মুখোমুখি হতে ভয় কেন? by বিশ্বজিৎ চৌধুরী
আচরণবিধি
লঙ্ঘনের পারস্পরিক অভিযোগ বা ছোটখাটো হাতাহাতি, ভাঙচুরের বিচ্ছিন্ন
কিছু ঘটনা ঘটলেও স্বস্তির বিষয় চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে
এখনো বড় রকমের কোনো সহিংসতা হয়নি। আশঙ্কা কাটেনি, তবু আশা করতে দোষ
কী, নির্বাচনটা সত্যি উৎসবমুখর হয়ে উঠতে যাচ্ছে। ‘সম্মানিত’ ভোটারদের
দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা, ইতরবিশেষ না করে কাউকে জড়িয়ে নিচ্ছেন
আলিঙ্গনে, কারও হাত টেনে নিয়ে নিজের মাথায় রেখে দোয়া-আশীর্বাদ কামনা
করছেন। বিভিন্ন সামাজিক, নাগরিক, পেশাজীবী সংগঠন নির্বাচন নিয়ে সংলাপ,
মতবিনিময় সভার আয়োজন করছে। এসব দৃশ্য বড় মনোরম। সব মিলিয়ে যাকে বলে
নির্বাচনোপযোগী পরিবেশ। আমরা চাই এই পরিবেশটা অক্ষুণ্ন থাকুক নির্বাচনের
আগে ও পরে। তবে একটাই হতাশার বিষয়, মেয়র পদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের
(এ ক্ষেত্রে মূলত দুজন) পাশাপাশি রেখে ভোটারদের মুখোমুখি করা ও
প্রশ্নোত্তর পর্বের যে আয়োজন বেশ কিছু সংগঠন করেছিল, তাতে সাড়া দেননি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী। এতে এই শহরের মানুষ একটি প্রাণবন্ত
বিতর্ক দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন, প্রার্থীদের কাছে সরাসরি প্রশ্ন
করার সুযোগ ও নিজেদের প্রত্যাশা তুলে ধরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। এমনকি
সংবাদমাধ্যমের সূত্রে এই সংবাদ প্রচারিত-প্রকাশিত হলে দুই প্রার্থীর
উন্নয়ন ভাবনা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য ও উপস্থাপনা দেখে
তুলনামূলক বিচারের একটি সুযোগও হারালেন তাঁরা। অথচ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ
সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে এ ধরনের একাধিক আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন
হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
এ কথা সত্য, দম ফেলার ফুরসত নেই এখন প্রার্থীদের। কিন্তু এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলে তা-ও তো একধরনের প্রচারই। এত দ্রুত এত মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য এর কোনো ভালো বিকল্প হতেই পারে না। তবু কেন তাঁরা এলেন না? কেন বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিলেন না?
সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যৌথভাবে ১৯ এপ্রিল আয়োজন করেছিল ‘জনগণের মুখোমুখি মেয়র প্রার্থী’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু তাতে উপস্থিত হননি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী। এতে পুরো অনুষ্ঠানটির উদ্দেশ্য যে কার্যত ব্যর্থ হলো, তা বলা বাহুল্য। এ অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সনাকের সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘যেসব প্রার্থী নির্বাচনের আগেই জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পান, তাঁরা মেয়র হলে পরিস্থিতি কী হবে, এখনই বোঝা যায়।’
এ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আ জ ম নাছির অনুষ্ঠানে আসতে রাজি ছিলেন, কিন্তু তাঁর শর্ত ছিল মনজুর আলম সাহেব উপস্থিত থাকলেই কেবল তিনি উপস্থিত থাকবেন। তাঁর এই শর্তকে একেবারে ভিত্তিহীন বলা যাবে না, কারণ এর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চট্টগ্রামে এ ধরনের যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তাতে নাছির উপস্থিত থাকলেও আসেননি মনজুর। এ ধরনের অনুষ্ঠানে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন বা বাহাস না হলে অনুষ্ঠান নীরস হয়ে পড়ে তো বটেই, উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের কাছেও তা একতরফা ও নিরর্থক হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘তারুণ্যের ভাবনায় চট্টগ্রাম’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। যথারীতি এ অনুষ্ঠানেও আসেননি দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী। গত ১০ বছরে এই নগরে ভোটার বেড়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার। অর্থাৎ এই ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৮ এর মধ্যে। এই বিরাট অঙ্কের ভোটারদের ভাবনা সম্পর্কে আগ্রহী হওয়া বা তাঁদের কৌতূহল নিবৃত্ত করার ইচ্ছা বা উৎসাহ দুই মেয়র প্রার্থীর কেন যে হলো না, সেটা ভেবে বিস্মিত হই। এ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস জানিয়েছেন, কথা দিয়েও অনুষ্ঠানে আসেননি মনজুর আলম। শেষ মুহূর্তে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন মনজুরের অপারগতার কথা। এখানেও নাছিরের শর্ত ছিল মনজুরের অনুপস্থিতিতে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
সনাক, সুজন, ইউএনডিপি ছাড়া আরও অন্তত পাঁচ-সাতটি সংগঠন আয়োজন করেছিল মতবিনিময় অনুষ্ঠানের। তাতে দুই প্রার্থী হয় উপস্থিত থাকেননি, নয় অব্যবহিত আগের অনুষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানোর ভরসাই পায়নি এই সংগঠনগুলো।
কেন এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চান না সদ্য সাবেক মেয়র মনজুর? অনেকে ঠাট্টা করে বলেন, তিনি ‘অ-মাইক’ মানুষ, মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে স্বস্তিবোধ করেন না। অনেকে বলেন, তাঁকে পেয়ে বসেছে ‘জলাতঙ্ক’ রোগে। গত নির্বাচনে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গতবার মেয়র নির্বাচনের মাত্র দিন দুয়েক আগে প্রবল বৃষ্টিপাতে অর্ধেক শহর ডুবে গিয়েছিল। সেই জলাবদ্ধতাই আগের মেয়াদের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভরাডুবির অন্যতম কারণ মনে করেন অনেকে। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে মনজুর গত পাঁচ বছরে জলাবদ্ধতা সমস্যার কোনো সমাধান তো করতে পারেনইনি, উপরন্তু এ সমস্যা আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সদ্য সাবেক মেয়র হিসেবে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা, স্বাস্থ্যসেবার নিম্নমুখী মান ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন, এই আশঙ্কায় হয়তো মনজুর আলম মুখোমুখি অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে চাননি। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? যে প্রশ্নগুলো ভোটারদের মনে জেগেছে তার উত্তর না পেলে কি তাঁরা সন্তুষ্টচিত্তে যেতে পারবেন ভোটকেন্দ্রে? বরং ভোটারদের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজের সীমাবদ্ধতার কারণগুলো তুলে ধরলে ভালো করতেন বলে মনে করি আমরা। তা ছাড়া, তাঁর মেয়াদে কোনো সাফল্যই নেই, এ কথা নিশ্চয় মনে করেন না তিনি। সিটি করপোরেশনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার সাফল্য বা দুর্নীতির বড় কোনো অভিযোগ যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠেনি, এই কথাগুলোই বা সর্বসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন না কেন তিনি?
অন্যদিকে আ জ ম নাছির সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নবীন প্রার্থী, আগের মেয়াদের কোনো ব্যর্থতার দায়ই নিতে হচ্ছে না তাঁকে। তিনিই বা কেন মনজুরের অনুপস্থিতির অজুহাত তুলে মতবিনিময়ের অনুষ্ঠানগুলোতে গেলেন না, বোধগম্য নয়। তিনি বরং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুপস্থিতিকে জবাবদিহির অনীহা বলে প্রতিষ্ঠিত করে তাঁর (মনজুরের) ব্যর্থতার দিকগুলো শনাক্ত করে নিজে কীভাবে সেই কাজে সফল হতে চান, তার একটি রূপরেখা তুলে ধরতে পারতেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজের সাফল্যের কথাও শোনাতে পারতেন তরুণদের। অবশ্য সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল ও সংঘর্ষ, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হয়তো হতে হতো তাঁকে। এসব প্রশ্ন নিশ্চয় বিব্রতকর। কিন্তু এড়িয়ে না গিয়ে এর মুখোমুখি হলে এবং সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারলে তাঁর নেতৃত্বের অন্য একটি মাত্রাও প্রকাশিত হতো।
মনে রাখা দরকার, এ নগরের প্রায় ১৯ লাখ ভোটারের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা যেকোনো প্রার্থীর পক্ষেই অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের মতবিনিময়ের আয়োজনগুলোতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ নিলে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে সে বক্তব্য পৌঁছে যেত অনেক বেশিসংখ্যক ভোটারের কাছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পেরেছেন, নিজেদের অহেতুক ভীতি, অনীহা বা ইগোর কারণে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন চট্টগ্রামের দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী: কবি, লেখক ও সাংবাদিক।
bishwabd@yahoo.com
এ কথা সত্য, দম ফেলার ফুরসত নেই এখন প্রার্থীদের। কিন্তু এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলে তা-ও তো একধরনের প্রচারই। এত দ্রুত এত মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য এর কোনো ভালো বিকল্প হতেই পারে না। তবু কেন তাঁরা এলেন না? কেন বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিলেন না?
সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যৌথভাবে ১৯ এপ্রিল আয়োজন করেছিল ‘জনগণের মুখোমুখি মেয়র প্রার্থী’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু তাতে উপস্থিত হননি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী। এতে পুরো অনুষ্ঠানটির উদ্দেশ্য যে কার্যত ব্যর্থ হলো, তা বলা বাহুল্য। এ অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সনাকের সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘যেসব প্রার্থী নির্বাচনের আগেই জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পান, তাঁরা মেয়র হলে পরিস্থিতি কী হবে, এখনই বোঝা যায়।’
এ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আ জ ম নাছির অনুষ্ঠানে আসতে রাজি ছিলেন, কিন্তু তাঁর শর্ত ছিল মনজুর আলম সাহেব উপস্থিত থাকলেই কেবল তিনি উপস্থিত থাকবেন। তাঁর এই শর্তকে একেবারে ভিত্তিহীন বলা যাবে না, কারণ এর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চট্টগ্রামে এ ধরনের যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তাতে নাছির উপস্থিত থাকলেও আসেননি মনজুর। এ ধরনের অনুষ্ঠানে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন বা বাহাস না হলে অনুষ্ঠান নীরস হয়ে পড়ে তো বটেই, উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের কাছেও তা একতরফা ও নিরর্থক হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘তারুণ্যের ভাবনায় চট্টগ্রাম’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। যথারীতি এ অনুষ্ঠানেও আসেননি দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী। গত ১০ বছরে এই নগরে ভোটার বেড়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার। অর্থাৎ এই ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৮ এর মধ্যে। এই বিরাট অঙ্কের ভোটারদের ভাবনা সম্পর্কে আগ্রহী হওয়া বা তাঁদের কৌতূহল নিবৃত্ত করার ইচ্ছা বা উৎসাহ দুই মেয়র প্রার্থীর কেন যে হলো না, সেটা ভেবে বিস্মিত হই। এ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস জানিয়েছেন, কথা দিয়েও অনুষ্ঠানে আসেননি মনজুর আলম। শেষ মুহূর্তে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন মনজুরের অপারগতার কথা। এখানেও নাছিরের শর্ত ছিল মনজুরের অনুপস্থিতিতে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
সনাক, সুজন, ইউএনডিপি ছাড়া আরও অন্তত পাঁচ-সাতটি সংগঠন আয়োজন করেছিল মতবিনিময় অনুষ্ঠানের। তাতে দুই প্রার্থী হয় উপস্থিত থাকেননি, নয় অব্যবহিত আগের অনুষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানোর ভরসাই পায়নি এই সংগঠনগুলো।
কেন এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চান না সদ্য সাবেক মেয়র মনজুর? অনেকে ঠাট্টা করে বলেন, তিনি ‘অ-মাইক’ মানুষ, মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে স্বস্তিবোধ করেন না। অনেকে বলেন, তাঁকে পেয়ে বসেছে ‘জলাতঙ্ক’ রোগে। গত নির্বাচনে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গতবার মেয়র নির্বাচনের মাত্র দিন দুয়েক আগে প্রবল বৃষ্টিপাতে অর্ধেক শহর ডুবে গিয়েছিল। সেই জলাবদ্ধতাই আগের মেয়াদের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভরাডুবির অন্যতম কারণ মনে করেন অনেকে। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে মনজুর গত পাঁচ বছরে জলাবদ্ধতা সমস্যার কোনো সমাধান তো করতে পারেনইনি, উপরন্তু এ সমস্যা আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সদ্য সাবেক মেয়র হিসেবে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা, স্বাস্থ্যসেবার নিম্নমুখী মান ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন, এই আশঙ্কায় হয়তো মনজুর আলম মুখোমুখি অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে চাননি। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? যে প্রশ্নগুলো ভোটারদের মনে জেগেছে তার উত্তর না পেলে কি তাঁরা সন্তুষ্টচিত্তে যেতে পারবেন ভোটকেন্দ্রে? বরং ভোটারদের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজের সীমাবদ্ধতার কারণগুলো তুলে ধরলে ভালো করতেন বলে মনে করি আমরা। তা ছাড়া, তাঁর মেয়াদে কোনো সাফল্যই নেই, এ কথা নিশ্চয় মনে করেন না তিনি। সিটি করপোরেশনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার সাফল্য বা দুর্নীতির বড় কোনো অভিযোগ যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠেনি, এই কথাগুলোই বা সর্বসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন না কেন তিনি?
অন্যদিকে আ জ ম নাছির সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নবীন প্রার্থী, আগের মেয়াদের কোনো ব্যর্থতার দায়ই নিতে হচ্ছে না তাঁকে। তিনিই বা কেন মনজুরের অনুপস্থিতির অজুহাত তুলে মতবিনিময়ের অনুষ্ঠানগুলোতে গেলেন না, বোধগম্য নয়। তিনি বরং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুপস্থিতিকে জবাবদিহির অনীহা বলে প্রতিষ্ঠিত করে তাঁর (মনজুরের) ব্যর্থতার দিকগুলো শনাক্ত করে নিজে কীভাবে সেই কাজে সফল হতে চান, তার একটি রূপরেখা তুলে ধরতে পারতেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজের সাফল্যের কথাও শোনাতে পারতেন তরুণদের। অবশ্য সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল ও সংঘর্ষ, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হয়তো হতে হতো তাঁকে। এসব প্রশ্ন নিশ্চয় বিব্রতকর। কিন্তু এড়িয়ে না গিয়ে এর মুখোমুখি হলে এবং সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারলে তাঁর নেতৃত্বের অন্য একটি মাত্রাও প্রকাশিত হতো।
মনে রাখা দরকার, এ নগরের প্রায় ১৯ লাখ ভোটারের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা যেকোনো প্রার্থীর পক্ষেই অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের মতবিনিময়ের আয়োজনগুলোতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ নিলে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে সে বক্তব্য পৌঁছে যেত অনেক বেশিসংখ্যক ভোটারের কাছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পেরেছেন, নিজেদের অহেতুক ভীতি, অনীহা বা ইগোর কারণে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন চট্টগ্রামের দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী: কবি, লেখক ও সাংবাদিক।
bishwabd@yahoo.com
No comments