বিএনপি’র মামলা বাণিজ্যের ঘটনায় উত্তপ্ত রংপুর by জাভেদ ইকবাল

রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দলের পরিস্থিতি। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনে শুরু হয়েছে তোলপাড়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রংপুরে হতাহতকে ঘিরে বিএনপি’র বিরুদ্ধে নিরীহ, নিরপরাধ মানুষজনকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও বাণিজ্যের অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে নগরবাসী। ক্ষুব্ধ সচেতন নাগরিক রবিউল ইসলাম বলেন, দেশ থেকে এক চোরকে তাড়িয়ে এখন ডাকাতের হাতে পড়েছি। বিব্রতবোধ করে খোদ ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রদলের সাবেক কারমাইকেল কলেজের জিএস বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম মিজুসহ একাধিক নেতাকর্মীরা। তারা মানবজমিনকে বলেন, দু’চারজনের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল রংপুর মহানগর বিএনপি আহ্বায়কের মামলা বাণিজ্যের প্রতিবাদ করায় রোষানলে ফেলে মিথ্যা অপ-প্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাওছার জামান বাবলা। তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৩ই নভেম্বর বিএনপিকর্মী মামুনুর রশীদ মামুন রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে ১৮১ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

আওয়ামী লীগ ছাড়া নিরীহ, নিরপরাধ মানুষসহ রংপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলার বাসিন্দাদের মামলার বাদী কেন করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে মামুন জানান- তিনি ২৫ জনের নাম দিলেও মহানগর আহ্বায়ক সামাসুজ্জামান সামু অন্যদের আসামি করে মামলায় সই করাতে বাধ্য করেন। এ কথোপকথনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সামু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানো মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেনসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছেন। কাওছার জামান বাবলা বলেন, বিএনপি’র রাজনীতি করার কারণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি তাজহাট ও ডিবি অফিস পোড়ানোর মামলায় জেল খেটেছি। বিএনপি’র আহ্বায়ক সামু তো জেল খাটে নাই। রংপুর, ঢাকা, খুলনায় আমার বিরুদ্ধে ৭টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। বিএনপি করার কারণে খুলনায় আমার জুটমিল দখল হয়েছে। অথচ প্রতিপক্ষ বলে দলে আমার কোনো অবদান নাই। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাহিগঞ্জের পরেশনাথ মন্দিরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রামকৃষ্ণ সোমানী, সহ-সভাপতি বরুণ কান্তি সাহা, বিকাশ চন্দ্র মহন্ত, মহানগর বিএনপি’র সদস্য সেলিম চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতাকর্মী। এর আগে মিথ্যা অভিযোগ, হয়রানি ও মামলা বাণিজ্যের হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হুঙ্কার দিয়েছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুন্নবী ফুলু।

এক  সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, আমি সাবেক রংপুর পৌরসভা ও বর্তমান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পরপর পাঁচবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ওয়ার্ডবাসীকে সেবা দিয়ে আসছি। আমি কখনও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, বর্তমানেও নেই। অথচ গত ১৯শে জুলাই রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতের ঘটনায় মামুনুর রশীদ মামুন রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ রংপুর নগরী, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলার ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলায় আমাকে ১৪৭ নং আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে আমার অংশগ্রহণ ছিল না, যা ওয়ার্ডবাসী সকলেই অবগত রয়েছেন। ফুলু বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি মামলার বাদী মামুনুর রশীদ মামুন বিএনপি করেন এবং রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু এ মামলার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে হয়রানিসহ অবৈধ সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে আমাকে জড়িয়েছে। তিনি কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আমার নাম প্রত্যাহারসহ আমার মতো নিরপরাধ, নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধ না হলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উল্লেখ্য, রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীরা। এর প্রতিবাদে বিএনপি কার্যালয়ে মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.