ধর্ষণ ও প্রতিবন্ধী নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি by রেজাউল করিম সিদ্দিকী
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, বৈষম্যমূলক ধর্মীয় আইন ও রাষ্ট্রীয় অবহেলায় ঘরে-বাইরে মারাত্মক বৈষম্যের শিকার এবং অধিকারবঞ্চিত বাংলাদেশের নারী সমাজ। আর নারী যদি হয় প্রতিবন্ধী তবে তো কথাই নেই।
দারিদ্র্য, নারীত্ব ও প্রতিবন্ধিতাজনিত ত্রিমুখী বৈষম্যের শিকার হয়ে এদের মানব-মর্যাদা বিলীন হওয়ার পথে। ধর্ষণ নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত জঘন্যতম অপরাধগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে এ অপরাধের বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০৩-এ সংশোধিত)-এর আওতায়। তবে আইনটি প্রতিবন্ধী মেয়েদের ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কেন এ ব্যর্থতা?
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে (এমনকি তাদের সম্মতি নিয়ে) যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ 'ধর্ষণ' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্তু ১৬ বা তার কম বয়সী একজন অপ্রতিবন্ধী মেয়ে যতটা পরিপূর্ণতা পায়, সমবয়সী একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে তার প্রতিবন্ধকতার কারণে ততটা পায় না। তাই প্রতিবন্ধী নারীর ক্ষেত্রেও সম্মতি জ্ঞাপনসাপেক্ষে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের নূ্যনতম বয়স ১৬ হওয়ায় প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার ১২-১৩ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুকে ডাক্তাররা কাগজে-কলমে অবলীলায় ১৮-১৯ বছর বানিয়ে দেন। ফলে প্রলুব্ধ করে যৌন সম্ভোগের নামে ধর্ষণকারী আসামি খালাস পেয়ে যায়।
প্রচলিত আইনে ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার দায়টিও ধর্ষিতার ওপর ন্যস্ত। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১৫৫(৪) ধারার সুযোগ গ্রহণ করে আইনজীবীরা যৌন নির্যাতনের শিকার একজন নারীকে তার যন্ত্রণাদগ্ধ ও অসম্মানকর তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা ছাড়াও নিজের যৌন ইতিহাস প্রকাশে বাধ্য করেন। বিচার চাইতে গিয়ে নতুন গ্গ্নানি সইতে হয় বলে অনেক নির্যাতিতা ধর্ষণের মামলাও করেন না। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী হয়তো প্রমাণ করতে পারবেন যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিটিই যে ধর্ষক সেটি কী করে প্রমাণ করবেন তিনি? অসংখ্য কেস স্টাডি থেকে জেনেছি, ভিকটিমের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধানতম বাধা মেডিকেল সার্টিফিকেট। ভুল বা মিথ্যা মেডিকেল সার্টিফিকেটের বরাতে আসামি জামিন পায়। আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার আলামত নষ্ট করা, সাক্ষীদের ভীতি প্রদর্শন করা, ভিকটিম ও তার পরিবারকে ভয় দেখানোসহ মামলায় জেতার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে থাকে। ধর্ষণের মামলা আইন অনুযায়ী আপসযোগ্য না হলেও আপসরফার অসংখ্য নজির এভাবেই তৈরি হয়েছে।
শ্রবণপ্রতিবন্ধী নারীদের সঙ্গে ভাববিনিময় কষ্টকর বলে নারী ও শিশু আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমের জবানবন্দি নেওয়া হয় না। অথচ একজন ইন্টারপ্রিটর বা দোভাষী নিয়োগ করে কাজটা সহজেই করা যায়। এভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক মনোনিবেশ ও কর্মদক্ষতার অভাবে আইনের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় অনেকেই। ভিকটিম কাঠখড় পুড়িয়ে আদালত থেকে সুবিচারের আদেশ নিয়ে এলেও প্রশাসন বা পুলিশ যদি তা প্রয়োগ না করে তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটিই অর্থহীন হয়ে যায়। ঠিক এ জায়গাটিতে এসে আমাদের প্রচলিত পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে একজন প্রতিবন্ধী নারী কতটা পেরে ওঠেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা চাই না প্রতিবন্ধী বোনের চাপাকষ্টের দীর্ঘশ্বাস, আমরা চাই না প্রিয় মাতৃভূমি অপরাধী হোক। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, অবিলম্বে প্রতিবন্ধী নারীর অনুকূলে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ আইনি সংস্কার করুন।
হ পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে (এমনকি তাদের সম্মতি নিয়ে) যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ 'ধর্ষণ' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্তু ১৬ বা তার কম বয়সী একজন অপ্রতিবন্ধী মেয়ে যতটা পরিপূর্ণতা পায়, সমবয়সী একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে তার প্রতিবন্ধকতার কারণে ততটা পায় না। তাই প্রতিবন্ধী নারীর ক্ষেত্রেও সম্মতি জ্ঞাপনসাপেক্ষে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের নূ্যনতম বয়স ১৬ হওয়ায় প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার ১২-১৩ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুকে ডাক্তাররা কাগজে-কলমে অবলীলায় ১৮-১৯ বছর বানিয়ে দেন। ফলে প্রলুব্ধ করে যৌন সম্ভোগের নামে ধর্ষণকারী আসামি খালাস পেয়ে যায়।
প্রচলিত আইনে ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার দায়টিও ধর্ষিতার ওপর ন্যস্ত। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১৫৫(৪) ধারার সুযোগ গ্রহণ করে আইনজীবীরা যৌন নির্যাতনের শিকার একজন নারীকে তার যন্ত্রণাদগ্ধ ও অসম্মানকর তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা ছাড়াও নিজের যৌন ইতিহাস প্রকাশে বাধ্য করেন। বিচার চাইতে গিয়ে নতুন গ্গ্নানি সইতে হয় বলে অনেক নির্যাতিতা ধর্ষণের মামলাও করেন না। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী হয়তো প্রমাণ করতে পারবেন যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিটিই যে ধর্ষক সেটি কী করে প্রমাণ করবেন তিনি? অসংখ্য কেস স্টাডি থেকে জেনেছি, ভিকটিমের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধানতম বাধা মেডিকেল সার্টিফিকেট। ভুল বা মিথ্যা মেডিকেল সার্টিফিকেটের বরাতে আসামি জামিন পায়। আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার আলামত নষ্ট করা, সাক্ষীদের ভীতি প্রদর্শন করা, ভিকটিম ও তার পরিবারকে ভয় দেখানোসহ মামলায় জেতার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে থাকে। ধর্ষণের মামলা আইন অনুযায়ী আপসযোগ্য না হলেও আপসরফার অসংখ্য নজির এভাবেই তৈরি হয়েছে।
শ্রবণপ্রতিবন্ধী নারীদের সঙ্গে ভাববিনিময় কষ্টকর বলে নারী ও শিশু আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমের জবানবন্দি নেওয়া হয় না। অথচ একজন ইন্টারপ্রিটর বা দোভাষী নিয়োগ করে কাজটা সহজেই করা যায়। এভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক মনোনিবেশ ও কর্মদক্ষতার অভাবে আইনের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় অনেকেই। ভিকটিম কাঠখড় পুড়িয়ে আদালত থেকে সুবিচারের আদেশ নিয়ে এলেও প্রশাসন বা পুলিশ যদি তা প্রয়োগ না করে তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটিই অর্থহীন হয়ে যায়। ঠিক এ জায়গাটিতে এসে আমাদের প্রচলিত পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে একজন প্রতিবন্ধী নারী কতটা পেরে ওঠেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা চাই না প্রতিবন্ধী বোনের চাপাকষ্টের দীর্ঘশ্বাস, আমরা চাই না প্রিয় মাতৃভূমি অপরাধী হোক। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, অবিলম্বে প্রতিবন্ধী নারীর অনুকূলে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ আইনি সংস্কার করুন।
হ পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা
No comments