আনুষ্ঠানিকতা ও বাস্তবতা by আদনান আরিফ সালিম
বেরিয়েছিলাম সাতসকালেই ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় নতুন বছরকে বরণ করার উৎসবকে খুব কাছে থেকে দেখতে। সুবিশাল রমনায় যেন তিল ধারণের অবস্থা নেই। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সিসিটিভি আর ডগ স্কোয়াডের বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে মোড়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বাঁশির মনমাতানো সুরলহরি আর ঢাকের বাজনায় মুখরিত পরিবেশে যখন উৎসব শুরু হয় তখন বাঙালি জাতির একজন ভাবতেই নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়েছিল। টিএসসি ও এর আশপাশেই বাউল-লালন, জারি-সারি, মুর্শেদি গানের আসর বসেছে এর মধ্যেই।
বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আকাশচুম্বী দামের কারণে অনেকটা অধরা পান্তা-ইলিশ। আবার চিরাচরিত সংস্কৃতিকে কাঁচকলা দেখিয়ে বাবা-মা যে শিশুকে শুরু থেকেই ব্রেড, অমলেট আর স্যান্ডউইচে অভ্যস্ত করেছেন তার কাছে এই পান্তা-ইলিশ আর লঙ্কা লঙ্কাকাণ্ডই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তাই দেখলাম বেশিরভাগ শিশুই পান্তার সানকির সামনে বসে আপত্তি জানাচ্ছে। আমরা যখন বাঙালি তবে কেন পুরোটাই বাঙালি হই না? একদিনের জন্য বাঙালি বাঙালি খেলা কেন?
বর্ষবরণ উৎসব সরেজমিন দেখতে একদিন আগে থেকেই ঘুরে বেরিয়েছি বর্তমান আর পুরান ঢাকার বায়ান্ন বাজার আর তিপ্পান্ন গলির নানা স্থান। প্রাচীন বর্ষবরণের রীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি বিষয় হলো হালখাতা, যা কোনো কোনো দোকানি বৈশাখের প্রথম দিন করলেও দ্বিতীয় দিনেও অনেক হিন্দু ব্যবসায়ী হালখাতা উৎসব পালন করবেন বলে জানান। পুরান ঢাকার দোকানিরা পুরো বছরের বাকির খাতা সমাপ্ত করার জন্য পহেলা বৈশাখের দিন অনেকটা ঐতিহ্যগতভাবেই যেখানে এবার কিছুটা ভাটা পড়েছে। একুশ শতকের এই দিনে স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের ছোঁয়া পাওয়া গ্রামগুলোর বাজার, বন্দর ও গঞ্জে নববর্ষে হালখাতার সেই হিড়িক পড়ে কি-না সন্দেহ থেকেই যায়, সেখানে ঢাকা তো অনেক দূর। আগের বৈশাখী মেলার সঙ্গে ছিল মাটি ও মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। আজকের করপোরেট মেলায় তা মেলা ভার।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বসেছে বর্ণিল কনসার্ট। বটমূলের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে। কিন্তু চড়া সুরের মিউজিক আর ডিজে পার্টির স্টাইলের ড্রামস বিট কেবল খটকাই জাগায়। একটু এগিয়ে যাই কী ঘটছে দেখার জন্য। নববর্ষের প্রথম দিনে উন্মাদ যুবকদের উন্মাদনা আর একটু প্রলম্বিত করে এক কণ্ঠশিল্পী আমাদের সমাজের তুলনায় নিতান্তই বেমানান পোশাকে স্টেজে উঠে বাজেরে বাজেরে ঢোলের রিমিক্স গাইছেন। কিছুক্ষণ পরই শুরু হলো 'শীলা কি জাওয়ানি'। কীভাবে এই গান বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হতে পারে? বস্তুত পহেলা বৈশাখের আয়োজন আবহমানকাল থেকেই বাঙালির প্রাণের সঙ্গে সংযুক্ত। কিন্তু এর মূল গতিধারার সঙ্গে আমাদের ক্রমে বিচ্ছিন্নতা বৈশাখী অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যকে ম্লান করার পাশাপাশি কিছু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জমি তৈরি করে দিচ্ছে। যা আমরা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কেন যেন সমর্থন করে আসছি, নামান্তরে পথ বিচ্যুত হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি।
সংস্কৃতি ঐতিহ্যের ব্যাপারেও একটা বদ্ধমূল ধারণা থাকতে হবে। বুঝতে হবে পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় গৌরব। প্রত্যেকের উচিত একে অন্তরে ধারণ করা যেন এটি তার মূল স্রোতধারা খুঁজে পায়। সংস্কৃতির এই দেউলিয়াত্ব থেকে উত্তরণে আমাদের প্রত্যেকের বিশেষত তরুণ সমাজের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।
aurnabmaas@gmail.com
বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আকাশচুম্বী দামের কারণে অনেকটা অধরা পান্তা-ইলিশ। আবার চিরাচরিত সংস্কৃতিকে কাঁচকলা দেখিয়ে বাবা-মা যে শিশুকে শুরু থেকেই ব্রেড, অমলেট আর স্যান্ডউইচে অভ্যস্ত করেছেন তার কাছে এই পান্তা-ইলিশ আর লঙ্কা লঙ্কাকাণ্ডই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তাই দেখলাম বেশিরভাগ শিশুই পান্তার সানকির সামনে বসে আপত্তি জানাচ্ছে। আমরা যখন বাঙালি তবে কেন পুরোটাই বাঙালি হই না? একদিনের জন্য বাঙালি বাঙালি খেলা কেন?
বর্ষবরণ উৎসব সরেজমিন দেখতে একদিন আগে থেকেই ঘুরে বেরিয়েছি বর্তমান আর পুরান ঢাকার বায়ান্ন বাজার আর তিপ্পান্ন গলির নানা স্থান। প্রাচীন বর্ষবরণের রীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি বিষয় হলো হালখাতা, যা কোনো কোনো দোকানি বৈশাখের প্রথম দিন করলেও দ্বিতীয় দিনেও অনেক হিন্দু ব্যবসায়ী হালখাতা উৎসব পালন করবেন বলে জানান। পুরান ঢাকার দোকানিরা পুরো বছরের বাকির খাতা সমাপ্ত করার জন্য পহেলা বৈশাখের দিন অনেকটা ঐতিহ্যগতভাবেই যেখানে এবার কিছুটা ভাটা পড়েছে। একুশ শতকের এই দিনে স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের ছোঁয়া পাওয়া গ্রামগুলোর বাজার, বন্দর ও গঞ্জে নববর্ষে হালখাতার সেই হিড়িক পড়ে কি-না সন্দেহ থেকেই যায়, সেখানে ঢাকা তো অনেক দূর। আগের বৈশাখী মেলার সঙ্গে ছিল মাটি ও মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। আজকের করপোরেট মেলায় তা মেলা ভার।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বসেছে বর্ণিল কনসার্ট। বটমূলের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে। কিন্তু চড়া সুরের মিউজিক আর ডিজে পার্টির স্টাইলের ড্রামস বিট কেবল খটকাই জাগায়। একটু এগিয়ে যাই কী ঘটছে দেখার জন্য। নববর্ষের প্রথম দিনে উন্মাদ যুবকদের উন্মাদনা আর একটু প্রলম্বিত করে এক কণ্ঠশিল্পী আমাদের সমাজের তুলনায় নিতান্তই বেমানান পোশাকে স্টেজে উঠে বাজেরে বাজেরে ঢোলের রিমিক্স গাইছেন। কিছুক্ষণ পরই শুরু হলো 'শীলা কি জাওয়ানি'। কীভাবে এই গান বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হতে পারে? বস্তুত পহেলা বৈশাখের আয়োজন আবহমানকাল থেকেই বাঙালির প্রাণের সঙ্গে সংযুক্ত। কিন্তু এর মূল গতিধারার সঙ্গে আমাদের ক্রমে বিচ্ছিন্নতা বৈশাখী অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যকে ম্লান করার পাশাপাশি কিছু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জমি তৈরি করে দিচ্ছে। যা আমরা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কেন যেন সমর্থন করে আসছি, নামান্তরে পথ বিচ্যুত হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি।
সংস্কৃতি ঐতিহ্যের ব্যাপারেও একটা বদ্ধমূল ধারণা থাকতে হবে। বুঝতে হবে পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় গৌরব। প্রত্যেকের উচিত একে অন্তরে ধারণ করা যেন এটি তার মূল স্রোতধারা খুঁজে পায়। সংস্কৃতির এই দেউলিয়াত্ব থেকে উত্তরণে আমাদের প্রত্যেকের বিশেষত তরুণ সমাজের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।
aurnabmaas@gmail.com
No comments