মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই-দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন -গরু নেই নিজেই লাঙল টানেন শহীদ by নিয়ামুল কবীর সজল
নিজের এক খণ্ড জমিও নেই মুক্তিযোদ্ধা মো. শহীদের (৬২)। তিনি ময়মনসিংহ শহরের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে মুক্তিযোদ্ধাপল্লীতে থাকেন ভাঙা টিনের জোড়াতালি দেওয়া ঘরে। আর ঘরের কাছেই চরের পতিত জমি চাষ করে পাওয়া ফসল দিয়েই চলে তাঁর জীবন।
বর্ষার পানি নেমে গেলে জেগে ওঠা চরে প্রতিবছর ধান, শর্ষে আর কলাই চাষ করেন শহীদ। নিজেই কোদাল দিয়ে কোপান জমির মাটি। চাষের গরু না থাকায় লাঙলও টানেন নিজেই। বীজ বপন, পরিচর্যা ও ফসল তোলার সব কাজ তাঁকেই করতে হয়।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণনার একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বলেন, 'বয়স হইছে ষাইটের উপরে, আর ফারি না। শইলে আর কুলায় না। শইলের হাড্ডি আর চামড়াডা ছাড়া বিতরে অহন আর কিছু নাই।'
তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেও কোনো ভাতা পান না শহীদ। ১২-১৩ বছর ধরে আছেন ময়মনসিংহ শহরের বলাশপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের পাশে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাপল্লীতে। এর আগে থাকতেন শহরের নাটকঘর লেনে। একসময় চলে আসেন চরের এ পল্লীতে। ছয় ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে শুরু হয় নতুন জীবন। কিন্তু অভাব আর পিছু ছাড়ে না। কোনো দিন এক বেলা, কোনো দিন উপোস- এভাবেই যেতে থাকে সময়। কাজের কোনো সন্ধান না পেয়ে একপর্যায়ে ঘরের সামনে চরের পতিত জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। বর্ষায় এ চর ডুবে যায়। কিন্তু হেমন্তে যখন জেগে ওঠে, তখন কোদাল-লাঙল নিয়ে খাটতে থাকেন ভোর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ। গরু নেই, নিজেই লাঙল টানেন। শ্রমিক নেওয়ার পয়সা নেই, তাই সব কাজই করেন নিজের হাতে। একটি মাত্র মৌসুম কাজে লাগিয়ে তাঁর ১৫-২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। সারা বছরে এ টাকাই তাঁর সম্বল।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জানান, বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো খাটতে পারেন না। অসুস্থতাও তাঁকে কাবু করেছে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বাংকারে পুঁতে রাখা একটি বাঁশের কঞ্চি বুকে বিঁধেছিল। বুকের ওই জায়গাটায় এখনো ব্যথা লাগে। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সংগতি নেই তাঁর। এক ছেলেকে কিছুদিন আগে একটি সাধারণ সরকারি চাকরিতে ঢোকাতে পেরেছেন। তবে এর জন্য কাউকে কাউকে 'খুশি' করতে হয়েছে। ধারদেনা করে তিনি সেই চাহিদা মিটিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানী ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শহীদ জানান, তাঁর আদিবাড়ি এ জেলারই ত্রিশাল উপজেলায়। কিন্তু তিনি এখন বাস করেন সদর উপজেলায়। এ দুই উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের ঠেলাঠেলি আর অসহযোগিতার কারণেই তাঁর এমন অবস্থা। তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগের কথা। ভাতা পাওয়ার সব কিছু ঠিকঠাক, এমন সময় একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা তাঁকে বললেন, তিনি (শহীদ) একসঙ্গে ছয় বছরের টাকা পাবেন যদি ওই কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকা দেন। এরপর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন শহীদ। তবে এরপর কী হয়েছে, তা তিনি আর জানেন না। বারবার টাকা খরচ করে আদালতে গিয়ে মামলার খোঁজ নেওয়ার অবস্থা তাঁর নেই।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শহীদ জানান, ওই সময় তাঁর বয়স ছিল বিশের মতো। তিনি মাস্টাররোলে চাকরি করতেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে আনসার সদস্য হিসেবে রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ২৫ মার্চ রাতেই তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে শামিল হন। এরপর চলে যান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ঢালু ক্যাম্পে। সেখান থেকে আরো কয়েক জায়গায়। প্রশিক্ষণ শেষে ধোবাউড়া, পূর্বধলা, শ্রীবর্দী, ধানুয়া, কামালপুর, নকশী, শেরিঘাট প্রভৃতি এলাকায় সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন।
স্বাধীন দেশে এমন কষ্টের জীবন কাটালেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ব বোধ করেন শহীদ। তিনি বলেন, 'দেশেরে ভালোবাসছি, যুদ্ধ করছি। দেশ স্বাধীন অইছে। স্বাধীন দেশে বাস করছি। এইডাই অনেক বড় শান্তি।'
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুর রব বলেন, একেবারে শুরুতেই শহীদ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন- এটি একটি বিরাট ব্যাপার। এরপর ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে অসংখ্য যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছেন। এ অঞ্চলের যুদ্ধে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণনার একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বলেন, 'বয়স হইছে ষাইটের উপরে, আর ফারি না। শইলে আর কুলায় না। শইলের হাড্ডি আর চামড়াডা ছাড়া বিতরে অহন আর কিছু নাই।'
তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেও কোনো ভাতা পান না শহীদ। ১২-১৩ বছর ধরে আছেন ময়মনসিংহ শহরের বলাশপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের পাশে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাপল্লীতে। এর আগে থাকতেন শহরের নাটকঘর লেনে। একসময় চলে আসেন চরের এ পল্লীতে। ছয় ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে শুরু হয় নতুন জীবন। কিন্তু অভাব আর পিছু ছাড়ে না। কোনো দিন এক বেলা, কোনো দিন উপোস- এভাবেই যেতে থাকে সময়। কাজের কোনো সন্ধান না পেয়ে একপর্যায়ে ঘরের সামনে চরের পতিত জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। বর্ষায় এ চর ডুবে যায়। কিন্তু হেমন্তে যখন জেগে ওঠে, তখন কোদাল-লাঙল নিয়ে খাটতে থাকেন ভোর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ। গরু নেই, নিজেই লাঙল টানেন। শ্রমিক নেওয়ার পয়সা নেই, তাই সব কাজই করেন নিজের হাতে। একটি মাত্র মৌসুম কাজে লাগিয়ে তাঁর ১৫-২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। সারা বছরে এ টাকাই তাঁর সম্বল।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জানান, বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো খাটতে পারেন না। অসুস্থতাও তাঁকে কাবু করেছে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বাংকারে পুঁতে রাখা একটি বাঁশের কঞ্চি বুকে বিঁধেছিল। বুকের ওই জায়গাটায় এখনো ব্যথা লাগে। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সংগতি নেই তাঁর। এক ছেলেকে কিছুদিন আগে একটি সাধারণ সরকারি চাকরিতে ঢোকাতে পেরেছেন। তবে এর জন্য কাউকে কাউকে 'খুশি' করতে হয়েছে। ধারদেনা করে তিনি সেই চাহিদা মিটিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানী ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শহীদ জানান, তাঁর আদিবাড়ি এ জেলারই ত্রিশাল উপজেলায়। কিন্তু তিনি এখন বাস করেন সদর উপজেলায়। এ দুই উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের ঠেলাঠেলি আর অসহযোগিতার কারণেই তাঁর এমন অবস্থা। তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগের কথা। ভাতা পাওয়ার সব কিছু ঠিকঠাক, এমন সময় একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা তাঁকে বললেন, তিনি (শহীদ) একসঙ্গে ছয় বছরের টাকা পাবেন যদি ওই কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকা দেন। এরপর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন শহীদ। তবে এরপর কী হয়েছে, তা তিনি আর জানেন না। বারবার টাকা খরচ করে আদালতে গিয়ে মামলার খোঁজ নেওয়ার অবস্থা তাঁর নেই।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শহীদ জানান, ওই সময় তাঁর বয়স ছিল বিশের মতো। তিনি মাস্টাররোলে চাকরি করতেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে আনসার সদস্য হিসেবে রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ২৫ মার্চ রাতেই তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে শামিল হন। এরপর চলে যান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ঢালু ক্যাম্পে। সেখান থেকে আরো কয়েক জায়গায়। প্রশিক্ষণ শেষে ধোবাউড়া, পূর্বধলা, শ্রীবর্দী, ধানুয়া, কামালপুর, নকশী, শেরিঘাট প্রভৃতি এলাকায় সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন।
স্বাধীন দেশে এমন কষ্টের জীবন কাটালেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ব বোধ করেন শহীদ। তিনি বলেন, 'দেশেরে ভালোবাসছি, যুদ্ধ করছি। দেশ স্বাধীন অইছে। স্বাধীন দেশে বাস করছি। এইডাই অনেক বড় শান্তি।'
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুর রব বলেন, একেবারে শুরুতেই শহীদ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন- এটি একটি বিরাট ব্যাপার। এরপর ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে অসংখ্য যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছেন। এ অঞ্চলের যুদ্ধে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
No comments