চারদিক-ফেসবুকে রবীন্দ্রনাথ by আশরাফুল হক
‘এই প্রজন্ম কি রবীন্দ্রনাথ পড়ে?’ ‘অনুভূতি স্পন্দিত বুকে এই প্রজন্মের কেউ কি লাবণ্য বা অমিতকে খুঁজে ফেরে?’ এ জাতীয় প্রশ্ন কবে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল বলা মুশকিল। তবে এসব প্রশ্ন এখনো যে মাঝেমধ্যেই উচ্চারিত হয় তা বলা যায়।
এসব প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে আমরা বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াই, যার একটি বড় অংশ এই প্রজন্মের দখলে।
গত এক বছর বাঙালি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাস, প্রিয় উক্তি ও মন্তব্য লক্ষ করছি। ব্যবহাকারীরা বেশির ভাগ সময় নিজেদের আবেগ অনুভূতি, বক্তব্য ও মতামত নিজের ভাষায়ই প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু তার পরের স্থানটি রবীন্দ্রনাথের।
ফেসবুকে বিখ্যাত প্রায় সব লোকের একটি বা দুটি ফ্যান ক্লাব আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আছে পাঁচ-ছয়টি। এসব ফ্যান ক্লাবের ওয়াল অন্যান্য ফ্যান ক্লাবগুলোর চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। এসবে ফ্যানরা প্রায় প্রতিদিন রবীন্দ্রনাথের কথা বলেন, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কথা বলেন এবং তাঁর বিভিন্ন গানের লিংক পোস্ট করেন।
২২ শ্রাবণ ১৪১৬ দিয়ে শুরু করা যাক। ওই দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণ রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিসহ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘এমন দিনে তাঁকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া যায়, কিন্তু কী দেব?’ সঙ্গে সঙ্গে এক তরুণীর কমেন্ট, ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা।’ তারপর একেক করে বেশ কয়েকজন লিখলেন, ‘নয়নসমুখে তুমি নাই,’ ও ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’ প্রভৃতি। একজন সত্যজিৎ রায় নির্মিত তথ্যচিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে লিখলেন: ‘৭ আগস্ট ১৯৪১, কলকাতা শহরে একজন মানুষ মারা গেলেন। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর দেহের নিরাকরণ ঘটলেও তিনি পেছনে রেখে গেলেন এক ঐতিহ্য, সেটাকে কোনো আগুনই গ্রাস করতে পারেনি। এই ঐতিহ্য হলো শব্দ, সংগীত ও কবিতার ঐতিহ্য; চিন্তা ও আদর্শের ঐতিহ্য। এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে আমাদের সঞ্চালিত ও অনুপ্রাণিত করার জন্য এর রয়েছে অসীম ক্ষমতা। আমরা যারা তাঁর প্রতি এতটাই ঋণগ্রস্ত, তাদের অবশ্যই তাঁর স্মৃতির প্রতি অভিবাদন জানাতে হবে।’ (ইংরেজি ভাষ্যের বঙ্গানুবাদ)।
বর্ষার শুরুতে একজন স্ট্যাটাস দিলেন, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’ কেউ করেনি দান। এতে অনেকেই কমেন্ট করলেন। তবে একজনের কমেন্ট ছিল বেশ মজার। সেটা ছিল এ রকম, বর্ষার কত সুন্দর সুন্দর ফুল (কেয়া, কেতকী, কামিনী, বেলি, বকুল, হাসনাহেনা সুগন্ধযুক্ত সাদা প্রায় সব ফুলই বর্ষার ফুল) আছে। তবু বাঙালি কেবল কদম চায়। রবীন্দ্রনাথ যে কী জাদু করল!
রবীন্দ্রনাথের ঋতুভিত্তিক ও প্রেমের গান স্ট্যাটাসে বেশ দেখা যায়, বিশেষ করে বর্ষা আর বসন্তে। বৃষ্টি নামলে স্ট্যাটাসে বর্ষায় গানের ধুম পড়ে যায়। তেমনই একদিনে একজন লিখলেন, ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর-দিনে’ মন কত্তো কী যে...।
মন্তব্য: কথা শেষ কর।
জবাব: অর্ধেক বলাটাকে নিরাপদ মনে করলাম। ‘আমি মূর্খ কহিতে জানি না কথা, কী কথা বলিয়া ফেলি।’
বসন্তের শুরুতে একজন লিখলেন: ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে...’। কমেন্ট: এ শহরে ফুল ফুটে না, পাখি গায় না। তবু এই গানে মন দোলে কী করে? জবাব: দোলে দোলে। হূদয়ের তাগিদে কিংবা অভ্যাসবসত।
বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এতে খেলেছে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল। আর ঢাকায় বসে একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন: হারাই হারাই সদা হয় ভয়। কীসের ভয় ভাই? আরে ভাই আমি যে দল সাপোর্ট করি, সেই দলই হারে। না জানি কখন ব্রাজিল ছিটকে পড়ে।
আবার কিছু মজার স্ট্যাটাস ও কমেন্ট আছে। যেমন, এক সন্ধ্যায় একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন: সারা দিন অনেক কাজ করলাম। অনেক ক্লান্তবোধ করছি। ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু।’ আচ্ছা, এখানে রবিঠাকুর কী বুঝিয়েছেন? ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষমা চাইতে হবে কেন? ক্লান্ত হওয়া কি দোষের কিছু? দুঃখিত, প্রশ্নটা বোধ হয় বোকা বোকা হয়েছে। কিন্তু আসলেই কথাটার মানে কী? মন্তব্য: এক: তিনি এমন কথা বলতেই পছন্দ করতেন। যেমন, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে।’ ঘরের চাবি ভাঙলে আর নিবে কীভাবে?
মন্তব্য দুই: আসলে কবি মানুষ, হয়তো উরাদুরা টাইপ ছিলেন। এত বড় কবি বেশি কিছু বললে আবার...
আরেকটা স্ট্যাটাস: ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে—।’
মন্তব্য: ক্যান? বসে থাকলে ক্ষতি কী?
ফেসবুকে আপলোড করা ছবিতেও কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কমেন্ট করেন। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ছবির একটি অ্যালবামের একটি কমেন্ট এ রকম: ‘পৃথিবীর দিকে আবার ভালো করে চেয়ে দেখতে ইচ্ছে করে; ইচ্ছে করে, জীবনের প্রত্যেক সূর্যোদয়কে সজ্ঞানভাবে অভিবাদন করি এবং প্রত্যেক সূর্যাস্তকে পরিচিত বন্ধুর মতো বিদায় দিই।’
এভাবে ফেসবুক ঘুরে ঘুরে আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে এবং একই সঙ্গে শুরুর প্রশ্নগুলোর জবাবও আমাদের কাছে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হবে।
গত এক বছর বাঙালি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাস, প্রিয় উক্তি ও মন্তব্য লক্ষ করছি। ব্যবহাকারীরা বেশির ভাগ সময় নিজেদের আবেগ অনুভূতি, বক্তব্য ও মতামত নিজের ভাষায়ই প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু তার পরের স্থানটি রবীন্দ্রনাথের।
ফেসবুকে বিখ্যাত প্রায় সব লোকের একটি বা দুটি ফ্যান ক্লাব আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আছে পাঁচ-ছয়টি। এসব ফ্যান ক্লাবের ওয়াল অন্যান্য ফ্যান ক্লাবগুলোর চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। এসবে ফ্যানরা প্রায় প্রতিদিন রবীন্দ্রনাথের কথা বলেন, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কথা বলেন এবং তাঁর বিভিন্ন গানের লিংক পোস্ট করেন।
২২ শ্রাবণ ১৪১৬ দিয়ে শুরু করা যাক। ওই দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণ রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিসহ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘এমন দিনে তাঁকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া যায়, কিন্তু কী দেব?’ সঙ্গে সঙ্গে এক তরুণীর কমেন্ট, ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা।’ তারপর একেক করে বেশ কয়েকজন লিখলেন, ‘নয়নসমুখে তুমি নাই,’ ও ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’ প্রভৃতি। একজন সত্যজিৎ রায় নির্মিত তথ্যচিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে লিখলেন: ‘৭ আগস্ট ১৯৪১, কলকাতা শহরে একজন মানুষ মারা গেলেন। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর দেহের নিরাকরণ ঘটলেও তিনি পেছনে রেখে গেলেন এক ঐতিহ্য, সেটাকে কোনো আগুনই গ্রাস করতে পারেনি। এই ঐতিহ্য হলো শব্দ, সংগীত ও কবিতার ঐতিহ্য; চিন্তা ও আদর্শের ঐতিহ্য। এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে আমাদের সঞ্চালিত ও অনুপ্রাণিত করার জন্য এর রয়েছে অসীম ক্ষমতা। আমরা যারা তাঁর প্রতি এতটাই ঋণগ্রস্ত, তাদের অবশ্যই তাঁর স্মৃতির প্রতি অভিবাদন জানাতে হবে।’ (ইংরেজি ভাষ্যের বঙ্গানুবাদ)।
বর্ষার শুরুতে একজন স্ট্যাটাস দিলেন, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’ কেউ করেনি দান। এতে অনেকেই কমেন্ট করলেন। তবে একজনের কমেন্ট ছিল বেশ মজার। সেটা ছিল এ রকম, বর্ষার কত সুন্দর সুন্দর ফুল (কেয়া, কেতকী, কামিনী, বেলি, বকুল, হাসনাহেনা সুগন্ধযুক্ত সাদা প্রায় সব ফুলই বর্ষার ফুল) আছে। তবু বাঙালি কেবল কদম চায়। রবীন্দ্রনাথ যে কী জাদু করল!
রবীন্দ্রনাথের ঋতুভিত্তিক ও প্রেমের গান স্ট্যাটাসে বেশ দেখা যায়, বিশেষ করে বর্ষা আর বসন্তে। বৃষ্টি নামলে স্ট্যাটাসে বর্ষায় গানের ধুম পড়ে যায়। তেমনই একদিনে একজন লিখলেন, ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর-দিনে’ মন কত্তো কী যে...।
মন্তব্য: কথা শেষ কর।
জবাব: অর্ধেক বলাটাকে নিরাপদ মনে করলাম। ‘আমি মূর্খ কহিতে জানি না কথা, কী কথা বলিয়া ফেলি।’
বসন্তের শুরুতে একজন লিখলেন: ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে...’। কমেন্ট: এ শহরে ফুল ফুটে না, পাখি গায় না। তবু এই গানে মন দোলে কী করে? জবাব: দোলে দোলে। হূদয়ের তাগিদে কিংবা অভ্যাসবসত।
বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এতে খেলেছে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল। আর ঢাকায় বসে একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন: হারাই হারাই সদা হয় ভয়। কীসের ভয় ভাই? আরে ভাই আমি যে দল সাপোর্ট করি, সেই দলই হারে। না জানি কখন ব্রাজিল ছিটকে পড়ে।
আবার কিছু মজার স্ট্যাটাস ও কমেন্ট আছে। যেমন, এক সন্ধ্যায় একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন: সারা দিন অনেক কাজ করলাম। অনেক ক্লান্তবোধ করছি। ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু।’ আচ্ছা, এখানে রবিঠাকুর কী বুঝিয়েছেন? ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষমা চাইতে হবে কেন? ক্লান্ত হওয়া কি দোষের কিছু? দুঃখিত, প্রশ্নটা বোধ হয় বোকা বোকা হয়েছে। কিন্তু আসলেই কথাটার মানে কী? মন্তব্য: এক: তিনি এমন কথা বলতেই পছন্দ করতেন। যেমন, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে।’ ঘরের চাবি ভাঙলে আর নিবে কীভাবে?
মন্তব্য দুই: আসলে কবি মানুষ, হয়তো উরাদুরা টাইপ ছিলেন। এত বড় কবি বেশি কিছু বললে আবার...
আরেকটা স্ট্যাটাস: ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে—।’
মন্তব্য: ক্যান? বসে থাকলে ক্ষতি কী?
ফেসবুকে আপলোড করা ছবিতেও কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কমেন্ট করেন। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ছবির একটি অ্যালবামের একটি কমেন্ট এ রকম: ‘পৃথিবীর দিকে আবার ভালো করে চেয়ে দেখতে ইচ্ছে করে; ইচ্ছে করে, জীবনের প্রত্যেক সূর্যোদয়কে সজ্ঞানভাবে অভিবাদন করি এবং প্রত্যেক সূর্যাস্তকে পরিচিত বন্ধুর মতো বিদায় দিই।’
এভাবে ফেসবুক ঘুরে ঘুরে আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে এবং একই সঙ্গে শুরুর প্রশ্নগুলোর জবাবও আমাদের কাছে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হবে।
No comments