ইতি-নেতি-মধ্যপ্রাচ্যের বিপ্লব কি তবে দীর্ঘজীবী হচ্ছে না? by মাসুদা ভাট্টি
পৃথিবীর ইতিহাস বড় বিচিত্র। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কথাই যদি ধরি, তাহলে এই বিস্তীর্ণ বালুময় ভূখণ্ডে তিন তিনটি শক্তিশালী ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে; যার মূলকথা, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেও এ ভূখণ্ডে যে এখনো শান্তি 'দূরস্থ' সে কথা বলাই বাহুল্য। একটি বিষয় হঠাৎই মাথায় এল,
তিনটি আধুনিক ধর্মই এ ভূখণ্ডে উৎপন্ন হলেও দুটি ধর্ম বলতে গেলে পুরোপুরিই পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়েছে। একমাত্র ইসরায়েল ছাড়া ইহুদিদের যেমন আর কোনো আরব রাষ্ট্রে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তেমনই খ্রিস্ট ধর্ম রোমানদের হাতে পড়ে সেই যে পশ্চিমে পা বাড়াল, নতুন করে আর কখনোই ফেরেনি আরবভূমে। এখন কিছুসংখ্যক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী আরবে থাকলেও তা উল্লেখের দাবি রাখে না। ধর্মের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এ ভূখণ্ডের বিগত ইতিহাসে অনেক রক্তপাতের চিহ্ন রেখে গেছে, কোনো কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি এখনো মনে করছেন, আরবভূমে যে নতুন লড়াই শুরু হলো, তাও আসলে সেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠারই ধারাবাহিকতা মাত্র। একে এখন যে যে ভাবে দেখেন, ধর্ম, তেল কিংবা গণতন্ত্র_যাই-ই হোক কেন, মূলে কিন্তু সেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই। এর সঙ্গে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু আমার বিশ্বাস, এখানে দ্বিমত পোষণের জায়গাটা খুবই ক্ষীণ।
শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়, তারপর আলজেরিয়া, মিসরে এসে তা এতটাই সাফল্য পেল যে গণতন্ত্রপন্থী মানুষ আশাবাদী হতে শুরু করেছিল। মানুষের মিলিত শক্তিতেও ফিরে আসছিল আস্থা। কিন্তু এর সূত্র ধরে যখন ইয়েমেন, বাহরাইন, জর্দান, ওমান এবং সর্বশেষ লিবিয়ায় মানুষ পথে নামতে শুরু করল, তখন আসলে আরবের ক্ষমতাসীন সামন্তবাদী শাসক শ্রেণীর টনক নড়তে শুরু করল। জনগণের এ উত্থান নানা রং ও তকমায় বিশ্লেষিত হতে শুরু করল। বিষয়টি মূলত বাহরাইনে গিয়ে বেশি ঘোলাটে হলো, কারণ এখানে যারা গণতন্ত্রের দাবিতে রাজপথে নেমেছে, তাদের গরিষ্ঠ অংশ শিয়া মতাবলম্বী। আর এতে সুনি্ন আরব মোটামুটি খেপে গিয়ে তাদের যে জোট রয়েছে, বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য সুনি্নপ্রধান রাষ্ট্রের যে জোট, তারা সিদ্ধান্ত নিল বাহরাইনের রাজতন্ত্রকে বাঁচাতেই হবে এবং প্রায় দুই হাজার সৈন্য পাঠিয়ে দিল। বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নিতে পারল না ইরান, যেখানে ধর্মের বর্মে শাসক শ্রেণী নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে চাইছে পশ্চিমের হাত থেকে। অথচ এই ইরান ছিল একসময়কার উদার রাষ্ট্রের উদাহরণ। যে বিপ্লবের পরে ইরানে আজ এ দমবন্ধ অবস্থা, আরবে সেই একই বিপ্লব আসছিল উল্টোরথে, জনগণের মুক্তির বারতা নিয়ে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ উল্টোরথের বিপ্লব এবার নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সৌদি আরব সুনি্ন মতাবলম্বীদের নেতৃত্ব দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সুনি্ন প্রাধান্য বজায় রেখেছে এবং রাখতেও চাইবে, যদিও সৌদি রাজতন্ত্রের নিজস্ব ধর্মমত ওয়াহাবিজম নিয়ে খোদ আরবেই অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু স্বার্থ, ক্ষমতা ও প্রাধান্য টিকিয়ে রাখতে এখন আরবভূমে যে নতুন চক্রান্ত শুরু হলো, তাতে সৌদি নেতৃত্বে শক্তিশালী গোষ্ঠীটি যে পশ্চিমা শক্তিকে লিবিয়ায় ঢোকালো তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। ফ্রান্সের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর যে জোট লিবিয়ায় হামলা শুরু করেছে তার মূলে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত মানুষের দাবিই কেবল কাজ করছে_এ কথা যত গলাবাজি করে বলা হোক না কেন, খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য হবে কি? কারণ অতীত ইতিহাস তো ভিন্ন সাক্ষ্য দেয়। লিবিয়ার গাদ্দাফি সরকার এত দিন পর্যন্ত পশ্চিমের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হয়নি, বরং সম্পর্কটা গভীর সখ্যেরই ছিল। ফ্রান্স বা ইতালির সঙ্গে লিবিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় ছিল যে আজকে ফ্রান্সের নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্যই তাকে হামলায় নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেসব মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল, আজ তাদের অনেকেই হয়তো চিন্তাধারা বদলাবে। এত দিন পর্যন্ত, বিশেষ করে ইরাক আক্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে ভূমিকা আমরা দেখেছি, তাতে আশাবাদী হওয়ার কারণ ছিল বৈকি। নিন্দুকরা অবশ্য এ কথা জোরেশোরেই বলতে শুরু করেছে যে, খোদ ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির যে দুরবস্থা, অর্থনীতির যে ভগ্নদশা, দুর্বল রাজনৈতিক সমর্থন, তাতে সারকোজিকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে হলে এ রকম একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছাড়া গতি ছিল না। এ ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যও যে সারকোজি লিবিয়ার বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দিতে এত মুক্তকচ্ছ, সে যুক্তিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার সার্বিকভাবে পশ্চিমা অর্থনীতিতে যে ধস আমরা দেখলাম ২০১০ সালজুড়ে, একে একে বিশাল সব ব্যাংকিং সাম্রাজ্য ধসে পড়ছে, চাকরির বাজার একেবারেই বেহাল হয়ে উঠেছে, খাদ্যের বাজারে যেভাবে আগুন লেগেছে_এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি মেরামত করার জন্যও পশ্চিমের কাছে একটি যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। আর কে না জানে, মধ্যপ্রাচ্যের মতো তরল সোনার দেশগুলোই যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। যুদ্ধ মানেই অস্ত্র বিক্রি, ব্যাপক লুটপাট আর সম্পদ বেহাত হওয়ার ঘটনা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এর মধ্যে বিবদমান পক্ষের মানুষের প্রাণহানি আসলে কোনো ভূমিকা রাখে না, যতই আমরা মানবতার গুণগান গাই না কেন।
একটি নিজস্ব বিশ্লেষণ দিয়ে লেখাটি শেষ করি। ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবে যখন জনগণের জয় সূচিত হচ্ছিল তখন ইউরোপের রাজতন্ত্র একাট্টা হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। রুশ বিপ্লবের পর পশ্চিমা ধনবাদী গোষ্ঠী রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তাও মূলত ছিল বিপ্লব ঠেকানোর লক্ষ্যে। কিউবায় বিপ্লবের পর ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তা ছিল বিপ্লব ঠুঁটো করার নিমিত্তে। ইরানের বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে পশ্চিমপ্রিয় সাদ্দামের যে যুদ্ধ আমরা আশির দশকে দেখেছি, তাও কি ছিল না বিপ্লব দমনেরই জন্য! আরবের দেশে দেশে আমরা আজ যে উত্থান দেখতে পাচ্ছি, তা ক্রমেই রূপ নিচ্ছে গণবিপ্লবে। প্রাথমিকভাবে আরবের রাজতন্ত্র তাতে ভীত ও নিরাপত্তাহীন বোধ করলেও পশ্চিমও যে এতে খুব সন্তুষ্ট, তা নয়। বরং রাজতান্ত্রিক শক্তির কাছে পশ্চিমের স্বার্থ যতটা নিরাপদ গণতান্ত্রিক আরবের কাছে ঠিক ততটা থাকবে কি না এ নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। মোদ্দা কথা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে যখন গণতন্ত্রের দাবিতে গণজাগরণ শুরু হলো তখন বিশ্লেষকরা এর উৎপত্তি ও পরিণতি খুঁজতে যতটা না তৎপর ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি তৎপর শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্য যে নতুন করে অশান্ত হলো সেই দুশ্চিন্তায়।
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ
editor@ekpokkho.com
শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়, তারপর আলজেরিয়া, মিসরে এসে তা এতটাই সাফল্য পেল যে গণতন্ত্রপন্থী মানুষ আশাবাদী হতে শুরু করেছিল। মানুষের মিলিত শক্তিতেও ফিরে আসছিল আস্থা। কিন্তু এর সূত্র ধরে যখন ইয়েমেন, বাহরাইন, জর্দান, ওমান এবং সর্বশেষ লিবিয়ায় মানুষ পথে নামতে শুরু করল, তখন আসলে আরবের ক্ষমতাসীন সামন্তবাদী শাসক শ্রেণীর টনক নড়তে শুরু করল। জনগণের এ উত্থান নানা রং ও তকমায় বিশ্লেষিত হতে শুরু করল। বিষয়টি মূলত বাহরাইনে গিয়ে বেশি ঘোলাটে হলো, কারণ এখানে যারা গণতন্ত্রের দাবিতে রাজপথে নেমেছে, তাদের গরিষ্ঠ অংশ শিয়া মতাবলম্বী। আর এতে সুনি্ন আরব মোটামুটি খেপে গিয়ে তাদের যে জোট রয়েছে, বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য সুনি্নপ্রধান রাষ্ট্রের যে জোট, তারা সিদ্ধান্ত নিল বাহরাইনের রাজতন্ত্রকে বাঁচাতেই হবে এবং প্রায় দুই হাজার সৈন্য পাঠিয়ে দিল। বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নিতে পারল না ইরান, যেখানে ধর্মের বর্মে শাসক শ্রেণী নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে চাইছে পশ্চিমের হাত থেকে। অথচ এই ইরান ছিল একসময়কার উদার রাষ্ট্রের উদাহরণ। যে বিপ্লবের পরে ইরানে আজ এ দমবন্ধ অবস্থা, আরবে সেই একই বিপ্লব আসছিল উল্টোরথে, জনগণের মুক্তির বারতা নিয়ে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ উল্টোরথের বিপ্লব এবার নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সৌদি আরব সুনি্ন মতাবলম্বীদের নেতৃত্ব দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সুনি্ন প্রাধান্য বজায় রেখেছে এবং রাখতেও চাইবে, যদিও সৌদি রাজতন্ত্রের নিজস্ব ধর্মমত ওয়াহাবিজম নিয়ে খোদ আরবেই অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু স্বার্থ, ক্ষমতা ও প্রাধান্য টিকিয়ে রাখতে এখন আরবভূমে যে নতুন চক্রান্ত শুরু হলো, তাতে সৌদি নেতৃত্বে শক্তিশালী গোষ্ঠীটি যে পশ্চিমা শক্তিকে লিবিয়ায় ঢোকালো তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। ফ্রান্সের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর যে জোট লিবিয়ায় হামলা শুরু করেছে তার মূলে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত মানুষের দাবিই কেবল কাজ করছে_এ কথা যত গলাবাজি করে বলা হোক না কেন, খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য হবে কি? কারণ অতীত ইতিহাস তো ভিন্ন সাক্ষ্য দেয়। লিবিয়ার গাদ্দাফি সরকার এত দিন পর্যন্ত পশ্চিমের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হয়নি, বরং সম্পর্কটা গভীর সখ্যেরই ছিল। ফ্রান্স বা ইতালির সঙ্গে লিবিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় ছিল যে আজকে ফ্রান্সের নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্যই তাকে হামলায় নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেসব মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল, আজ তাদের অনেকেই হয়তো চিন্তাধারা বদলাবে। এত দিন পর্যন্ত, বিশেষ করে ইরাক আক্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে ভূমিকা আমরা দেখেছি, তাতে আশাবাদী হওয়ার কারণ ছিল বৈকি। নিন্দুকরা অবশ্য এ কথা জোরেশোরেই বলতে শুরু করেছে যে, খোদ ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির যে দুরবস্থা, অর্থনীতির যে ভগ্নদশা, দুর্বল রাজনৈতিক সমর্থন, তাতে সারকোজিকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে হলে এ রকম একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছাড়া গতি ছিল না। এ ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যও যে সারকোজি লিবিয়ার বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দিতে এত মুক্তকচ্ছ, সে যুক্তিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার সার্বিকভাবে পশ্চিমা অর্থনীতিতে যে ধস আমরা দেখলাম ২০১০ সালজুড়ে, একে একে বিশাল সব ব্যাংকিং সাম্রাজ্য ধসে পড়ছে, চাকরির বাজার একেবারেই বেহাল হয়ে উঠেছে, খাদ্যের বাজারে যেভাবে আগুন লেগেছে_এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি মেরামত করার জন্যও পশ্চিমের কাছে একটি যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। আর কে না জানে, মধ্যপ্রাচ্যের মতো তরল সোনার দেশগুলোই যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। যুদ্ধ মানেই অস্ত্র বিক্রি, ব্যাপক লুটপাট আর সম্পদ বেহাত হওয়ার ঘটনা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এর মধ্যে বিবদমান পক্ষের মানুষের প্রাণহানি আসলে কোনো ভূমিকা রাখে না, যতই আমরা মানবতার গুণগান গাই না কেন।
একটি নিজস্ব বিশ্লেষণ দিয়ে লেখাটি শেষ করি। ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবে যখন জনগণের জয় সূচিত হচ্ছিল তখন ইউরোপের রাজতন্ত্র একাট্টা হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। রুশ বিপ্লবের পর পশ্চিমা ধনবাদী গোষ্ঠী রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তাও মূলত ছিল বিপ্লব ঠেকানোর লক্ষ্যে। কিউবায় বিপ্লবের পর ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তা ছিল বিপ্লব ঠুঁটো করার নিমিত্তে। ইরানের বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে পশ্চিমপ্রিয় সাদ্দামের যে যুদ্ধ আমরা আশির দশকে দেখেছি, তাও কি ছিল না বিপ্লব দমনেরই জন্য! আরবের দেশে দেশে আমরা আজ যে উত্থান দেখতে পাচ্ছি, তা ক্রমেই রূপ নিচ্ছে গণবিপ্লবে। প্রাথমিকভাবে আরবের রাজতন্ত্র তাতে ভীত ও নিরাপত্তাহীন বোধ করলেও পশ্চিমও যে এতে খুব সন্তুষ্ট, তা নয়। বরং রাজতান্ত্রিক শক্তির কাছে পশ্চিমের স্বার্থ যতটা নিরাপদ গণতান্ত্রিক আরবের কাছে ঠিক ততটা থাকবে কি না এ নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। মোদ্দা কথা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে যখন গণতন্ত্রের দাবিতে গণজাগরণ শুরু হলো তখন বিশ্লেষকরা এর উৎপত্তি ও পরিণতি খুঁজতে যতটা না তৎপর ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি তৎপর শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্য যে নতুন করে অশান্ত হলো সেই দুশ্চিন্তায়।
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ
editor@ekpokkho.com
No comments