কাঁদছে নেপাল
ভয়াল
ভূমিকম্পের আঘাত। মুহূর্তে ধ্বংস উপত্যকা নেপাল। হু হু করে বাড়ছে মৃত্যুর
সংখ্যা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা
জানান। প্রাণহানি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত হয়েছেন ১৭০০’রও বেশি।
মৃত্যুপুরী নেপালে কাঁদছেন সবাই। রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ওই
ভূমিকম্প স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে প্রথম আঘাত হানে। ঘনবসতিপূর্ণ
কাঠমান্ডু উপত্যকা কাঁপিয়ে রাজধানী কাঠমান্ডুজুড়ে প্রলয় তাণ্ডব চলে। ক্রমে
চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে তা। উত্তরে হিমালয় ও তিব্বত, দক্ষিণে ইন্দো-গঙ্গা
অঞ্চল, পূর্বে বাংলাদেশ আর পশ্চিমে পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত। ভূমিকম্পটির
উৎপত্তি ছিল ভূগর্ভের ১১ কিলোমিটার গভীরে। এর এক ঘণ্টা পর রিখটার স্কেলে
৬.৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর ভূমিকম্প-পরবর্তী একের পর এক
ভূকম্পন অব্যাহত থাকে কয়েক ঘণ্টাজুড়ে। ভীতসন্ত্রস্ত নিবাসীরা যে যেখানে
ছিলেন বের হয়ে আসেন বাইরে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সবাই। ভবনগুলো ধসে পড়ে
তাসের ঘরের মতো। উপড়ে যায় গাছপালা আর বৈদ্যুতিক পিলারগুলো। রাস্তা ঘাটে
সৃষ্টি হয় বিশাল ফাটল। চার পাশ ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিভীষিকাময়
স্থানে পরিণত হয় কাঠমান্ডু ও পোখরা শহরসহ আক্রান্ত এলাকাগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল
রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে লামজুংয়ে। নেপালের বিস্তীর্ণ
এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কাঠমান্ডুতে।
শুধু সেখানেই নিহত হয় ৫৩৯ জন। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে প্রাচীন
নিদর্শন বহনকারী অনেক স্থাপনা। নেপাল সরকার আক্রান্ত এলাকাগুলোয় জরুরি
অবস্থা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটি আন্তর্জাতিক
সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন অনেক মানুষ।
উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে
প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত
স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে নয়তলা একটি টাওয়ার। এছাড়া ধসে পড়েছে একাধিক
মন্দির, যেগুলো ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও
ফাটল দেখা দিয়েছে অনেক ভবনে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ধসে পড়তে পারে সেগুলোও।
ভূমিকম্পে প্রকম্পিত হয়েছে এভারেস্ট পর্বতমালাও। সেখানে তুষারধসে কমপক্ষে
১০ জন নিহত হয়েছে। আটকে পড়েছেন সহস্রাধিক পর্বতারোহী। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী
বাংলাদেশে ২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ভারতে কমপক্ষে ৩৫ জন ও তিব্বতে ৬ জন নিহত
হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরিস্থিতি
পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া
জানিয়েছে, ৯৬ জন সেনাসহ ১৫ টন ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে ভারত। পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নেপালকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নেপালে
১৯৩৪ সালের পর এটাই সব থেকে বড় মাত্রার ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের
নিকটবর্তী এক গ্রামের বাসিন্দা ভিম তামাং বলেন, আমাদের গ্রাম পুরোটাই বলতে
গেলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বেশির ভাগ ভূমিধসে ধ্বংস হয়েছে বা ভূকম্পনে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের অর্ধেকের বেশি মানুষ মৃত বা নিখোঁজ বলে তিনি
জানান। গ্রামের প্রত্যেকে খোলা স্থানে এসে অবস্থান নেয়। অসহায় অভিব্যক্তি
নিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানিনা আমাদের কি কারা উচিত। বার্তা সংস্থা এপির
সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এসব বলেন। গতকাল রাত ও রোববার বজ্রসহ বৃষ্টি ও ঝড়ের
পূর্বাভাস জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে
হাসপাতালগুলো ভরে যায় আহত ব্যক্তিদের দিয়ে। ভূমিকম্পের পর কাঠমান্ডুর
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর
ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খোলা স্থানে রাতযাপন
গাডির্য়ান জানিয়েছে, কাঠমান্ডুতে হাজারো মানুষ গতরাতে বাসার বাইরে রাতযাপনের প্রস্তুতি নেয়। আবারও ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে সে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে। দক্ষিণ কাঠমান্ডু সংলগ্ন পাতান শহরের স্থানীয় নিবাসীরা উন্মুক্ত স্থানে এবং মন্দিরের খোলা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। ২৯ বছরের রবিন শাকিয়া নামের এক নিবাসী বলেন, প্রত্যেকে আবারও ভূমিকম্প হতে পারে সে আতঙ্কে রয়েছে। ভূমিকম্প টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি দ্রুত বাইরে বের হয়ে আসি। আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়ি। সারা দিন আমি বাইরে কাটাই। তার সঙ্গে গতরাতে রাতযাপন করেন আরও ২০০ স্থানীয় নিবাসী। তারা সেখানকার একটি নার্সারি প্ল্যান্টে ছিলেন। পার্শ্ববর্তী নিখা চক এলাকায় আনুমানিক ১৫০০ নিবাসী একটি বৌদ্ধমন্দিরের চারপাশে অবস্থান নেয় রাতযাপনের জন্য। তাদের কাছেই বিশাল আকৃতির পাত্রে পুরো সম্প্রদায়েরর জন্য রাতের খাবার রান্না হতে দেখা যায়। প্রত্যেকের অনুদানে এ ব্যবস্থা করা হয়।
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি
নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এক বিবৃতিতে সমবেদনা ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। তিনি বলেন, নেপালের জনগণ ও আক্রান্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, বৃটিশ সরকার নেপাল সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। নেপালস্থ বৃটিশ দূতাবাস সেখানকার কর্তৃপক্ষকে সম্ভ্যাব্য সব সহায়তা দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের বক্তব্য
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনিসেফ নেপালের ভূমিকমেপ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। ইউনিসেফ ইউকের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বুল বলেছেন, ঘটে যাওয়া ৭.৯ মাত্রার ভূমিকমেপ ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের শিশুদের জন্য ইউনিসেফ খুবই উদ্বিগ্ন। এ ধরনের ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ভবন ধস, সড়ক ও অবকাঠামো ধ্বংস উল্লেখযোগ্য। ইউনিসেফ নেপালে সক্রিয় রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে গোটা বিপর্যয়ের সঠিক চিত্র আমরা এখনও পাইনি। তবে আমরা বহু জীবনহানি ও গৃহধসের আশঙ্কা করছি। ভূমিকম্পের বিপদ থেকে নেপালের শিশুদের উদ্ধার করতে আমরা সাহায্য চালিয়ে যাবো। একই সঙ্গে এ কাজে আপনাদেরও সাহায্য প্রয়োজন। এদিকে শিশু দাতব্য সংস্থা প্ল্যান ইউকের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের প্রধান ড. উনি কৃষ্ণ বলেছেন, নেপালের বিপর্যয়ের ধরন দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, রাজধানী কাঠমান্ডুর বাইরের দরিদ্র অঞ্চলেও অনুসন্ধান ও উদ্ধারাভিযান দ্রুত বিস্তৃত করা জরুরি। দরিদ্র অঞ্চলসমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে সেখানকার শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যখন আমরা কাঠমান্ডুর বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হব, তখনই কেবল সত্যিকার চিত্রটি পাওয়া যাবে। আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি।
খোলা স্থানে রাতযাপন
গাডির্য়ান জানিয়েছে, কাঠমান্ডুতে হাজারো মানুষ গতরাতে বাসার বাইরে রাতযাপনের প্রস্তুতি নেয়। আবারও ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে সে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে। দক্ষিণ কাঠমান্ডু সংলগ্ন পাতান শহরের স্থানীয় নিবাসীরা উন্মুক্ত স্থানে এবং মন্দিরের খোলা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। ২৯ বছরের রবিন শাকিয়া নামের এক নিবাসী বলেন, প্রত্যেকে আবারও ভূমিকম্প হতে পারে সে আতঙ্কে রয়েছে। ভূমিকম্প টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি দ্রুত বাইরে বের হয়ে আসি। আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়ি। সারা দিন আমি বাইরে কাটাই। তার সঙ্গে গতরাতে রাতযাপন করেন আরও ২০০ স্থানীয় নিবাসী। তারা সেখানকার একটি নার্সারি প্ল্যান্টে ছিলেন। পার্শ্ববর্তী নিখা চক এলাকায় আনুমানিক ১৫০০ নিবাসী একটি বৌদ্ধমন্দিরের চারপাশে অবস্থান নেয় রাতযাপনের জন্য। তাদের কাছেই বিশাল আকৃতির পাত্রে পুরো সম্প্রদায়েরর জন্য রাতের খাবার রান্না হতে দেখা যায়। প্রত্যেকের অনুদানে এ ব্যবস্থা করা হয়।
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি
নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এক বিবৃতিতে সমবেদনা ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। তিনি বলেন, নেপালের জনগণ ও আক্রান্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, বৃটিশ সরকার নেপাল সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। নেপালস্থ বৃটিশ দূতাবাস সেখানকার কর্তৃপক্ষকে সম্ভ্যাব্য সব সহায়তা দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের বক্তব্য
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনিসেফ নেপালের ভূমিকমেপ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। ইউনিসেফ ইউকের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বুল বলেছেন, ঘটে যাওয়া ৭.৯ মাত্রার ভূমিকমেপ ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের শিশুদের জন্য ইউনিসেফ খুবই উদ্বিগ্ন। এ ধরনের ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ভবন ধস, সড়ক ও অবকাঠামো ধ্বংস উল্লেখযোগ্য। ইউনিসেফ নেপালে সক্রিয় রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে গোটা বিপর্যয়ের সঠিক চিত্র আমরা এখনও পাইনি। তবে আমরা বহু জীবনহানি ও গৃহধসের আশঙ্কা করছি। ভূমিকম্পের বিপদ থেকে নেপালের শিশুদের উদ্ধার করতে আমরা সাহায্য চালিয়ে যাবো। একই সঙ্গে এ কাজে আপনাদেরও সাহায্য প্রয়োজন। এদিকে শিশু দাতব্য সংস্থা প্ল্যান ইউকের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের প্রধান ড. উনি কৃষ্ণ বলেছেন, নেপালের বিপর্যয়ের ধরন দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, রাজধানী কাঠমান্ডুর বাইরের দরিদ্র অঞ্চলেও অনুসন্ধান ও উদ্ধারাভিযান দ্রুত বিস্তৃত করা জরুরি। দরিদ্র অঞ্চলসমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে সেখানকার শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যখন আমরা কাঠমান্ডুর বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হব, তখনই কেবল সত্যিকার চিত্রটি পাওয়া যাবে। আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি।
No comments