অনিয়ন্ত্রিত ঢাকা অচল হওয়ার আগেই সজাগ হোন-ঢাকার জনজীবন

নগর মানেই গতি, আলো, বিদ্যুৎ আর সুলভ নাগরিক সুবিধা। অথচ ঢাকার সড়কে যানজট, দিন প্রায়ই বিদ্যুৎহীন, গরম, আর রাত অন্ধকার। বিদ্যুৎ না থাকায় ওয়াসা পানি দিতে পারে না। গ্যাসের জোগানও তেমনি। এ অবস্থায় নগর আছে বটে, কিন্তু নাগরিক সুবিধাগুলো দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে।


এ কারণেই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার গত সোমবার ঢাকার এক সভায় যথার্থই বলেছেন, ‘ঢাকা হয়ে উঠেছে অনিয়ন্ত্রিত নগর।’
একসময় ‘ঢাকায় থাকা’কে সৌভাগ্য মনে করা হতো। কিন্তু ঢাকাবাসীর অনেকের জন্যই ঢাকা এখন এক ভোগান্তির নগর। সড়কের ধারের বিলবোর্ড আর গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপনগুলো যতই আরাম-আয়েশের স্বপ্ন দেখাক, বাস্তবের ঢাকার জীবন দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে উঠছে। গত সোমবারের প্রথম আলোয় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পানিসংকট-বিষয়ক সংবাদে এক গৃহবধূর কথায় এরই সত্যতা—‘গত দুই সপ্তাহে একটুও পানি পাই না। এই যন্ত্রণা সহ্য হয় না।’
একটি দেশের রাজধানী সে দেশের প্রচ্ছদের মতো। রাজধানীর চেহারাই সে দেশের সরকার, শাসন, অর্থনীতি ও সমাজের কিছুটা প্রকাশ করে। এবং বলাবাহুল্য, শাসনকেন্দ্র হিসেবে রাজধানীর মধ্য দিয়েই দেশের শাসকদের সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। সেই অর্থে ঢাকার ‘অনিয়ন্ত্রিত’ অবস্থা এ দেশের শাসকদের অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপেরই ফল বলে ভাবা যায়। ডেপুটি স্পিকার গত সোমবার যে সভায় এই অভিমত দিয়েছেন, সেই একই সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আরেকটি সত্য কথা বলেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের শহর উন্নত শহরের মডেল হতে ব্যর্থ হয়েছে কেবল রাজনৈতিক কারণে। কোনো পরিকল্পনা এখানে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’ রাজনৈতিক কারণই সব কারণের মূল। কারণ, রাজনীতিবিদেরাই শেষপর্যন্ত দেশ চালান এবং জনগণেরও তাঁদের কাছেই প্রত্যাশা বেশি। কিন্তু এ কথাও তো সত্য, ঢাকার ‘অনিয়ন্ত্রিত’ কার্যক্রমের মধ্যে ব্যবসা ও শিল্পের প্রয়োজনে ভূমিদখল, জলাশয় ও নদী ভরাট এবং পরিবেশদূষণ অন্যতম। এই কাজে প্রায়ই রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধের চেয়ে ঐক্যটাই বেশি।
পানি পেতে হলে বিদ্যুৎ চাই, বিদ্যুৎ পেতে গ্যাস চাই। এর বাইরেও সবকিছুর জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে হবেই। সেটা যদি দ্রুত না করা যায়, তাহলে এখনকার ‘অনিয়ন্ত্রিত’ ঢাকা অচল হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঢাকার পরিবহনব্যবস্থা অনেকটাই ব্যক্তিমালিকানাধীন। পৃথিবীর কোনো চলনশীল নগরে কেবল বাস-কার-রিকশানির্ভর পরিবহন নেই। ট্রেন, মেট্রো, ট্রামই এখন পর্যন্ত গণপরিবহনের সুবিধা দিয়ে আসছে দেশে দেশে। তা না থাকায়, তাই অনেক ‘নাই’-এর সঙ্গে ঢাকার সড়কে গতিও নেই।
ঢাকাকে সচল রাখতে তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার আপসহীন বাস্তবায়ন চাই। চাই নাগরিক, সরকার, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংস্থাসহ প্রত্যেকের সম্মিলিত কাজ। দায় যেহেতু রাজনীতিবিদদেরই বেশি, তাই এর নেতৃত্বটাও তাঁদেরই দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.