শেষ মুহূর্তে মরিয়া ঢাকা উত্তর দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীরা
ঢাকা
সিটি কর্পোরেশনের দুই অংশের নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন আজ। আর মাত্র
একদিন বাকি ভোটের। শেষ মুহূর্তের প্রচার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেয়র
প্রার্থীরা। ফুসরত নেই একটুও। তারা শহরের সব জায়গায় একবার করে হলেও যেতে
চান। যে কারণে যাওয়া হয়নি এমন জায়গাগুলো কভার করতে ছুটছেন আর ছুটছেন। এমন
অবস্থায় শনিবার প্রার্থীরা দুটি সংবাদপত্র আর একটি বেসরকারি টেলিভিশন
আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেন। শেষদিকে এসে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন, তাদের সেনাবাহিনীর
প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিএনপিসহ অন্যান্য দল সমর্থিত প্রার্থীরা সুষ্ঠু
নির্বাচন নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করছেন। তারা বলেছেন, সেনাবাহিনী না নামানো হলে
এবং তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না দেয়া হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
শনিবারের বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারের উল্লেখযোগ্য অংশ নিচে তুলে ধরা হল-
সকালে সভা-সেমিনার, বিকালে গণমিছিল খোকনের : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন সকালে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও বিকালে গণমিছিলের মধ্য দিয়ে প্রচারের ১৯তম দিন শেষে করেছেন। শনিবার সকালে সাঈদ খোকন ছিলেন পৃথক দুটি জাতীয় দৈনিক আয়োজিত সেমিনারে। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৫টায় পুরান ঢাকার নবাবপুর রোড থেকে ওয়ারী-সূত্রাপুর থানার ৩৮, ৩৯, ৪১ ও ৪২নং ওয়ার্ডে মিনি ট্রাকে উঠে গণমিছিল করেন। গণমিছিলের সামনে ও পেছনে শতাধিক হোন্ডা, সাউন্ড বক্স-সজ্জিত ৬টি মিনি ট্রাক, দুটি করে মাইকসহ ৪টি রিকশা, ৩টি ব্যান্ড পার্টি ও ১৮-২০টি হ্যান্ড-মাইক ছিল তার এ মিছিলে। মিছিলে অংশ নেয়া মানুষের গায়ে শোভা পেয়েছে প্রার্থীর ছবি ও প্রতীকসংবলিত ক্যাপ ও গেঞ্জি। তিন সহস্রাধিক জনতার প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ গণমিছিলটি নবাবপুর রোড হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়, ধোলাই খাল, টিপু সুলতান রোড, র্যাঙ্কিংস্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিটের মধ্য দিয়ে রাজধানী মার্কেটের সামনে হয়ে টিকাটুলির কেএম দাস, অভয় দাস লেন শেষ করে হাটখোলা এসে শেষ হয়। মিছিলে বিভিন্ন মাইকে রেকর্ডিং করা কণ্ঠশিল্পী মমতাজের গান শোনা যায়। মাইকের আওয়াজ ও গানের সুরে উৎসুক জনতা রাস্তায় দুধারে ভিড় জমায়। গণমিছিল ও উৎসুক জনতার ভিড়ে যানজটের এ নগরীতে ছুটির দিনেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই গণমিছিলের মাঝখানে একটি মিনি ট্রাকে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে সাধারণ জনতাকে শুভেচ্ছা জানান মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনা সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। সাঈদ খোকন বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ইলিশ প্রতীকে ভোট দিন।
গণমিছিলে নেতাদের মধ্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সুজিত রায় নন্দি, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, স্থানীয় নেতা ময়নুল হক মঞ্জু, আশিকুর রহমান চৌধুরী, সালাউদ্দিন বাদল, সারোয়ার হাসান আলো, রাশিদা পারভীন মনি, লাভলী চৌধুরী প্রমুখ। পরে সাঈদ খোকন লালবাগের ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০নং ওয়ার্ডে প্রচার চালান।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষের নগর মেয়র নির্বাচিত করার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৫-এর মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ মাছ মার্কায় জনমত তৈরি করতে প্রচার চালিয়েছে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। শনিবার বেলা ১১টার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সচেতন নাগরিকদের অংশ হিসেবে অগ্নি-সন্ত্রাসীদের ব্যালটের মাধ্যমে না বলুন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে দোয়েলচত্বর থেকে বোয়াফ এ প্রচার শুরু করে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীও সংশয়ে আছেন -আফরোজা আব্বাস : পরিস্থিতি সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রাথী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিন্তু সরকার যেভাবে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করছে, পোলিং এজেন্টকে হুমকি দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন আচরণ করে সরকার ভালো করছে না। আমরা ভোট ডাকাতি করতেও চাই না, আর কাউকে ভোট ডাকাতি করার সুযোগও দিতে চাই না।
শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ী ও মীর হাজীরবাগ এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, প্রশাসন ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা আমাদের ওপর যে আচরণ করছে তাতে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন হলে অবশ্যই আমাদের বিজয় হবে। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে শুধু আমরাই নই, নগরীর সাধারণ ভোটাররাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে নগরবাসী মনে করেন না। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন নিজের এলাকা পুরান ঢাকাতেও মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রতীক মগর জোয়ার দেখছেন আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় মির্জা আব্বাস বিপুল পরিমাণ ভোট পাবে এবং শতভাগ সফল হবে। পুরান ঢাকাতে আমি মগের জোয়ার দেখেছি। কেউ পুরান ঢাকার প্রার্থী পরিচয় দিয়ে এ এলাকার ভোট নিতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন আফরোজা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রর্থী সাঈদ খোকনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মির্জা আব্বাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা। অন্যদিকে সরকারদলীয় যে প্রার্থী তিনি উত্তরের বাসিন্দা। নির্বাচিত হলেও জনগণ তাকে পাশে পাবে না। তাকে পেতে হলে মানুষকে উত্তরে যেতে হবে। অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বসবাস সবকিছুই দক্ষিণে। তিনি নির্বাচিত হলে জনগণ তাকে কাছে পাবে। মানুষ সেটা বুঝতে পেরেছে। মির্জা আব্বাস- এমপি, মন্ত্রী এমনকি মেয়রও ছিলেন।
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে আফরোজা আব্বাস ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান এবং আব্বাসের জন্য মগ মার্কায় ভোট চান। সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরীন খান, সাইফুল ইসলাম পটু, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. মুজিব, কাজী আমির খসরু, নিগাদ সীমা, ডা. মো. আ ন ম ইউসুফ, আ ন ম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায়ী -এমাজউদ্দীন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, এ নির্বাচন যদি সন্ত্রাসকবলিত হয়, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। সরকার দায়-দায়িত্ব না নিয়ে কাজ করার কারণে যদি সেটা হয়, তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। সরকারের অত্যন্ত অনুগত নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে। শনিবার রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী মীর হাজীরবাগ এলাকায় ঢাকা দক্ষিণের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এমাজউদ্দীন আহমদ অভিযোগ করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর তিন দিন হামলা হয়েছে। তিনি যখন নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছেন, তখন কমিশন তাকে নোটিশ করেছে। এতে প্রমাণ হয়, কমিশন সরকারের পক্ষপাতিত্ব করছে।
সততা ও অভিজ্ঞতা দেখে ভোট দিন -আনিসুল হক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হক শনিবার তেজগাঁও কলেজ থেকে প্রচার শুরু করেন। তেজগাঁও কলেজ অডিটোরিয়ামে এক সুধী সমাবেশে অংশ নেন তিনি। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান। আনিস বলেন, খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে কারও পক্ষে প্রচার চালানোর নিয়ম নেই। আজ নির্বাচিত হলে, কালই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই মেয়রদের হাতে। তবে আলো নেভানোর অনেক রকম ব্যবস্থা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। এটা বন্ধ করার জন্য প্রথমেই ই-টেন্ডারিং ও সিটি কর্পোরেশনের সব সেবাকে পর্যায়ক্রমে ই-সেবার আওতায় আনার ব্যবস্থা করব। এরপর তিনি ফার্মগেট, তেজকুনিপাড়া তেজতুরি বাজারের বিভিন্ন সড়কে লিফলেট বিলি করেন ও স্থানীয়দের কাছে ভোট চান। পরে তেজগাঁওয়ের আওলাদ হোসেন মার্কেটের উল্টোদিকে এক পথসভায় তিনি বলেন, সংগঠন চালানোর অতীত অভিজ্ঞতা আছে আমার। আমি জানি কীভাবে কাজ করতে হয়। তাই আমি মনে করি, আমাকে নির্বাচিত করলে অন্যদের চাইতে বেশি কাজ করতে পারব। একজন সৎ ও অভিজ্ঞ মেয়র নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে সততা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ভোটারদের মেয়র নির্বাচন করার আহ্বান জানান তিনি।
আনিসুল হক বলেন, এ নির্বাচন কোনো জাতীয় নির্বাচন নয়। এটা কোনো আদর্শের নির্বাচন নয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটবে না। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসী তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে মাত্র। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সমন্বয়ক সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এমপি, শাহজাহান কামাল এমপিসহ দলীয় নেতারা। এরপর তিনি কচুক্ষেত বাজার, কাফরুল, দামালকোট হয়ে ভাসানটেকে জনসংযোগ শেষে একটি পথসভায় যোগ দেন। এ সময় পথে শত শত মানুষ রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীককে সমর্থন জানান। এরপর তিনি মাটিকাটা, মানিকদি হয়ে মিরপুরের পল্লবীর থানার সামনে হারুন মোল্লা মাঠে একটি কনসার্টে যোগ দেন। ভোট ফর সমাধানযাত্রা, ভোট ফর আনিসুল হক শীর্ষক এ কনসার্টে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চান শিল্পীরা। এখানে গান করেন শিল্পী মমতাজ, পারভেজ, কিশোরসহ অন্য শিল্পীরা। এর আগে সকালে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্র“প লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত কেমন মেয়র হব শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন।
আনিসুল হকের পক্ষে পোশাক শিল্পমালিক শ্রমিকরা : শনিবার আনিসুল হকের পক্ষে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সির নেতৃত্বে মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রচার চালিয়েছেন পোশাক শিল্প পরিবারের মালিক-শ্রমিকরা। এ সময় বিজিএমইএর বর্তমান ও সাবেক নেতার এবং বিকেএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশংকা তাবিথ আউয়ালেরও : দক্ষিণের মতো উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা- তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। শনিবার সকালে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের বস্তি ও কলোনিতে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের শংকা আছে। সর্বশেষ সেনা মোতায়েন নিয়ে যে টালবাহানা করা হল, তাতে আমাদের শংকা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় বাসে করে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ-সংলগ্ন ৮ নম্বর বস্তিতে যান তাবিথ আউয়াল। তিনি বস্তির ঘরে ঘরে গিয়ে বাস মার্কায় ভোট চান নতুন প্রজন্ম-নতুন ঢাকা গড়ার এ মেয়র প্রার্থী। এরপর সেখান থেকে তাবিথ রেললাইন-সংলগ্ন সেলিমের বস্তিসহ আশপাশের বিভিন্ন বস্তি এলাকা ঘুরে ঘুরে ভোট ও দোয়া চান।
গণসংযোগের একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা জনগণের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। জনগণ আমাদের চাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের মাঠে লড়াই চালিয়ে যাব। নির্বাচিত না হলে ফল মেনে নেবেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফল যাই হোক, মেনে নেব। এসব এলাকায় গণসংযোগ শেষে তাবিথ আউয়াল মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে আয়োজিত দুটি নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সকাল ১০টায় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং বেলা ১১টায় তিনি দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। মতমিনিময় শেষে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, পূর্ব খিলগাঁও, পশ্চিম খিলগাঁও, হাজীপাড়া, মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এবং ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেট, আনন্দ সিনেমা হল এলাকা, ফার্মভিউ সুপার মার্কেট ও জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। এসব গণসংযোগে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনুর পাশা, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিকালে গণসংযোগ কর্মসূচির বাইরে ব্যক্তিগতভাবে তেজগাঁও ক্যাথলিক চার্জ পরিদর্শন করেন তাবিথ আউয়াল।
হুমকি-ধমকি, টাকার প্রচার উৎসব ও বিধি লংঘনে ইসি ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে -প্রিন্স-রতন : ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধনী প্রার্থীদের টাকার প্রচার উৎসব, হুমকি-ধমকি ও নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। শনিবার ঢাকা উত্তরে হাতি মার্কার মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী ও দক্ষিণের টেবিল মার্কার মেয়র প্রার্থী বজলুর রশীদ ফিরোজ কমিটির সমন্বয়ক সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকাবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট উৎসবে অংশ নিতে পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে দেয়ালে পোস্টার লাগানোসহ নির্ধারিত সাইজের বড় মার্কার প্রচার, পত্রিকা, অনলাইন মাধ্যম, টিভিতে প্রচারের ব্যয় কেউ দেখছে না। বেসরকারি পর্যবেক্ষণে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, অনেক প্রার্থী ইতিমধ্যে নির্ধারিত ব্যয়সীমা অতিক্রম করেছেন। আচরণবিধি লংঘন করে মসজিদ-মন্দিরে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, আচরণবিধি লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
আবদুল্লাহ আল ক্বাফীর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বামপন্থী নেতারা : আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি-বাসদসহ বাম-প্রগতিশীলদের সমর্থিত সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলনের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী (কাফি রতন) নির্বাচনী গণসংযোগকালে বামপন্থী নেতারা দেশ ও মানুষ বাঁচাতে দ্বিদলীয় ধারার বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে ফার্মগেট থেকে বামপন্থী নেতারা আবদুল্লাহ আল ক্বাফীকে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর আগারগাঁও, ইন্দিরা রোড, মণিপুরি পাড়ায় গণসংযোগ চালানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ, হাসান তারিক চৌধুরী, শ্রমিক নেতা আসলাম খান, যুবনেতা হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, যুবনেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ। গণসংযোগকালে নেতারা বলেন, সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির মেয়রদের আপনারা দেখেছেন, জনগণের ভোট নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেন। সিটি কর্পোরেশনকে তারা দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার আখড়ায় পরিণত করেন। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নীতি ও আদর্শের প্রার্থীকে রায় দিতে হবে। তার জন্য ক্বাফীকে নির্বাচিত করতে হবে।
নগর সরকার গঠনে টেলিস্কোপে ভোট দেয়ার আহ্বান জোনায়েদ সাকীর : শনিবার ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী জোনায়েদ সাকী সকালে থেকে গুলশান-১ ও ২, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, আদাবর ঘুরে বাউনিয়া বাঁধে গিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা, শিল্পী অমল আকাশ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবুসহ প্রমুখ।
গণসংযোগকালে তিনি বলেন, ঢাকা নগরী অসংখ্য সমস্যার এক গহ্বরে পরিণত হয়েছে। সমস্যার জন্ম দিয়েছে দুর্নীতি আর অযোগ্য ব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতাহীন প্রশাসন। ঢাকাবাসীকে এবার পরিবর্তনের জন্য রায় দিতে হবে। এ সময় জোনায়েদ সাকী অভিযোগ করেন, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় টেলিস্কোপ মার্কার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে সরকারি দলের কর্মীরা। বহু স্থানে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। জনগণের জাগরণ টের পেয়ে সরকার নির্বাচনকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ঢাকাবাসীকে টেলিস্কোপ মার্কার পক্ষে রায় প্রদানের আহ্বান জানান সাকী।
দলীয় প্রভাবমুক্ত সিটি কর্পোরেশনের প্রতিশ্রুতিতে নাদের চৌধুরীর গণসংযোগ : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অভিনেতা নাদের চৌধুরী শনিবার সকালে আগারগাঁও, শেওরাপাড়া, দুপুরে মনিপুরি স্কুল ও বিকালে বড় মগবাজারের শাহ সাহেব বাড়ী মাজার, বড় মগবাজার, মধুবাগ বাজার, মধুবাগ কাঁচাবাজার, চেয়ারম্যান গলি, নয়া টলি, আমবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এসব গণসংযোগে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর জাসদ সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতার, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার এমপি, ঢাকা মহানগর জাসদের যুগ্ম সন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আখতার, সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, দফতর সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, জাতীয় নারী জোটের কেন্দ্রীয় নেত্রী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী, সৈয়দা শামীমা সুলতানা হ্যাপীসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী-সংগঠক অংশগ্রহণ করেন।
প্রচারণাকালে নাদের চৌধুরী বলেন, নগরের দুর্নীতি-চাঁদাবাজি কমিয়ে ন্যায্য আয়ের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি সম্ভব। শহরের কর প্রদানে ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, আমলা ও অন্য পেশাজীবীদের কর প্রদানে উৎসাহিত করা এবং কর আদায় করার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা জাপার নেতা অরুনের নেতৃত্বে মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলের পক্ষে গণসংযোগ : শনিবার দুপরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলের পক্ষে চরকা প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ করেন মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলের স্ত্রী ও ঢাকা মহনগর (উ.) জাতীয় ছাত্র সমাজের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও মালয়েশিয়া ছাত্র সমাজের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অরুনসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড শাখার নেতারা নিয়ে গণসংযোগ করেন।
শনিবারের বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারের উল্লেখযোগ্য অংশ নিচে তুলে ধরা হল-
সকালে সভা-সেমিনার, বিকালে গণমিছিল খোকনের : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন সকালে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও বিকালে গণমিছিলের মধ্য দিয়ে প্রচারের ১৯তম দিন শেষে করেছেন। শনিবার সকালে সাঈদ খোকন ছিলেন পৃথক দুটি জাতীয় দৈনিক আয়োজিত সেমিনারে। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৫টায় পুরান ঢাকার নবাবপুর রোড থেকে ওয়ারী-সূত্রাপুর থানার ৩৮, ৩৯, ৪১ ও ৪২নং ওয়ার্ডে মিনি ট্রাকে উঠে গণমিছিল করেন। গণমিছিলের সামনে ও পেছনে শতাধিক হোন্ডা, সাউন্ড বক্স-সজ্জিত ৬টি মিনি ট্রাক, দুটি করে মাইকসহ ৪টি রিকশা, ৩টি ব্যান্ড পার্টি ও ১৮-২০টি হ্যান্ড-মাইক ছিল তার এ মিছিলে। মিছিলে অংশ নেয়া মানুষের গায়ে শোভা পেয়েছে প্রার্থীর ছবি ও প্রতীকসংবলিত ক্যাপ ও গেঞ্জি। তিন সহস্রাধিক জনতার প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ গণমিছিলটি নবাবপুর রোড হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়, ধোলাই খাল, টিপু সুলতান রোড, র্যাঙ্কিংস্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিটের মধ্য দিয়ে রাজধানী মার্কেটের সামনে হয়ে টিকাটুলির কেএম দাস, অভয় দাস লেন শেষ করে হাটখোলা এসে শেষ হয়। মিছিলে বিভিন্ন মাইকে রেকর্ডিং করা কণ্ঠশিল্পী মমতাজের গান শোনা যায়। মাইকের আওয়াজ ও গানের সুরে উৎসুক জনতা রাস্তায় দুধারে ভিড় জমায়। গণমিছিল ও উৎসুক জনতার ভিড়ে যানজটের এ নগরীতে ছুটির দিনেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই গণমিছিলের মাঝখানে একটি মিনি ট্রাকে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে সাধারণ জনতাকে শুভেচ্ছা জানান মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনা সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। সাঈদ খোকন বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ইলিশ প্রতীকে ভোট দিন।
গণমিছিলে নেতাদের মধ্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সুজিত রায় নন্দি, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, স্থানীয় নেতা ময়নুল হক মঞ্জু, আশিকুর রহমান চৌধুরী, সালাউদ্দিন বাদল, সারোয়ার হাসান আলো, রাশিদা পারভীন মনি, লাভলী চৌধুরী প্রমুখ। পরে সাঈদ খোকন লালবাগের ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০নং ওয়ার্ডে প্রচার চালান।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষের নগর মেয়র নির্বাচিত করার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৫-এর মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ মাছ মার্কায় জনমত তৈরি করতে প্রচার চালিয়েছে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। শনিবার বেলা ১১টার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সচেতন নাগরিকদের অংশ হিসেবে অগ্নি-সন্ত্রাসীদের ব্যালটের মাধ্যমে না বলুন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে দোয়েলচত্বর থেকে বোয়াফ এ প্রচার শুরু করে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীও সংশয়ে আছেন -আফরোজা আব্বাস : পরিস্থিতি সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রাথী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিন্তু সরকার যেভাবে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করছে, পোলিং এজেন্টকে হুমকি দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন আচরণ করে সরকার ভালো করছে না। আমরা ভোট ডাকাতি করতেও চাই না, আর কাউকে ভোট ডাকাতি করার সুযোগও দিতে চাই না।
শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ী ও মীর হাজীরবাগ এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, প্রশাসন ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা আমাদের ওপর যে আচরণ করছে তাতে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন হলে অবশ্যই আমাদের বিজয় হবে। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে শুধু আমরাই নই, নগরীর সাধারণ ভোটাররাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে নগরবাসী মনে করেন না। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন নিজের এলাকা পুরান ঢাকাতেও মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রতীক মগর জোয়ার দেখছেন আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় মির্জা আব্বাস বিপুল পরিমাণ ভোট পাবে এবং শতভাগ সফল হবে। পুরান ঢাকাতে আমি মগের জোয়ার দেখেছি। কেউ পুরান ঢাকার প্রার্থী পরিচয় দিয়ে এ এলাকার ভোট নিতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন আফরোজা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রর্থী সাঈদ খোকনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মির্জা আব্বাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা। অন্যদিকে সরকারদলীয় যে প্রার্থী তিনি উত্তরের বাসিন্দা। নির্বাচিত হলেও জনগণ তাকে পাশে পাবে না। তাকে পেতে হলে মানুষকে উত্তরে যেতে হবে। অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বসবাস সবকিছুই দক্ষিণে। তিনি নির্বাচিত হলে জনগণ তাকে কাছে পাবে। মানুষ সেটা বুঝতে পেরেছে। মির্জা আব্বাস- এমপি, মন্ত্রী এমনকি মেয়রও ছিলেন।
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে আফরোজা আব্বাস ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান এবং আব্বাসের জন্য মগ মার্কায় ভোট চান। সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরীন খান, সাইফুল ইসলাম পটু, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. মুজিব, কাজী আমির খসরু, নিগাদ সীমা, ডা. মো. আ ন ম ইউসুফ, আ ন ম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায়ী -এমাজউদ্দীন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, এ নির্বাচন যদি সন্ত্রাসকবলিত হয়, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। সরকার দায়-দায়িত্ব না নিয়ে কাজ করার কারণে যদি সেটা হয়, তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। সরকারের অত্যন্ত অনুগত নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে। শনিবার রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী মীর হাজীরবাগ এলাকায় ঢাকা দক্ষিণের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এমাজউদ্দীন আহমদ অভিযোগ করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর তিন দিন হামলা হয়েছে। তিনি যখন নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছেন, তখন কমিশন তাকে নোটিশ করেছে। এতে প্রমাণ হয়, কমিশন সরকারের পক্ষপাতিত্ব করছে।
সততা ও অভিজ্ঞতা দেখে ভোট দিন -আনিসুল হক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হক শনিবার তেজগাঁও কলেজ থেকে প্রচার শুরু করেন। তেজগাঁও কলেজ অডিটোরিয়ামে এক সুধী সমাবেশে অংশ নেন তিনি। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান। আনিস বলেন, খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে কারও পক্ষে প্রচার চালানোর নিয়ম নেই। আজ নির্বাচিত হলে, কালই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই মেয়রদের হাতে। তবে আলো নেভানোর অনেক রকম ব্যবস্থা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। এটা বন্ধ করার জন্য প্রথমেই ই-টেন্ডারিং ও সিটি কর্পোরেশনের সব সেবাকে পর্যায়ক্রমে ই-সেবার আওতায় আনার ব্যবস্থা করব। এরপর তিনি ফার্মগেট, তেজকুনিপাড়া তেজতুরি বাজারের বিভিন্ন সড়কে লিফলেট বিলি করেন ও স্থানীয়দের কাছে ভোট চান। পরে তেজগাঁওয়ের আওলাদ হোসেন মার্কেটের উল্টোদিকে এক পথসভায় তিনি বলেন, সংগঠন চালানোর অতীত অভিজ্ঞতা আছে আমার। আমি জানি কীভাবে কাজ করতে হয়। তাই আমি মনে করি, আমাকে নির্বাচিত করলে অন্যদের চাইতে বেশি কাজ করতে পারব। একজন সৎ ও অভিজ্ঞ মেয়র নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে সততা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ভোটারদের মেয়র নির্বাচন করার আহ্বান জানান তিনি।
আনিসুল হক বলেন, এ নির্বাচন কোনো জাতীয় নির্বাচন নয়। এটা কোনো আদর্শের নির্বাচন নয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটবে না। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসী তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে মাত্র। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সমন্বয়ক সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এমপি, শাহজাহান কামাল এমপিসহ দলীয় নেতারা। এরপর তিনি কচুক্ষেত বাজার, কাফরুল, দামালকোট হয়ে ভাসানটেকে জনসংযোগ শেষে একটি পথসভায় যোগ দেন। এ সময় পথে শত শত মানুষ রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীককে সমর্থন জানান। এরপর তিনি মাটিকাটা, মানিকদি হয়ে মিরপুরের পল্লবীর থানার সামনে হারুন মোল্লা মাঠে একটি কনসার্টে যোগ দেন। ভোট ফর সমাধানযাত্রা, ভোট ফর আনিসুল হক শীর্ষক এ কনসার্টে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চান শিল্পীরা। এখানে গান করেন শিল্পী মমতাজ, পারভেজ, কিশোরসহ অন্য শিল্পীরা। এর আগে সকালে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্র“প লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত কেমন মেয়র হব শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন।
আনিসুল হকের পক্ষে পোশাক শিল্পমালিক শ্রমিকরা : শনিবার আনিসুল হকের পক্ষে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সির নেতৃত্বে মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রচার চালিয়েছেন পোশাক শিল্প পরিবারের মালিক-শ্রমিকরা। এ সময় বিজিএমইএর বর্তমান ও সাবেক নেতার এবং বিকেএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশংকা তাবিথ আউয়ালেরও : দক্ষিণের মতো উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা- তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। শনিবার সকালে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের বস্তি ও কলোনিতে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের শংকা আছে। সর্বশেষ সেনা মোতায়েন নিয়ে যে টালবাহানা করা হল, তাতে আমাদের শংকা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় বাসে করে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ-সংলগ্ন ৮ নম্বর বস্তিতে যান তাবিথ আউয়াল। তিনি বস্তির ঘরে ঘরে গিয়ে বাস মার্কায় ভোট চান নতুন প্রজন্ম-নতুন ঢাকা গড়ার এ মেয়র প্রার্থী। এরপর সেখান থেকে তাবিথ রেললাইন-সংলগ্ন সেলিমের বস্তিসহ আশপাশের বিভিন্ন বস্তি এলাকা ঘুরে ঘুরে ভোট ও দোয়া চান।
গণসংযোগের একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা জনগণের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। জনগণ আমাদের চাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের মাঠে লড়াই চালিয়ে যাব। নির্বাচিত না হলে ফল মেনে নেবেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফল যাই হোক, মেনে নেব। এসব এলাকায় গণসংযোগ শেষে তাবিথ আউয়াল মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে আয়োজিত দুটি নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সকাল ১০টায় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং বেলা ১১টায় তিনি দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। মতমিনিময় শেষে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, পূর্ব খিলগাঁও, পশ্চিম খিলগাঁও, হাজীপাড়া, মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এবং ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেট, আনন্দ সিনেমা হল এলাকা, ফার্মভিউ সুপার মার্কেট ও জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। এসব গণসংযোগে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনুর পাশা, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিকালে গণসংযোগ কর্মসূচির বাইরে ব্যক্তিগতভাবে তেজগাঁও ক্যাথলিক চার্জ পরিদর্শন করেন তাবিথ আউয়াল।
হুমকি-ধমকি, টাকার প্রচার উৎসব ও বিধি লংঘনে ইসি ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে -প্রিন্স-রতন : ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধনী প্রার্থীদের টাকার প্রচার উৎসব, হুমকি-ধমকি ও নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। শনিবার ঢাকা উত্তরে হাতি মার্কার মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী ও দক্ষিণের টেবিল মার্কার মেয়র প্রার্থী বজলুর রশীদ ফিরোজ কমিটির সমন্বয়ক সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকাবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট উৎসবে অংশ নিতে পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে দেয়ালে পোস্টার লাগানোসহ নির্ধারিত সাইজের বড় মার্কার প্রচার, পত্রিকা, অনলাইন মাধ্যম, টিভিতে প্রচারের ব্যয় কেউ দেখছে না। বেসরকারি পর্যবেক্ষণে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, অনেক প্রার্থী ইতিমধ্যে নির্ধারিত ব্যয়সীমা অতিক্রম করেছেন। আচরণবিধি লংঘন করে মসজিদ-মন্দিরে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, আচরণবিধি লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
আবদুল্লাহ আল ক্বাফীর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বামপন্থী নেতারা : আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি-বাসদসহ বাম-প্রগতিশীলদের সমর্থিত সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলনের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী (কাফি রতন) নির্বাচনী গণসংযোগকালে বামপন্থী নেতারা দেশ ও মানুষ বাঁচাতে দ্বিদলীয় ধারার বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে ফার্মগেট থেকে বামপন্থী নেতারা আবদুল্লাহ আল ক্বাফীকে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর আগারগাঁও, ইন্দিরা রোড, মণিপুরি পাড়ায় গণসংযোগ চালানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ, হাসান তারিক চৌধুরী, শ্রমিক নেতা আসলাম খান, যুবনেতা হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, যুবনেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ। গণসংযোগকালে নেতারা বলেন, সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির মেয়রদের আপনারা দেখেছেন, জনগণের ভোট নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেন। সিটি কর্পোরেশনকে তারা দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার আখড়ায় পরিণত করেন। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নীতি ও আদর্শের প্রার্থীকে রায় দিতে হবে। তার জন্য ক্বাফীকে নির্বাচিত করতে হবে।
নগর সরকার গঠনে টেলিস্কোপে ভোট দেয়ার আহ্বান জোনায়েদ সাকীর : শনিবার ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী জোনায়েদ সাকী সকালে থেকে গুলশান-১ ও ২, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, আদাবর ঘুরে বাউনিয়া বাঁধে গিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা, শিল্পী অমল আকাশ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবুসহ প্রমুখ।
গণসংযোগকালে তিনি বলেন, ঢাকা নগরী অসংখ্য সমস্যার এক গহ্বরে পরিণত হয়েছে। সমস্যার জন্ম দিয়েছে দুর্নীতি আর অযোগ্য ব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতাহীন প্রশাসন। ঢাকাবাসীকে এবার পরিবর্তনের জন্য রায় দিতে হবে। এ সময় জোনায়েদ সাকী অভিযোগ করেন, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় টেলিস্কোপ মার্কার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে সরকারি দলের কর্মীরা। বহু স্থানে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। জনগণের জাগরণ টের পেয়ে সরকার নির্বাচনকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ঢাকাবাসীকে টেলিস্কোপ মার্কার পক্ষে রায় প্রদানের আহ্বান জানান সাকী।
দলীয় প্রভাবমুক্ত সিটি কর্পোরেশনের প্রতিশ্রুতিতে নাদের চৌধুরীর গণসংযোগ : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অভিনেতা নাদের চৌধুরী শনিবার সকালে আগারগাঁও, শেওরাপাড়া, দুপুরে মনিপুরি স্কুল ও বিকালে বড় মগবাজারের শাহ সাহেব বাড়ী মাজার, বড় মগবাজার, মধুবাগ বাজার, মধুবাগ কাঁচাবাজার, চেয়ারম্যান গলি, নয়া টলি, আমবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এসব গণসংযোগে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর জাসদ সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতার, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার এমপি, ঢাকা মহানগর জাসদের যুগ্ম সন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আখতার, সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, দফতর সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, জাতীয় নারী জোটের কেন্দ্রীয় নেত্রী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী, সৈয়দা শামীমা সুলতানা হ্যাপীসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী-সংগঠক অংশগ্রহণ করেন।
প্রচারণাকালে নাদের চৌধুরী বলেন, নগরের দুর্নীতি-চাঁদাবাজি কমিয়ে ন্যায্য আয়ের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি সম্ভব। শহরের কর প্রদানে ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, আমলা ও অন্য পেশাজীবীদের কর প্রদানে উৎসাহিত করা এবং কর আদায় করার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা জাপার নেতা অরুনের নেতৃত্বে মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলের পক্ষে গণসংযোগ : শনিবার দুপরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলের পক্ষে চরকা প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ করেন মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলের স্ত্রী ও ঢাকা মহনগর (উ.) জাতীয় ছাত্র সমাজের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও মালয়েশিয়া ছাত্র সমাজের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অরুনসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড শাখার নেতারা নিয়ে গণসংযোগ করেন।
No comments