গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা-এই বর্বরতা আর নয়
মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে শরীয়তপুর জেলায় আরেকজন গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনা ভীষণ রকমের উদ্বেগজনক। গত ১০ এপ্রিল জেলার গোসাইরহাট উপজেলার ছোট কাচনা গ্রামের গৃহবধূ ছেনোরা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি।
২০ এপ্রিল একইভাবে ডামুড্যা উপজেলার ধনই গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস বেগমকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মানবতাবোধ কোন পর্যায়ে পেঁৗছলে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয় তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। শুক্রবার সমকালের পাতায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য নার্গিস বেগমকে প্রায়ই মারধর করত তার মাদকাসক্ত স্বামী। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিনিয়তই নির্যাতনে মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে কখনও মারা যান ছেনোরা বেগম, কখনও নার্গিস বেগমের মতো গৃহবধূরা। অথচ যৌতুকের কারণে নির্যাতনের স্বীকার হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে যৌতুকবিরোধী প্রতিরোধ আইন ১৯৮০, নারী নির্যাতন (নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ রয়েছে। কিন্তু এই আইনের বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে। বিয়ের পর নারীরা স্বামীর বাড়িকে এখনও আশ্রয়ের শেষ জায়গা মনে করেন। গ্রাম ও মফস্বল এলাকায় এই মনে করার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে অনেক গৃহবধূ আগ্রহী হন না। নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূ যেন সহজেই প্রতিকার পান তা নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনাকে কোনোভাবেই সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। প্রথম ঘটনায় মামলা হলেও প্রশাসন থেকে সময়োচিত পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১০ দিনের ব্যবধানে আরেক গৃহবধূকে যৌতুকের জন্য পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় ঘটনাতেও মামলা হয়েছে। শরীয়তপুরের দুটি ঘটনায় দায়ীদের বিচার করা জরুরি। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
No comments