আর কত প্রাণের বিনিময়ে টনক নড়বে?- পোশাক কারখানার নিরাপত্তা-ঝুঁকি
একের পর এক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে,
কারখানাগুলো মৃত্যুফাঁদ হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিতভাবে ছোট ছোট দুর্ঘটনার পর
প্রায়ই বড় বিপর্যয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু টনক নড়ছে না।
সম্প্রতি
আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর
পর কারখানা-ঝুঁকি অন্যতম জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস
সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করে সেই আশঙ্কাই
তুলে ধরেছে। সরকারের টনক নড়বে কি?ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, সাভার-আশুলিয়া এলাকার চার ভাগের এক ভাগ কারখানারই অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা নাজুক। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে তারা ৩৫ শতাংশ কারখানার অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পেয়েছে। জরিপ দুটির আওতা ব্যাপকবিস্তৃত না হলেও তাতে বাস্তবতার প্রতিফলন আছে। তবে এই পরিদর্শনগুলো মূলত শিল্প এলাকার বড় বড় কারখানায় হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জসহ বড় বড় শহরের আশপাশে অসংখ্য কারখানা নজরের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। সেসব কারখানার বাস্তবতা আমলে নিলে বলতে হয়, কারখানাগুলোয় একপ্রকার গণবিধ্বংসী বাস্তবতা বিরাজ করছে। এবং বছরের পর বছর না-সরকার না-কারখানা কর্তৃপক্ষ, কেউই কিছু করছে! অথচ মর্মান্তিকভাবে ঝরে যাচ্ছে শত শত প্রাণ।
কেবল আগুনই নয়, পোশাক কারখানা বা জাহাজভাঙা শিল্পের মতো শ্রমঘন কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আরও কারণ রয়েছে। কারখানা ভবনের নির্মাণ-ত্রুটি এর অন্যতম। আগুন বা ভূমিকম্প কিংবা রাসায়নিক বিপর্যয়ের ঝুঁকির মুখে এসব কারখানার অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা মোটেই নিরাপদ নয়।
এ অবস্থা চলতে পারে না। অব্যবস্থা ও অবহেলার নির্মম বলি মানুষ আর হতে পারে না। এমনকি শিল্পগুলোর টেকসই ও লাভজনক থাকার স্বার্থেও এগুলোর কর্মপরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন। সরকারকে এ ব্যাপারে নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি স্বতন্ত্র দপ্তর সৃষ্টি করতে হবে। নিয়মিতভাবে শিল্পাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিদর্শনও জরুরি। অবহেলা ও অন্যায়কে কোনোভাবেই শাস্তির ঊর্ধ্বে রাখা যাবে না।
আশুলিয়ার সরকারঘোষিত ১১১টি জীবনের কোনো প্রতিদান হয় না। কিন্তু তাঁদেরই সহকর্মী ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের জীবনকে এ রকম বিপন্নতার মধ্যে রেখে দেওয়ার অধিকার কারও নেই।
No comments