পাঁচবিবির চুনাপাথর-সমৃদ্ধির পথে আলোর ইশারা
বাংলাদেশে গ্যাস বাদে অন্য কোনো খনিজসম্পদ নেই_ এমন ধারণা অনেক বছর বদ্ধমূল ছিল। ক্রমেই এ ধারণা পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এখন আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান বলতে পারি। কারণ, বাংলাদেশের স্থল ও জলভাগে অনেক সম্পদের মজুদ রয়েছে। তা কাজে লাগাতে পারলে হতদরিদ্র দেশের চিত্রটাই আমূল বদলে যাবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কয়লা, পিট কয়লা, কঠিন শিলাসহ কয়েক ধরনের খনিজ ভালো মজুদ রয়েছে আমাদের ভূখণ্ডে। হরিপুর ও কৈলাসটিলায় মিলেছে তরল সোনা তেলের সন্ধান। এসব খনিজ লাভজনকভাবেই উত্তোলন করা সম্ভব_ এমন অভিমতই দিচ্ছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলভাগে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় তেল-গ্যাস তো বটেই, আরও অনেক ধরনের মূল্যবান খনিজসম্পদ নিশ্চিত মিলবে_ এমনই অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের। এসব খবর ইতিবাচক এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের সহায়ক। রোববার আরেকটি উৎসাহব্যঞ্জক খবর মিলেছে বাংলাদেশ ভূতাত্তি্বক জরিপ অধিদফতরের কাছ থেকে। তাদের জরিপ দল জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবিতে চুনাপাথরের খনি আবিষ্কার করেছে। চুনাপাথরের নিচে কয়লার মজুদ রয়েছে বলেও বিশেষজ্ঞদের অনুমান। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্য আরও অনুসন্ধান কাজ চালাতে হবে। এ খনিতে প্রায় ৯৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে একশ' ফুট পুরু স্তরের চুনাপাথর রয়েছে বলে অনুমান। তা উত্তোলন করা গেলে সিমেন্টশিল্পের প্রধান কাঁচামালের জন্য আমদানিনির্ভরতা বিপুলভাবে কমে যাবে। আশা করব যে, এ সম্পদ বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ সরকার হাতে নেবে। বাজেটেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা চাই। তবে খনিজসম্পদ, বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া কয়লা খনির সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা তা বিবেচনায় রাখতে হবে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কয়লা ব্যবহার করে তুলনামূলক কম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কয়লার আরও লাভজনক ব্যবহারের ক্ষেত্র আমাদের জানা রয়েছে। কিন্তু নানা মুনির নানা মতে কয়লা অবহেলায় পড়ে আছে মাটির নিচে। পাঁচবিবির চুনাপাথর নিয়ে অহেতুক বিতর্ক পরিহারের জন্য শুরুতেই সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করা চাই। আমাদের জন্য আশার দিক হচ্ছে, খনিজসম্পদ বিষয়ে দেশীয় একদল বিশেষজ্ঞ গড়ে উঠেছে। তারা জাতীয় স্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ ও সক্রিয়। সরকারের দায়িত্ব, প্রয়োজনে তাদের আরও প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আর্থিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে সব সুবিধা নিশ্চিত করা। খনিজসম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে বিদেশি কারিগরি ও মানবসম্পদের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনে সরকারকে অবশ্যই সচেতন থাকা চাই। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ কর্মী বাহিনীর অভিজ্ঞতা এবং শ্রম ও মেধা কাজে লাগাতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকেই এ জন্য বেছে নিতে হবে। বাংলাদেশ এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বে আমাদের মর্যাদা বেড়েছে। দেশের প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মধ্যেই আমরা মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হতে পারব_ এমনটি আর কষ্টকল্পনাতে সীমিত নেই। এ লক্ষ্য পূরণে আবশ্যকীয় শর্ত দুটি_ নেতৃত্বের নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতা এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপর স্থান দেওয়া। আমরা নিশ্চয়ই এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে পারব।
No comments