গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিদেশীদের মায়াকান্না by শাহজাহান মিয়া
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী বীর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ আলোচনা-সমালেচনার ঝড় বইছে। ড. ইউনূস এদেশের একজন কৃতী ব্যক্তিত্ব। গ্রামীণ ব্যাংকও বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।
এটি একটি বিরল অর্জন। সরকার বা দেশের যে কোন মহল তাঁর কার্যক্রম বা তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থবিরোধী কোন কিছু করতে চাইলে দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সুধীমহলসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। আর সেটা তেমন দোষের কিছুও নয়। বরং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি প্রত্যয়ী প্রয়াশ বলেই মনে করা হবে। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ড. ইউনূস ও সরকারের সঙ্গে সৃষ্ট বিতর্কে এখন দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সাংবাদিক-কলামিস্টরা তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করছেন। প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোতে অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে তাদের বক্তব্য রাখছেন। ২০০৬ সালে নবেম্বর মাসে নোবেল জয়ের পর পরই একটি ইংরেজী দৈনিকে আমি মন-প্রাণ উজাড় করে এই কৃতী পুরুষ সম্পর্কে লিখেছিলাম। এই মহান ব্যক্তি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ইংরেজী ভাষায় যেটুকু সামর্থ্য আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন তার পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। কোন কার্পণ্য করিনি। অর্থনীতিতে না দিয়ে তাঁকে কেন শান্তিতে নোবেল দেয়া হয় সে বিষয়টি তখন আলোচনায় এসেছিল। তবে আমি আমার সীমিত মেধা দিয়ে এ বিষয়েও যথেষ্ট ইতিবাচক যুক্তি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছিলাম। কারণ, মানুষের দারিদ্র্যদূরীকরণই হচ্ছে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার মর্মকথা। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে দেশে বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে মনে বিষম খটকা লেগেছে বিদেশীরাও এ বিষয়টি নিয়ে মাত্রাতিরিক্তভাবে মাতামাতি শুরু করে দেয়ায়। কথাটি নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. ইউনূস প্রসঙ্গে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ন্যূনতম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিশ্বের প্রবল পরাক্রমশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। সম্প্রতি এরই নগ্ন বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম। গত ১৪ আগস্ট ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে মতামত বিভাগে প্রকাশিত কলামে মাইলাম গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসকে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশটিকে সহযোগিতা বন্ধের হুমকি দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে পরামর্শ দিয়েছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করে যাওয়া মাইলাম বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও একই আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে ‘উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার’র তিনি একজন প-িত। এর আগে একই ধারায় বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজেনা অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু ভাল কথার ফাঁকে গ্রামীণ ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির বিষয়ে আকারে ইঙ্গিতে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
মজার কথা হলো, এক সময় ড. ইউনূস নিজেই ব্যাংক থেকে সম্মানজনক বিদায়ের কথা বলেছিলেন। আবার গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি প্রদানের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২ মার্চ ড. ইউনূস হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। তিনি নিজে ও ব্যাংকের আরও ৯ পরিচালকের হাইকোর্টে দায়েরকৃত দুটি পৃথক রিট আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত রিট দুটি খারিজ করে দেন। ওই বছরের ৮ মার্চ প্রদত্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এবং সেজন্য তাঁর বেলায় ওই ব্যাংকের চাকরি বিধিমালাই প্রযোজ্য হবে। সে অনুযায়ী তাঁর চাকরির বয়সসীমা হবে ৬০ বছর এবং সে বয়সসীমা ১৯৯৯ সালেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আদালত তার রায়ে আরও বলেছিলেন, বয়সসীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন পুনঃনিয়োগ বা অনুমোদন ছাড়াই আইনবহির্ভূতভাবে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আদালত বলেছিলেন, ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে এমডি পদে অনির্দিষ্টকালের জন্য দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এর পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনরূপ অনুমোদন নেয়া হয়নি। অনুমোদনের প্রমাণও বাদীপক্ষ কোর্টে পেশ করতে পারেনি। তাই আইনের দৃষ্টিতে ওই রেজুলেশনের কোন ভিত্তি নেই। আদালতের আদেশে আরও বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ‘তথাকথিত’ ওই রেজুলেশনের মাধ্যমে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন। কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোন অনিয়মের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। তাই এমডি পদে দায়িত্ব পালন থেকে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক যে চিঠি প্রদান করেছে তাতে বেআইনি কিছু হয়নি। এবং সেজন্যই রিট দুটি খারিজ করা হয় বলে বিজ্ঞ আদালত বলেন। হাইকোর্ট থেকে মামলা সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু তাঁর এমডি পদ ফিরে পাওয়া আর সম্ভব হয়নি। তবে ২০০৬ সালের ৭ মার্চ “গ্রামীণ ব্যাংকের মসৃণ ও আনন্দমুখর দায়িত্ব হস্তান্তরের” জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন ড. ইউনূস। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো দেশবাসীর প্রতি খোলা আবেদনে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আদালতে তাঁর আইনজীবীরাও ড. ইউনূসের সম্মানজনক বিদায়ের কথা বলেছিলেন। একটি চিঠির মাধ্যমে ড. ইউনূস অর্থমন্ত্রীকে তা জানিয়েছিলেনও। কিন্তু ড. ইউনূস নিজেই প্রথম আদালতে গিয়ে সে প্রচেষ্টার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। কারণ, জনস্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর কোন বিষয় একবার আদালতে উঠে গেলে সে বিষয়ে আদালতের বাইরে এসে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়েই দাঁড়ায়। তাঁর মতো একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের নিজের সম্মান রক্ষার্থে নিজেকেই আরও অধিকতর সচেতন ও সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। আবেগের বশবর্তী হয়ে আদালতে না গিয়ে তিনি ২০১১ সালের মার্চে ‘মসৃণ ও আনন্দময় পরিবেশে’ দায়িত্ব হস্তান্তরের যে দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছিলেন সেরকম কোন উদ্যোগ আরও আগে নেয়া হলে তা হয়ত অর্থবহ হতো।
ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর এখন আবার নতুন করে গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটিতে এমডি নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন অধ্যাদেশ জারির পর দেশে-বিদেশে আবার সমভাবেই তুমুল হৈচৈ ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ের পর ড. ইউনূসের খ্যাতি ও মর্যাদা সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী তাঁর জনপ্রিয়তা গিরিশিখরসম। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পতœী হিলারি ক্লিনটনই নন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ড. ইউনূসকে অব্যাহতি প্রদানের পর বিদেশের আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। শুধু দেশের পত্র-পত্রিকায়ই নয় বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ড. ইউনূসের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত অবস্থান যত উঁচু বা বিরাট-বিশালই হোক না কেন তাঁর জন্য আইনের বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব নয়। তাহলে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আইনের শাসন বলে কিছু থাকে না। তবুও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত না গড়ালে কিছু একটা করা হয়ত সম্ভব হতো। প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে ড. ইউনূসও একাধিকবার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন করেছেন। পরিচালনা পরিষদে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে অধ্যাদেশের চারটি ধারায় পরিবর্তন আনেন। চার বছর পর ১৯৯০ সালের জুলাইয়ে আরও ১৮টি ধারায় সংশোধনী আনেন। তৃতীয়বারের মতো ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাদেশের ১০টি ধারায় তিনি পরিবর্তন এনেছিলেন। ১৯৯০ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাইরের কোনো ব্যক্তি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না’ তা নিশ্চিত করা হয়। গত ২৫ আগস্ট জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এমডি নিয়োগের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে একটি ‘সিলেকশন কমিটি’ গঠন করবেন। সদস্য হবেন তিন থেকে পাঁচজন। এই কমিটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবে। তাঁদের মধ্য থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন এমডি বেছে নেয়া হবে এবং পরে বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিলে নতুন এমডি নিয়োগ দেবে। প্যানেল মনোনয়নের ক্ষেত্রে ‘মাইক্রো-ফাইন্যান্সিং’ বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। উল্লেখ্য, একটি সামরিক অধ্যাদেশ বলে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল তিন কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ছিল এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, আর ঋণ গ্রহীতাদের ছিল এক কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন হয়ত ব্যাংকটির সম্পদ সম্পত্তির পরিমাণ ১৩-১৪ হাজার কোটি টাকা হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ও ড. ইউনূসকে নিয়ে শুধু নানা বিতর্কের সূত্রপাতই হয়নি, জোরেশোরে নানারকম প্রশ্নও উঠেছিল। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানই ব্যাংকটির প্রধান কাজ। তবে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তায় অনেক দরিদ্র মানুষ যেমন উপকৃত হয়েছে তেমনি অনেক গরিব ঋণগ্রহীতা নানারূপ ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয়ে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে। অনেকের অভিযোগ যে ঋণের জালে গ্রামের সহজ-সরল নিরীহ গরিব মানুষগুলোকে আটকে রাখা হয়। প্রদত্ত ঋণের সুদ আদায়ে অহেতুক প্রচ- জোরজবরদস্তি করারও প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ঋণের চড়া সুদের হার নিয়েও সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকে এবং সঞ্চয়ের নামে জোর করে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ নেয়। অর্থ আদায়ের পদ্ধতিও প্রকারভেদে কম নিষ্ঠুর নয়। অনেকেই বলছেন, দেশের দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের যদি তেমন ইতিবাচক ভূমিকাই থাকবে তাহলে গত ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম জোরেশোরে চালু থাকলেও বাংলাদেশ এখনও পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি বলে অভিহিত হবে কেন। ২০১১ সালের ৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের নির্যাতিত কর্মী পরিষদের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছিলেন যে একক আধিপত্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের হাজার হাজার কর্মী ও লাখ লাখ গ্রাহককে ঠকিয়েছেন। স্বেচ্ছা অবসরের নামে জোর করে কমপক্ষে আট হাজার লোককে ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত করেছেন। সদস্য ফি’র টাকা নিয়েও লাখ লাখ গ্রাহককে সদস্য সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। তাদের কোন প্রকার লভ্যাংশও দেয়া হয়নি। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারা বলেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংক দিয়ে ড. ইউনূস ব্যাংকবহির্ভূত আরও ২৭টি প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং ড. ইউনূস আজ্ঞাবহ পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকের এমডি পদে আজীবন থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। গ্রামের লাখ লাখ নিরীহ মহিলারা কিভাবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে এ অমানবিক বিষয়টি জানার অধিকার জনগণের নিশ্চয়ই রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশের এত মায়াকান্না ও দরদের হেতুটা কি সেটাও জনগণের জানা দরকার। সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষায় তৎপর এদেশগুলোর নিজস্ব কোন হীন উদ্দেশ্য যে রয়েছে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তবে তার সঙ্গে বাংলাদেশের গরিব নারীদের স্বার্থরক্ষার যে কোনরূপ সম্পর্ক নেই তাও দিবালোকের মতো পরিষ্কার। মহিলারা ব্যাংকটির ৯৭ শতাংশের মালিক কিভাবে হলেন এ বিষয়টিও গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। মালিক হলে তো তারা লাভের অংশ পেতেন। তা তো তারা পান না। কতগুলো শর্ত পূরণ করেই নারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের মালিক বনে যাওয়া হাস্যকর নয় কি? নারীরা মলিক হলে তো প্রতিবছর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংকের লোকদের নির্যাতনের কবল থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত শতাধিক গরিব মহিলার আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না। এ কথা সত্য যে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ড. ইউনূসের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি হয়েছে। আর নারীদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মজার কথা হলো, এক সময় ড. ইউনূস নিজেই ব্যাংক থেকে সম্মানজনক বিদায়ের কথা বলেছিলেন। আবার গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি প্রদানের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২ মার্চ ড. ইউনূস হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। তিনি নিজে ও ব্যাংকের আরও ৯ পরিচালকের হাইকোর্টে দায়েরকৃত দুটি পৃথক রিট আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত রিট দুটি খারিজ করে দেন। ওই বছরের ৮ মার্চ প্রদত্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এবং সেজন্য তাঁর বেলায় ওই ব্যাংকের চাকরি বিধিমালাই প্রযোজ্য হবে। সে অনুযায়ী তাঁর চাকরির বয়সসীমা হবে ৬০ বছর এবং সে বয়সসীমা ১৯৯৯ সালেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আদালত তার রায়ে আরও বলেছিলেন, বয়সসীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন পুনঃনিয়োগ বা অনুমোদন ছাড়াই আইনবহির্ভূতভাবে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আদালত বলেছিলেন, ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে এমডি পদে অনির্দিষ্টকালের জন্য দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এর পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনরূপ অনুমোদন নেয়া হয়নি। অনুমোদনের প্রমাণও বাদীপক্ষ কোর্টে পেশ করতে পারেনি। তাই আইনের দৃষ্টিতে ওই রেজুলেশনের কোন ভিত্তি নেই। আদালতের আদেশে আরও বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ‘তথাকথিত’ ওই রেজুলেশনের মাধ্যমে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন। কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোন অনিয়মের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। তাই এমডি পদে দায়িত্ব পালন থেকে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক যে চিঠি প্রদান করেছে তাতে বেআইনি কিছু হয়নি। এবং সেজন্যই রিট দুটি খারিজ করা হয় বলে বিজ্ঞ আদালত বলেন। হাইকোর্ট থেকে মামলা সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু তাঁর এমডি পদ ফিরে পাওয়া আর সম্ভব হয়নি। তবে ২০০৬ সালের ৭ মার্চ “গ্রামীণ ব্যাংকের মসৃণ ও আনন্দমুখর দায়িত্ব হস্তান্তরের” জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন ড. ইউনূস। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো দেশবাসীর প্রতি খোলা আবেদনে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আদালতে তাঁর আইনজীবীরাও ড. ইউনূসের সম্মানজনক বিদায়ের কথা বলেছিলেন। একটি চিঠির মাধ্যমে ড. ইউনূস অর্থমন্ত্রীকে তা জানিয়েছিলেনও। কিন্তু ড. ইউনূস নিজেই প্রথম আদালতে গিয়ে সে প্রচেষ্টার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। কারণ, জনস্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর কোন বিষয় একবার আদালতে উঠে গেলে সে বিষয়ে আদালতের বাইরে এসে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়েই দাঁড়ায়। তাঁর মতো একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের নিজের সম্মান রক্ষার্থে নিজেকেই আরও অধিকতর সচেতন ও সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। আবেগের বশবর্তী হয়ে আদালতে না গিয়ে তিনি ২০১১ সালের মার্চে ‘মসৃণ ও আনন্দময় পরিবেশে’ দায়িত্ব হস্তান্তরের যে দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছিলেন সেরকম কোন উদ্যোগ আরও আগে নেয়া হলে তা হয়ত অর্থবহ হতো।
ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর এখন আবার নতুন করে গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটিতে এমডি নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন অধ্যাদেশ জারির পর দেশে-বিদেশে আবার সমভাবেই তুমুল হৈচৈ ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ের পর ড. ইউনূসের খ্যাতি ও মর্যাদা সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী তাঁর জনপ্রিয়তা গিরিশিখরসম। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পতœী হিলারি ক্লিনটনই নন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ড. ইউনূসকে অব্যাহতি প্রদানের পর বিদেশের আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। শুধু দেশের পত্র-পত্রিকায়ই নয় বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ড. ইউনূসের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত অবস্থান যত উঁচু বা বিরাট-বিশালই হোক না কেন তাঁর জন্য আইনের বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব নয়। তাহলে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আইনের শাসন বলে কিছু থাকে না। তবুও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত না গড়ালে কিছু একটা করা হয়ত সম্ভব হতো। প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে ড. ইউনূসও একাধিকবার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন করেছেন। পরিচালনা পরিষদে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে অধ্যাদেশের চারটি ধারায় পরিবর্তন আনেন। চার বছর পর ১৯৯০ সালের জুলাইয়ে আরও ১৮টি ধারায় সংশোধনী আনেন। তৃতীয়বারের মতো ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাদেশের ১০টি ধারায় তিনি পরিবর্তন এনেছিলেন। ১৯৯০ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাইরের কোনো ব্যক্তি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না’ তা নিশ্চিত করা হয়। গত ২৫ আগস্ট জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এমডি নিয়োগের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে একটি ‘সিলেকশন কমিটি’ গঠন করবেন। সদস্য হবেন তিন থেকে পাঁচজন। এই কমিটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবে। তাঁদের মধ্য থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন এমডি বেছে নেয়া হবে এবং পরে বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিলে নতুন এমডি নিয়োগ দেবে। প্যানেল মনোনয়নের ক্ষেত্রে ‘মাইক্রো-ফাইন্যান্সিং’ বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। উল্লেখ্য, একটি সামরিক অধ্যাদেশ বলে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল তিন কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ছিল এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, আর ঋণ গ্রহীতাদের ছিল এক কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন হয়ত ব্যাংকটির সম্পদ সম্পত্তির পরিমাণ ১৩-১৪ হাজার কোটি টাকা হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ও ড. ইউনূসকে নিয়ে শুধু নানা বিতর্কের সূত্রপাতই হয়নি, জোরেশোরে নানারকম প্রশ্নও উঠেছিল। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানই ব্যাংকটির প্রধান কাজ। তবে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তায় অনেক দরিদ্র মানুষ যেমন উপকৃত হয়েছে তেমনি অনেক গরিব ঋণগ্রহীতা নানারূপ ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয়ে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে। অনেকের অভিযোগ যে ঋণের জালে গ্রামের সহজ-সরল নিরীহ গরিব মানুষগুলোকে আটকে রাখা হয়। প্রদত্ত ঋণের সুদ আদায়ে অহেতুক প্রচ- জোরজবরদস্তি করারও প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ঋণের চড়া সুদের হার নিয়েও সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকে এবং সঞ্চয়ের নামে জোর করে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ নেয়। অর্থ আদায়ের পদ্ধতিও প্রকারভেদে কম নিষ্ঠুর নয়। অনেকেই বলছেন, দেশের দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের যদি তেমন ইতিবাচক ভূমিকাই থাকবে তাহলে গত ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম জোরেশোরে চালু থাকলেও বাংলাদেশ এখনও পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি বলে অভিহিত হবে কেন। ২০১১ সালের ৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের নির্যাতিত কর্মী পরিষদের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছিলেন যে একক আধিপত্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের হাজার হাজার কর্মী ও লাখ লাখ গ্রাহককে ঠকিয়েছেন। স্বেচ্ছা অবসরের নামে জোর করে কমপক্ষে আট হাজার লোককে ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত করেছেন। সদস্য ফি’র টাকা নিয়েও লাখ লাখ গ্রাহককে সদস্য সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। তাদের কোন প্রকার লভ্যাংশও দেয়া হয়নি। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারা বলেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংক দিয়ে ড. ইউনূস ব্যাংকবহির্ভূত আরও ২৭টি প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং ড. ইউনূস আজ্ঞাবহ পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকের এমডি পদে আজীবন থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। গ্রামের লাখ লাখ নিরীহ মহিলারা কিভাবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে এ অমানবিক বিষয়টি জানার অধিকার জনগণের নিশ্চয়ই রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশের এত মায়াকান্না ও দরদের হেতুটা কি সেটাও জনগণের জানা দরকার। সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষায় তৎপর এদেশগুলোর নিজস্ব কোন হীন উদ্দেশ্য যে রয়েছে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তবে তার সঙ্গে বাংলাদেশের গরিব নারীদের স্বার্থরক্ষার যে কোনরূপ সম্পর্ক নেই তাও দিবালোকের মতো পরিষ্কার। মহিলারা ব্যাংকটির ৯৭ শতাংশের মালিক কিভাবে হলেন এ বিষয়টিও গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। মালিক হলে তো তারা লাভের অংশ পেতেন। তা তো তারা পান না। কতগুলো শর্ত পূরণ করেই নারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের মালিক বনে যাওয়া হাস্যকর নয় কি? নারীরা মলিক হলে তো প্রতিবছর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংকের লোকদের নির্যাতনের কবল থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত শতাধিক গরিব মহিলার আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না। এ কথা সত্য যে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ড. ইউনূসের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি হয়েছে। আর নারীদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments