ঠিক করা যাবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হচ্ছে অথচ সেটা আগেই তো ছিল না। এই ৪০ দিনে কি করে হবে? পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, টাকার মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। যার টাকা আছে সেই নির্বাচন করে। অথচ দেখা যাবে রাজনীতি বিষয়টা কি সেটাই অনেকে জানে না।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এত বছরের একটি রাজনৈতিক সংকট দুটি সেটিং বা সংলাপে সমাধান হবে- এটা আশা করা যায় না। এটা আশা করা অনেক বেশি হয়ে যাবে। তবুও বলা যায় যে, দেরিতে হলেও সরকারের তরফ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি যারা অংশ নিয়েছে উভয়কেই স্বাগত জানানো উচিত।
কিন্তু তারপরও বেসিক কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনটা কতটুকু ফেয়ার হবে এবং ভোটাররা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে। প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে এই কারণে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে সংসদ রেখে এবং ৩৫০ জন এমপি স্বপদে থেকে নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপিরা তৃণমূলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। গত দশ বছরে পালাক্রমে একধরনের প্রভাব বলয় তারা সৃষ্টি করেছে। সেখানে এমপিরা অকার্যকর থাকবেন এটা ঠিক কথা নয়। সর্বোপরি আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পর্যায় পর্যন্ত তাদের প্রভাবটা থেকে যাবে।
সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয় এবং একইসঙ্গে ভোটারদের কাছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় ও জেনারেল পারসেপশন যদি ভালো হয় তাহলেই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচন ভালো হয় নি বলে পরবর্তী কোনো নির্বাচনই ভালো হয় নি। সব নির্বাচনে একই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট সব ঘটনাই ঘটেছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে অতটা কার্যকর দেখা যায় নি। কাজেই আসন্ন নির্বাচনটা ভালো হলে বাকি নির্বাচনও ভালো হবে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকটি নির্বাচন কমিশন আস্থার সংকটে থেকে কাজ করেছে। কিছু কিছু নির্বাচন কমিশন সে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেক কমিশনই আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে নি। যারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পেরেছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ভালো হয় নি বলে ওটার কনটিনিউটি বজায় রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের যে সব প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক ধারা ও জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখার কথা সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখান থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে সমস্যা রয়েই যাবে।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত যেকোনো নির্বাচনে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ সিকিউরিটি অব ম্যান অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস। যেহেতু ১ দিনে ৩শ’ আসনে নির্বাচনটা করা হয় এবং প্রতিবছর ভোটার এবং ভোটিং সেন্টার সব মিলিয়ে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে পাহারা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ ফোর্স দরকার সেই ফোর্স কিন্তু কখনোই পাওয়া যায় না। তখন ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার হিসেবে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। সরকারের আওতায় যেহেতু আর কোনো রিজার্ভ ফোর্স নেই তাই এই সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনীকে দিয়ে একদিনের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় কারণ পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকার কথা থাকলেও প্রতিনিয়ত তারা বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। কাজেই সেখানে সামরিক বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে। তাদের কেউ খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেসি অর্ডারের বাইরে তাদের কোনো কার্যকারিতাও থাকে না।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এর জন্য দায়ী আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেম ও কালচার। পলিটিক্যাল সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য যে পদ্ধতি এখন পুরো দুনিয়াতে আছে সেগুলোতে আমরা এখনো যাই নি। আমরা সঠিক লোক নির্বাচন করে সঠিক জায়গায় দেই নি। এর কারণ হচ্ছে আমি যাকে দেবো তাকে বা সেই প্রতিষ্ঠানকে আমার মতো চলতে হবে। অন্যথায় তাকে বিতাড়ন, বা চরিত্র হনন করা হবে। এটা যদি হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠান মানে এই নয় দালানকোঠা ও বাড়ি-গাড়ি বানালাম, পতাকা দিলাম। এগুলো হচ্ছে অবকাঠামো। আমি অবকাঠামো বানালাম কিন্তু গায়ে রক্ত দিলাম না। ভাবার জন্য ব্রেইন দিলাম না। শোনার জন্য, দেখার জন্য, কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় সব যদি না থাকে তাহলে সুন্দর অবকাঠামো দিয়ে কি হবে? আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুন্দর অফিস আছে কিন্তু গায়ে রক্ত নেই, চিন্তা করার ব্রেইন নেই।
বিরোধী রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্টের আবির্ভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ছোট ছোট দলগুলো বড় দলের সঙ্গে ভিড়ে যায়। সে হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে বলা যায় যে, এক্ষেত্রে উভয় দিকেই লাভবান হয়েছে। বিএনপির এই মুহূর্তে নেতৃত্ব নেই। সেখানে ড. কামাল হোসেনের মতো ইন্টারন্যাশনাল ফিগারের নেতৃত্ব পাওয়া অনেক বড় একটি বিষয়। তিনিও বহু আগে থেকেই রাজনীতি করতেন। এদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে তিনি জড়িত। সবচেয়ে বড় কথা তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর। তাকে নেতা হিসেবে সামনে রাখা এবং তার সঙ্গে একাত্মতা স্বীকার করা, সেদিক থেকে মনে করি ঐক্যফ্রন্টের একটি প্লাস পয়েন্ট আছে। সম্প্রতি তাদের সংলাপের কারণে রাজনীতিতে যে একটি গুমোট হাওয়া ছিল সেখানে নাড়া পড়েছে। আমরা আশাবাদী যে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে এই সংলাপটি যদি সফল করতে পারেন সেটা হবে খুবই ভালো একটি উদ্যোগ।
সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, সিভিল সোসাইটি বলতে আমরা স্বল্প পরিসরে বুঝি ১০ জন লোক টকশোতে কথা বললো তারাই সিভিল সোসাইটি। এমনটা নয়। এটা আইনজীবী থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই যাদের কথাবার্তা ও চিন্তাধারা সমাজকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। সমাজের মানুষের ভালোর জন্য, গণতন্ত্রের ভালোর জন্য সরকার বা তার প্রতিষ্ঠানকে চাপ প্রয়োগ করবে- সেটাই সিভিল সোসাইটি। বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি গড়ে ওঠেনি কখনো। এটা শুনতে যদিও খারাপ শোনা যাবে। বাংলাদেশে যেটা গড়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে মোরাললেস চাটুকার সোসাইটি। এবং তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। আজকে কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কাজেই হয়রানির মধ্যে থেকে সিভিল সোসাইটির মুভমেন্ট হয় না। বাকিরা তো চাটুকার টাইপের। তাদের ভাব অনেকটা এমন যে, আপনি সরদার আর আমি ঝাড়ুদার। ঝাড়ু দিয়ে সব পরিষ্কার করে দেবো। তারা খুব অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দোষারোপ করা যেতে পারে ১৯৭২ থেকে ’৯১-এর পরিস্থিতিকে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও সিভিল সোসাইটির বিষয় ততোটা গুরুত্ব পায় নি। সিভিল সোসাইটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কারণ হালুয়া-রুটি তাদের সামনে চলে এসেছে। সহজভাবে যদি বলি বাংলাদেশে কোনো সিভিল সোসাইটি দেখি না। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ঐতিহাসিকভাবে সিভিল সোসাইটির কারণে অনেক বিপ্লব এসেছে।
অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমত হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তারপর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যে কাজ করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু সরকার এবং সরকারের ইনস্টিটিউশন ও সিভিল সোসাইটির। সেটা যদি না হয় তাহলে গত ৫ বছরের মারামারি-হানাহানি, গুম-খুন ৪০ দিনে ঠিক করা যাবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হচ্ছে অথচ সেটা আগেই তো ছিল না। এই ৪০ দিনে কি করে হবে? পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, টাকার মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। যার টাকা আছে সেই নির্বাচন করে। অথচ দেখা যাবে রাজনীতি বিষয়টা কি সেটাই অনেকে জানে না।
No comments