জিডিপি ও বাংলাদেশ

আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশ ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বব্যাংক থেকে। এই প্রতিষ্ঠানটির দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিশদ আলোচনা আছে এখানে। বাংলাদেশ ইকোনমিক আউটলুকের প্রকাশ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তাঁদের মতামত দিয়েছেন।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের মতই এতে প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক মোটামুটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন আশানুরূপ না হলেও বিশ্বব্যাংকের মতে এটা স্বাস্থ্যকর। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশে বিনিয়োগপ্রবাহ নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে জিডিপির ৬ থেকে ৮ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এখন জাতীয় সঞ্চয় ও বেসরকারি বিনিয়োগ হার হ্রাস পাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের এই রিপোর্টে প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগপ্রবাহ, রপ্তানি, নতুন ব্যাংক, কৃষিসহ নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি কিছু বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে। আলোচনায় সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরাও এ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৩.৮ শতাংশ থেকে নেমে গত এপ্রিলে ৮.১ শতাংশ হয়েছে। এটি ভালো খবর। এই ভালো খবরের পাশাপাশি আছে একটি দুঃসংবাদ। সেটি হচ্ছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার গত মার্চে ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক বছর আগে ছিল মাত্র ৪.৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক মনে করে, যেকোনো সচেতন সরকারের উচিত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া। মূলত মূল্যস্ফীতিই দেশের একটি বড় অংশের জন্য অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির কারণেই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির গতি বজায় থেকেছে। তবে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, গত কয়েক বছরে কৃষিতে বাম্পার ফলনের কথা। এতে কৃষির ভিত্তি সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন কৃষিতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
তবে বিনিয়োগপ্রবাহ নিয়ে কোনো আশার কথা শোনায়নি বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগপ্রবাহ নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে জিডিপির ৬ থেকে ৮ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এখন জাতীয় সঞ্চয় ও বেসরকারি বিনিয়োগ হার হ্রাস পাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের এখনো ঋণ নেওয়ার হার বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি) বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে যে মত দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকও ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে।
তবে এই রিপোর্ট নিয়ে আপ্লুত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু ঝুঁকিও দেখতে পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানির নিম্ন প্রবৃদ্ধি। যেকোনো কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা দেখা দিলে রেমিট্যান্স আয় ও জ্বালানি তেলের মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করে এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এ রিপোর্ট নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের মতো একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশে বাস্তবতা ও নৈতিকতার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে যেকোনো সময়। ব্যাংকগুলোতে রয়েছে তারল্য সংকট। এ ছাড়া বিনিয়োগে উৎপাদনের ধীরগতি উন্নয়নের চাকা শ্লথ করে দিতে পারে। কাজেই আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে বুঝেশুনে পথ চলতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.