মহাবিপদের পূর্বাভাস
কোনো জলোচ্ছ্বাস নয়, কোনো বিপদ সংকেতও ছিল না। নিত্যদিনের স্বাভাবিক জোয়ারেই হঠাৎ তলিয়ে গেছে উপকূলীয় জেলা ভোলার বিশাল অঞ্চল। ভেঙে গেছে উপকূল রক্ষা বাঁধের অংশবিশেষ। হাজার হাজার একর ফসলি জমি লোনা পানিতে ভেসে গেছে। কয়েক শ বাড়িঘরও পানিতে তলিয়ে গেছে।
যখন বড় বিপদ সংকেত থাকবে, সমুদ্র উত্তাল থাকবে, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানবে_তখন এ উপকূলবাসীর কী হবে? বালির বাঁধের মতো যখন উড়ে যাবে উপকূল রক্ষা বাঁধ, তখন কি সেখানে আর কোনো মানুষ বসবাস করতে পারবে?
এর আগে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আইলায় সাতক্ষীরা অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় ভেঙে যাওয়া সেখানকার উপকূল রক্ষা বাঁধটি এখনো মেরামত করা যায়নি। তারও আগে সিডর বিস্তীর্ণ উপকূলে আঘাত হেনেছিল এবং উপকূল রক্ষা বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই বাঁধ আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে মেরামত করা যায়নি। তার ওপর এ উপকূল রক্ষা বাঁধ করা হয়েছিল তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে, স্বাভাবিক জোয়ারের পানি আটকানোর জন্য। তখনকার পরিবেশে এ বাঁধের উচ্চতা ঠিক থাকলেও প্রায় পাঁচ দশক পর এর উচ্চতা জোয়ার ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেক বেড়েছে। ফলে বাঁধের উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ার ঠেকানোর জন্যও যে পর্যাপ্ত নয়, ভোলার ঘটনাই তার প্রমাণ। শুধু ভোলা কেন, বাগেরহাটের সর্ব-উত্তরের উপজেলা চিতলমারীতেও এখন হাজার হাজার একর জমি পতিত থাকে লোনা পানি অনুপ্রবেশের কারণে। অথচ এক দশক আগেও এসব মাঠ ভরে থাকত সোনালি ধানে। গোপালগঞ্জ সদরেরও কোনো কোনো এলাকায় জোয়ারের সময় লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটছে। ক্রমেই এ অনুপ্রবেশ বাড়তেই থাকবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি মানুষ আগামী এক-দেড় দশকের মধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে। আবাদযোগ্য জমির অনেকটাই হারিয়ে যাবে। এর ফলে দেশে খাদ্যসংকট ক্রমেই তীব্র হতে থাকবে।
অথচ কী ভয়ংকর বিপদ ধেয়ে আসছে_বেশির ভাগ মানুষই তা নিয়ে ভাবিত নয়। ভাবনার অভাব আছে রাষ্ট্রযন্ত্রেরও। উপকূলীয় এলাকার দুই কোটি মানুষ কোথায় যাবে? রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে এসে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করবে। তখন সেই শহরগুলোতে যে কী ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটবে, তা এখন কল্পনা করাও দুরূহ। অথচ সেই বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি না বললেই চলে। জলবায়ু পরিবর্তন বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কোনোটাকেই আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু আমাদের উপকূলীয় জনপদগুলো যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। আবাদি জমিগুলোকে লোনা পানির গ্রাস থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে পারি। লোনা পানিসহিষ্ণু চাষাবাদ উদ্ভাবনে আমাদের গবেষকদের আরো বেশি করে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের চিংড়ি চাষ এখনো মান্ধাতা আমলের। ফলে একরপ্রতি যে উৎপাদন, তা আশপাশের দেশগুলো থেকেও অনেক কম। সেখানে আমরা নিবিড় চিংড়ি চাষের ব্যবস্থা করতে পারি। বড় জলোচ্ছ্বাসের সময় মানুষ যাতে জীবন, গবাদিপশু, সহায়-সম্পদ রক্ষা করতে পারে; তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু সেসবের প্রায় কিছুই হচ্ছে না।
যে মানুষ বা যে জাতি একটু দূরবর্তী চিন্তা করতে পারে, ভবিষ্যৎকে ভাবনায় নিয়ে উন্নয়ন করতে পারে_তারাই টিকে থাকতে পারে। জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে ২৫ বছর পরের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আইলায় সাতক্ষীরা অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় ভেঙে যাওয়া সেখানকার উপকূল রক্ষা বাঁধটি এখনো মেরামত করা যায়নি। তারও আগে সিডর বিস্তীর্ণ উপকূলে আঘাত হেনেছিল এবং উপকূল রক্ষা বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই বাঁধ আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে মেরামত করা যায়নি। তার ওপর এ উপকূল রক্ষা বাঁধ করা হয়েছিল তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে, স্বাভাবিক জোয়ারের পানি আটকানোর জন্য। তখনকার পরিবেশে এ বাঁধের উচ্চতা ঠিক থাকলেও প্রায় পাঁচ দশক পর এর উচ্চতা জোয়ার ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেক বেড়েছে। ফলে বাঁধের উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ার ঠেকানোর জন্যও যে পর্যাপ্ত নয়, ভোলার ঘটনাই তার প্রমাণ। শুধু ভোলা কেন, বাগেরহাটের সর্ব-উত্তরের উপজেলা চিতলমারীতেও এখন হাজার হাজার একর জমি পতিত থাকে লোনা পানি অনুপ্রবেশের কারণে। অথচ এক দশক আগেও এসব মাঠ ভরে থাকত সোনালি ধানে। গোপালগঞ্জ সদরেরও কোনো কোনো এলাকায় জোয়ারের সময় লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটছে। ক্রমেই এ অনুপ্রবেশ বাড়তেই থাকবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি মানুষ আগামী এক-দেড় দশকের মধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে। আবাদযোগ্য জমির অনেকটাই হারিয়ে যাবে। এর ফলে দেশে খাদ্যসংকট ক্রমেই তীব্র হতে থাকবে।
অথচ কী ভয়ংকর বিপদ ধেয়ে আসছে_বেশির ভাগ মানুষই তা নিয়ে ভাবিত নয়। ভাবনার অভাব আছে রাষ্ট্রযন্ত্রেরও। উপকূলীয় এলাকার দুই কোটি মানুষ কোথায় যাবে? রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে এসে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করবে। তখন সেই শহরগুলোতে যে কী ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটবে, তা এখন কল্পনা করাও দুরূহ। অথচ সেই বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি না বললেই চলে। জলবায়ু পরিবর্তন বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কোনোটাকেই আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু আমাদের উপকূলীয় জনপদগুলো যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। আবাদি জমিগুলোকে লোনা পানির গ্রাস থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে পারি। লোনা পানিসহিষ্ণু চাষাবাদ উদ্ভাবনে আমাদের গবেষকদের আরো বেশি করে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের চিংড়ি চাষ এখনো মান্ধাতা আমলের। ফলে একরপ্রতি যে উৎপাদন, তা আশপাশের দেশগুলো থেকেও অনেক কম। সেখানে আমরা নিবিড় চিংড়ি চাষের ব্যবস্থা করতে পারি। বড় জলোচ্ছ্বাসের সময় মানুষ যাতে জীবন, গবাদিপশু, সহায়-সম্পদ রক্ষা করতে পারে; তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু সেসবের প্রায় কিছুই হচ্ছে না।
যে মানুষ বা যে জাতি একটু দূরবর্তী চিন্তা করতে পারে, ভবিষ্যৎকে ভাবনায় নিয়ে উন্নয়ন করতে পারে_তারাই টিকে থাকতে পারে। জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে ২৫ বছর পরের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
No comments