‘ভীতি প্রদর্শনের’ অভিযোগ এস আলমের: বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া শুরুর হুঁশিয়ারি
এতে বলা হয়, সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলে দেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচার করেছেন সাইফুল আলম। হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পান আহসান মনসুর। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক একজন কর্মকর্তা। গত মাসে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। সেসময় মনসুর বলেছিলেন, সাইফুল আলম এবং তার সহযোগীরা গোয়েন্দা সংস্থার নেতৃস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন। এস আলম গ্রুপ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি ব্যাংকের দখল নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছেন আলম। আহসান মনসুরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এস আলম পরিবারের পক্ষে বাংলাদেশ গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান। যার একটি অনুলিটি পেয়েছে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। তাতে অভিযোগ করা হয়, গভর্নর আহসান মনসুর এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে ভিত্তিহীন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের অভিযোগকে এস আলমের বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাইফুল আলমসহ তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তার ছেলে আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় গভর্নরের কাছে এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তার পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার হুমকি হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় অভিঘাত বলে বর্ণনা করেছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
চিঠিতে উল্লেখিত সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি। সাইফুল আলমের আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় দপ্তরও নাগিরকত্বের বিষয়টিতে সাড়া দেয়নি। তারা এখনো বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তাও জানা যায়নি। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ২০০৪ সাল থেকে একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে। আহসান মনসুরের কাছে এস আলমের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারে মনসুর যে দাবি করেছেন তা শতভাগ প্রমাণিত। তবে আলমের দুর্নীতির বিষয়টি অনেক বড় হওয়ায় এই সংক্রান্ত নথি তৈরিতে কিছুটা সময় লাগছে।
No comments