মহাকাশযানের কবরস্থান খ্যাত পয়েন্ট নিমো কোথায়?

মহাকাশ থেকে আমাদের পৃথিবীর ওপর নজর রাখছেন একদল বিজ্ঞানী। পৃথিবী থেকে মাত্র কয়েকশ’ কিলোমিটার ওপর রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। সেখান থেকে বসেই খোঁজখবর রাখেন তামাম দুনিয়ার। কিন্তু আর কয়েক বছর পর যখন এই মহাকাশযানের সময় ফুরিয়ে আসবে, তখন কী হবে সেটির? কখনও ভেবে দেখেছেন?

২০৩০ সালে অবসরে যাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। এরপর এটির সলিল সমাধি হবে দুনিয়ার বুকেই। পৃথিবীর বুকে থাকা নির্জন এক দ্বীপে সাগরে ফেলা হবে এই মহাকাশ স্টেশনকে। ওই দ্বীপ এতটাই নির্জন যে সেখানে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত নেই মানুষের কোনো চিহ্ন। এমনকি এই দ্বীপ থেকে পৃথিবীর কাছাকাছি স্থানগুলোতেও পৌঁছানো অনেক কঠিন।

মানববসতির নাগালের বাইরে থাকা এই দ্বীপের নাম পয়েন্ট নিমো। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন এই স্থানটি দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত। কোনো দেশের অধিকার নেই এই জায়গার ওপর।

আর তাই অন্যান্য মহাকাশযানেও কখনো ত্রুটি দেখা দিলে জনবসতি থেকে অনেক দূরে স্থানে সেগুলো ফেলে দেওয়ার জন্য বেছে নেন বিজ্ঞানীরা।

এখান থেকে পৃথিবীর অন্য এলাকায় পৌঁছতে কঠিন হলেও মহাকাশে পৌঁছানো সহজ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটিই না কি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের জায়গা। পয়েন্ট নিমোর সবচেয়ে নিকটতম দ্বীপ হচ্ছে ডুসি। এটির অবস্থান পয়েন্ট নিমো থেকে প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার দূরে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি এই স্থান থেকে উপরে হাঁটা শুরু করেন, ডুসি দ্বীপের আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে যাবেন তিনি।

মূলত এভাবেই পৃথিবীর থেকে মহাকাশের সবচেয়ে কাছের স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে পয়েন্ট নিমো। ১৯৯২ সালে হোর্ভজ লুকাটেলা নামে এক জরিপ প্রকৌশলী এই দ্বীপ আবিষ্কার করেন। পরে জুলস ভার্নের কাল্পনিক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমোর নামের সঙ্গে মিল রেখে এই স্থানের নামকরণ করা হয় পয়েন্ট নিমো। প্রশান্ত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম এলাকা হিসেবেও পরিচিত।

১৯৭১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পয়েন্ট নিমোর আশপাশে প্রায় ২৬০টিরও বেশি মহাকাশযান ধ্বংসাবশেষ সমাহিত করা হয়েছে। এজন্য এই এলাকাকে মহাকাশযানের কবরস্থানও বলা হয়। ভয়ংকর নির্জন এই দ্বীপে এতটাই নীরবতা রয়েছে যে পাথর ভাঙার শব্দও আত্মাকে শিহরিত করে দেয়। পৃথিবীর নির্জন এই দ্বীপ নিয়ে তাই মানুষের কৌতূহলের কোনো শেষ নেই।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ছবি : সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.