একটি গণশুনানির কাহিনী ও কিছু মৌলিক প্রশ্ন by ড. তারেক শামসুর রেহমান
পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে তথাকথিত একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ৭ মার্চ। প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রই গুরুত্ব দিয়ে এই সংবাদটি ছেপেছে। ‘বিচারপতি’ হিসেবে যাদের নাম দেখলাম তাদের মাঝে একজন সাবেক বিচারপতিও আছেন, যিনি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ করে অবসরে গেছেন।
বাকিদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন, একজন আইনজীবীও রয়েছেন, যাদের সবারই মোটামুটি একটি রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারক যখন কোনো ‘বিচারকার্য’ (?) পরিচালনা করেন, তখন তিনি সংবিধান ও বিচার কাজের মূল স্পিরিটকে উপেক্ষা করেন কীভাবে? ওই বিচারপতি যখন সুপ্রিমকোর্টে বসতেন, যখন একাধিক বিচারের রায় দিয়েছেন, তখন বার বার সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইদানীংকালে তিনি কলমও ধরেছেন। লিখেছেনও। ‘গণশুনানিতে’ তিনি যখন বসেছিলেন, তখন কি সংবিধানের কথাটা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন! বাংলাদেশের সংবিধান কি এ ধরনের ‘গণশুনানি’ অনুমোদন করে? তিনি নিজে কি এখন সংবিধান লঙ্ঘন করলেন না? আপনি যখন আপিল বিভাগে ছিলেন, তখন সংবিধানের ব্যাখ্যা আপনি দিয়েছেন এবং আমরা তা মানতে বাধ্য হয়েছি। তখন আপনি বিচারপতির নাম ব্যবহার করেন বটে; কিন্তু এখন আপনি (অব.)। আমরা আপনার রায় মানতে বাধ্য নই। বিচারপতি সাহেব ‘বিচার’ করার জন্য বসেছিলেন; কিন্তু দেখা গেল সেখানে পক্ষ একটাই। অর্থাত্ পাহাড়িরা। অপর পক্ষ, অর্থাত্ বাঙালিরা, তারা কোথায়? তাদের কি আসতে বলা হয়েছিল? ‘বিচারপতি’ সাহেবরা কি বাঙালিদের কথা শুনতে রাজি ছিলেন না? পত্রিকায় পড়লাম আদিবাসীবিষয়ক জাতীয় কমিটি এই তথাকথিত ‘গণশুনানি’র আয়োজন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে ‘আদিবাসী’ বলে সংবিধানে কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই। বলা আছে অনগ্রসর অংশের কথা (২৮-৪)। সংবিধান ২ অনুচ্ছেদ, যেখানে রাষ্ট্রীয় সীমানার কথা বলা হয়েছে, সেখানেও আলাদা করে ‘আদিবাসী’ বলে কিছু বলা হয়নি। অথচ দিব্যি আমরা ‘আদিবাসী’ বলছি। বিচারপতি মহোদয়, আজীবন যিনি সংবিধানের আওতায় তার দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি কি করে সংবিধানবিরোধী একটি সংগঠনের তথাকথিত ‘গণশুনানিতে’ সভাপতিত্ব করলেন? বিচারপতি মহোদয় অনেক বিজ্ঞ মানুষ। প্রথম যৌবনে আইনজীবী ছিলেন। আইন ভালো বোঝেন, অন্তত আমার চেয়ে ভালো বোঝেন তো বটেই! তিনি বিচার করতে বসেছিলেন। নিম্নোক্ত মন্তব্যগুলো কি তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন?
এক. তথাকথিত ‘গণশুনানিতে’ বলা হয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হানাদার ও পাকিস্তানের দোসর (আমার দেশ, ৮ মার্চ)। যে সেনাবাহিনী বিদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে এবং বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে, সেই সেনাবাহিনীকেই নিজ দেশের একদল লোক বলছে হানাদার (?)। আপনিও কি তা মনে করেন? এ ধরনের প্রশ্ন যখন উঠছিল, তখন কি আপনি প্রশ্নকারীদের এ ধরনের বক্তব্য রাখতে বাধা দিয়েছিলেন? আপনি কি বক্তব্য দানকারীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, সেনাবাহিনী একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আগামী ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতার ৩৯ বছরে পা দেব। এই ৩৯ বছরের একটি দেশের সেনাবাহিনীকে এখনও বলা হবে অন্য একটি দেশের দোসর(?), এ কথাটা কি এখনও আমরা শুনব? এতে করে কি সরকারের ভূমিকাকে একটি প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো না? দুই. আমরা শুনলাম সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কারা এটি চায়? কেন এটি চায়? সেনাবাহিনী এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে নিয়োজিত রয়েছে, একইভাবে চট্টগ্রামেও নিয়োজিত রয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্বও তাদের। এখন পাহাড়িদের একটা অংশ যখন সেনা প্রত্যাহার করার দাবি করে, এই দাবিকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? সেনাবাহিনী তুলে নিলে লাভ হয় কাদের? পাহাড়িদের যে অংশ এখন, সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, লাভবান হবে তো তারাই। কোনো রাষ্ট্র কি এ ধরনের দাবি মেনে নিতে পারে? আমরা তো ভারতের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখছি। ভারতের ‘সাত বোন রাজ্যগুলোতে’ এখন ভারতের সেনাবাহিনীর ৪ থেকে ৫ লাখ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। বিতর্কিত কাশ্মীরেও রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এটাই স্বাভাবিক। আজ যদি ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘সাত বোন রাজ্যগুলোতে’ থাকতে পারে, যদি শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী তামিল অধ্যুষিত এলাকা জাফনায় থাকতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন থাকবে না? বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছে। তাদের গুরুত্বও বেড়েছে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা করেই অতি সম্প্রতি আরও একজন সেনা কর্মকর্তাকে আইভরি কোস্টে ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ভাবমূর্তি নষ্ট করা ও আন্তর্জাতিক আসরে তাদের গুরুত্ব হ্রাস করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। মাননীয় বিচারপতির কাছে কি আদৌ বিষয়টি বিবেচনায় এসেছে? তিন. তথাকথিত ‘গণশুনানিতে’ অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাঙালিরা পাহাড়িদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে (?)। বিদেশি কোনো কোনো দাতাগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের একটা অংশের অভিযোগও তাই; কিন্তু গোপন কথাটি ফাঁস করে দিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এল থাঙ্গা পাঙ্খো। তিনি জানিয়েছেন, চাকমারা নিজেরাই নিজেদের ঘর পুড়িয়ে বাঙালিদের দোষ দিয়েছে। চাকমারা অতি বাড়াবাড়ি করছে বলেও তার অভিমত (দেখুন দৈনিক ইনকিলাবে তার সাক্ষাত্কার, ৮ মার্চ, ২০১০)। মি. পাঙ্খো আমাদের আরও অনেক তথ্য দিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও জানিয়েছেন, ৪১টি বাঙালি পরিবারের জায়গা দখল করে নিয়েছে চাকমারা। এনজিওরা যে ত্রাণ বিতরণ করছে, তা দেয়া হচ্ছে শুধু চাকমাদের। বাঙালিরা কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না। এখন তথাকথিত ‘গণশুনানিকারীরা’ কী বলবেন? যেখানে সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বয়ং বলেছেন চাকমারা নিজেরা নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়েছে, সেখানে বিচারপতি সাহেব কি শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুষ্কৃতিকারী চাকমাদের বিচার করবেন? বিচারপতি সাহেব মহাপণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি নিশ্চয়ই জানেন সাজেক অঞ্চলে চাকমারা বসতি স্থাপন করে ১৯৯৭-৯৯ সালে। অথচ বাঙালিরা এখানে বসতি স্থাপন করে ১৯৬০ সালে। ইতিহাস খোঁজ করলেই এ তথ্য জানা যাবে। আর চাকমারাও এ অঞ্চলের ভূমিপুত্র নন। তাদের যে আদিবাসী বলা হচ্ছে, তাও ঠিক নয় (এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে কোনো এক সংখ্যায় লেখার ইচ্ছে রইল)। এই অঞ্চলে চাকমাদের কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই, যা কিনা এ ধারণাকে সমর্থন করে যে চাকমারা এ অঞ্চলের আদি সন্তান। ১২ থেকে ১৪ হাজার বছর আগে ভারতের বিহারকে কেন্দ্র করে ‘নব্যপ্রস্তর’ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল, তা এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লেও, এখন অব্দি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো পুরাতন মন্দির বা ফসিলের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যা চাকমাদের ‘ভূমিজ সন্তান’ বা আদিবাসীর দাবিকে সমর্থন করে। চাকমারা এখানে বাঙালিদের মতোই বসতি স্থাপন করেছিল। চাকমারা দেড়শ’ থেকে তিনশ’ বছর আগে এখানে স্থানান্তরিত হয়ে আগমন করে। এরা মোগল আমলের শেষ থেকে নিয়ে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রথমদিকে মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। চাকমারা এই ইতিহাসকে আজ অস্বীকার করছে। আর আমাদের কিছু ‘সুশীল’ তাতে বাহবা দিচ্ছে। বিচারপতি হিসেবে একটি ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করা পাপ বৈ কিছু নয়।
গণশুনানির ব্যাপারে আমার আগ্রহ কম। যেখানে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে, দেশে আদালতসহ উচ্চআদালত পর্যন্ত রয়েছে, সংসদও আছে- সেখানে গণশুনানির আয়োজন করে কি সরকারের কর্তৃত্ব পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করা হলো না? আমার মনে আরও কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে আমি খুশি হব। এক. বিতর্কিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করে। তাদের ওই সফরের সঙ্গে পাহাড়ের সাম্প্রতিক অসন্তোষের কোনো যোগ্যসূত্র আছে কিনা? কমিশন কি অসন্তোষকে উসেক দিয়েছিল? দুই. পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন কি সরকারের অনুমতি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়েছিল? সরকার কি তাদের অনুমতি দিয়েছিল? তিন. ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের (মূলত চাকমাদের) উন্নয়নের (?) ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে; কিন্তু তারা কি ভারতের নাগা, কুকি, মিজো কিংবা অসমীয়াদের উন্নয়নের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে কখনও? ভারতের ‘সাত বোন’ রাজ্যগুলোতে কি তাদের কোনো কর্মকাণ্ড রয়েছে? চার. ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি কখনও একটি নাগা কমিশন বা কুকি কমিশন গঠন করেছে? যদি না করে থাকে, তাহলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন গঠন করার উদ্দেশ্য কী? পাঁচ. জনসংহতি সমিতি বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মুসলমান বসতি স্থাপনকারীদের তুলে এনে সমতলে হাওর, বাঁওড় ও নদীর চরে জেগে ওঠা জমিতে পুনর্বাসন করবেন (নয়া দিগন্ত, ২ সেপ্টেম্বর, ’০৯)। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কথা আদৌ বলেছেন কিনা, কিংবা জেএসএস প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেছে কিনা, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ছয়. ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে তারা বাঘাইহাটের ঘটনার জন্য সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে; কিন্তু উপজাতীয় নেতা থাঙ্গা পাঙ্খোর বক্তব্যে এসেছে ভিন্ন চিত্র। এখন ‘ভুল তথ্য’ দেয়া ও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য ইইউ কমিশনকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে পারে সংসদ। চাই কি সংসদে একটি নিন্দা প্রস্তাবও উত্থাপন করা যায়। যদিও এতে করে বিদেশে আমাদের সম্পর্কে আরও খারাপ ধারণার জন্ম হবে। তবে ইইউকে সতর্ক করে দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাত. ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু পাহাড়িদের নিয়ে কাজ করে। চাকরি-বাকরি পায় শুধু চাকমারাই। তাদের এই আচরণ ও ভূমিকা সংবিধানের ২৭ ও ২৮ (১)নং ধারার পরিপন্থী। যদিও এই দুটো ধারায় রাষ্ট্রের ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটি বিদেশি সংস্থাকেও রাষ্ট্রের সংবিধান মেনে কাজ করতে হয়। যেখানে সংবিধান বলছে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’ (২৭ নং ধারা) ও ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না (২৮-১নং ধারা), সে ক্ষেত্রে ইউএনডিপি বাঙালি ও পাহাড়িদের আলাদা করছে ও চাকমা তথা বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সংবিধানের ৩৬, ৩৭ ও ৪২ নং ধারা অনুযায়ী একজন বাঙালি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস, সম্পত্তি অর্জন ও চলাফেরা করার অধিকার রাখেন। এখন কেউ বা কোনো সংস্থা যদি তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে চায়, তাহলে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করবেন। এ কথাগুলো আজ ইউএনডিপি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন। সংসদে বিরোধীদল, এমনকি সরকারিদলও ইউএনডিপির কর্মকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করতে পারে। আট. পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে, যা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে গেল ১০ মার্চ। তারা অভিযোগ করেছে, পাহাড়ি এলাকায় সাম্প্রতিক সংঘাত ও সহিংস ঘটনায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন আছে এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বেই ঘটানো হয়েছে। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমি ধারণা করছি, সংসদীয় কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য ও উপাত্ত রয়েছে। একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় নাক গলাবে, তা আমরা সমর্থন করতে পারি না। আমরা চাইব এই তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা হোক। একদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়েও সংসদে আলোচনা হতে পারে। এজন্যই তো সংসদ। বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টিমও পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটিও ভালো। মোট কথা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে হাল্কাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একজন উপজাতীয় নেতা থাঙ্গা পাঙ্খো (যিনি চাকমা নন) নিজে বলেছেন বাঙালি ও পাহাড়িরা মিলেমিশেই যুগ যুগ ধরে সেখানে বসবাস করে আসছেন। সমস্যা সেখানে এতদিন হয়নি। আজ কেন হচ্ছে? আমরা মনে করি পাঙ্খোর কথার মধ্যেই সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে। আর তা হচ্ছে ‘স্ট্যাটাস কো’—অর্থাত্ যে যেখানে আছে সে সেখানে থাকবে। কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তথাকথিত ‘গণশুনানির’ আয়োজন করে বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অধ্যাপক
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
এক. তথাকথিত ‘গণশুনানিতে’ বলা হয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হানাদার ও পাকিস্তানের দোসর (আমার দেশ, ৮ মার্চ)। যে সেনাবাহিনী বিদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে এবং বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে, সেই সেনাবাহিনীকেই নিজ দেশের একদল লোক বলছে হানাদার (?)। আপনিও কি তা মনে করেন? এ ধরনের প্রশ্ন যখন উঠছিল, তখন কি আপনি প্রশ্নকারীদের এ ধরনের বক্তব্য রাখতে বাধা দিয়েছিলেন? আপনি কি বক্তব্য দানকারীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, সেনাবাহিনী একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আগামী ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতার ৩৯ বছরে পা দেব। এই ৩৯ বছরের একটি দেশের সেনাবাহিনীকে এখনও বলা হবে অন্য একটি দেশের দোসর(?), এ কথাটা কি এখনও আমরা শুনব? এতে করে কি সরকারের ভূমিকাকে একটি প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো না? দুই. আমরা শুনলাম সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কারা এটি চায়? কেন এটি চায়? সেনাবাহিনী এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে নিয়োজিত রয়েছে, একইভাবে চট্টগ্রামেও নিয়োজিত রয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্বও তাদের। এখন পাহাড়িদের একটা অংশ যখন সেনা প্রত্যাহার করার দাবি করে, এই দাবিকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? সেনাবাহিনী তুলে নিলে লাভ হয় কাদের? পাহাড়িদের যে অংশ এখন, সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, লাভবান হবে তো তারাই। কোনো রাষ্ট্র কি এ ধরনের দাবি মেনে নিতে পারে? আমরা তো ভারতের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখছি। ভারতের ‘সাত বোন রাজ্যগুলোতে’ এখন ভারতের সেনাবাহিনীর ৪ থেকে ৫ লাখ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। বিতর্কিত কাশ্মীরেও রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এটাই স্বাভাবিক। আজ যদি ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘সাত বোন রাজ্যগুলোতে’ থাকতে পারে, যদি শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী তামিল অধ্যুষিত এলাকা জাফনায় থাকতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন থাকবে না? বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছে। তাদের গুরুত্বও বেড়েছে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা করেই অতি সম্প্রতি আরও একজন সেনা কর্মকর্তাকে আইভরি কোস্টে ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ভাবমূর্তি নষ্ট করা ও আন্তর্জাতিক আসরে তাদের গুরুত্ব হ্রাস করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। মাননীয় বিচারপতির কাছে কি আদৌ বিষয়টি বিবেচনায় এসেছে? তিন. তথাকথিত ‘গণশুনানিতে’ অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাঙালিরা পাহাড়িদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে (?)। বিদেশি কোনো কোনো দাতাগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের একটা অংশের অভিযোগও তাই; কিন্তু গোপন কথাটি ফাঁস করে দিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এল থাঙ্গা পাঙ্খো। তিনি জানিয়েছেন, চাকমারা নিজেরাই নিজেদের ঘর পুড়িয়ে বাঙালিদের দোষ দিয়েছে। চাকমারা অতি বাড়াবাড়ি করছে বলেও তার অভিমত (দেখুন দৈনিক ইনকিলাবে তার সাক্ষাত্কার, ৮ মার্চ, ২০১০)। মি. পাঙ্খো আমাদের আরও অনেক তথ্য দিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও জানিয়েছেন, ৪১টি বাঙালি পরিবারের জায়গা দখল করে নিয়েছে চাকমারা। এনজিওরা যে ত্রাণ বিতরণ করছে, তা দেয়া হচ্ছে শুধু চাকমাদের। বাঙালিরা কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না। এখন তথাকথিত ‘গণশুনানিকারীরা’ কী বলবেন? যেখানে সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বয়ং বলেছেন চাকমারা নিজেরা নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়েছে, সেখানে বিচারপতি সাহেব কি শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুষ্কৃতিকারী চাকমাদের বিচার করবেন? বিচারপতি সাহেব মহাপণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি নিশ্চয়ই জানেন সাজেক অঞ্চলে চাকমারা বসতি স্থাপন করে ১৯৯৭-৯৯ সালে। অথচ বাঙালিরা এখানে বসতি স্থাপন করে ১৯৬০ সালে। ইতিহাস খোঁজ করলেই এ তথ্য জানা যাবে। আর চাকমারাও এ অঞ্চলের ভূমিপুত্র নন। তাদের যে আদিবাসী বলা হচ্ছে, তাও ঠিক নয় (এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে কোনো এক সংখ্যায় লেখার ইচ্ছে রইল)। এই অঞ্চলে চাকমাদের কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই, যা কিনা এ ধারণাকে সমর্থন করে যে চাকমারা এ অঞ্চলের আদি সন্তান। ১২ থেকে ১৪ হাজার বছর আগে ভারতের বিহারকে কেন্দ্র করে ‘নব্যপ্রস্তর’ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল, তা এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লেও, এখন অব্দি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো পুরাতন মন্দির বা ফসিলের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যা চাকমাদের ‘ভূমিজ সন্তান’ বা আদিবাসীর দাবিকে সমর্থন করে। চাকমারা এখানে বাঙালিদের মতোই বসতি স্থাপন করেছিল। চাকমারা দেড়শ’ থেকে তিনশ’ বছর আগে এখানে স্থানান্তরিত হয়ে আগমন করে। এরা মোগল আমলের শেষ থেকে নিয়ে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রথমদিকে মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। চাকমারা এই ইতিহাসকে আজ অস্বীকার করছে। আর আমাদের কিছু ‘সুশীল’ তাতে বাহবা দিচ্ছে। বিচারপতি হিসেবে একটি ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করা পাপ বৈ কিছু নয়।
গণশুনানির ব্যাপারে আমার আগ্রহ কম। যেখানে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে, দেশে আদালতসহ উচ্চআদালত পর্যন্ত রয়েছে, সংসদও আছে- সেখানে গণশুনানির আয়োজন করে কি সরকারের কর্তৃত্ব পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করা হলো না? আমার মনে আরও কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে আমি খুশি হব। এক. বিতর্কিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করে। তাদের ওই সফরের সঙ্গে পাহাড়ের সাম্প্রতিক অসন্তোষের কোনো যোগ্যসূত্র আছে কিনা? কমিশন কি অসন্তোষকে উসেক দিয়েছিল? দুই. পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন কি সরকারের অনুমতি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়েছিল? সরকার কি তাদের অনুমতি দিয়েছিল? তিন. ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের (মূলত চাকমাদের) উন্নয়নের (?) ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে; কিন্তু তারা কি ভারতের নাগা, কুকি, মিজো কিংবা অসমীয়াদের উন্নয়নের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে কখনও? ভারতের ‘সাত বোন’ রাজ্যগুলোতে কি তাদের কোনো কর্মকাণ্ড রয়েছে? চার. ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি কখনও একটি নাগা কমিশন বা কুকি কমিশন গঠন করেছে? যদি না করে থাকে, তাহলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন গঠন করার উদ্দেশ্য কী? পাঁচ. জনসংহতি সমিতি বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মুসলমান বসতি স্থাপনকারীদের তুলে এনে সমতলে হাওর, বাঁওড় ও নদীর চরে জেগে ওঠা জমিতে পুনর্বাসন করবেন (নয়া দিগন্ত, ২ সেপ্টেম্বর, ’০৯)। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কথা আদৌ বলেছেন কিনা, কিংবা জেএসএস প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেছে কিনা, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ছয়. ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে তারা বাঘাইহাটের ঘটনার জন্য সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে; কিন্তু উপজাতীয় নেতা থাঙ্গা পাঙ্খোর বক্তব্যে এসেছে ভিন্ন চিত্র। এখন ‘ভুল তথ্য’ দেয়া ও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য ইইউ কমিশনকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে পারে সংসদ। চাই কি সংসদে একটি নিন্দা প্রস্তাবও উত্থাপন করা যায়। যদিও এতে করে বিদেশে আমাদের সম্পর্কে আরও খারাপ ধারণার জন্ম হবে। তবে ইইউকে সতর্ক করে দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাত. ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু পাহাড়িদের নিয়ে কাজ করে। চাকরি-বাকরি পায় শুধু চাকমারাই। তাদের এই আচরণ ও ভূমিকা সংবিধানের ২৭ ও ২৮ (১)নং ধারার পরিপন্থী। যদিও এই দুটো ধারায় রাষ্ট্রের ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটি বিদেশি সংস্থাকেও রাষ্ট্রের সংবিধান মেনে কাজ করতে হয়। যেখানে সংবিধান বলছে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’ (২৭ নং ধারা) ও ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না (২৮-১নং ধারা), সে ক্ষেত্রে ইউএনডিপি বাঙালি ও পাহাড়িদের আলাদা করছে ও চাকমা তথা বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সংবিধানের ৩৬, ৩৭ ও ৪২ নং ধারা অনুযায়ী একজন বাঙালি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস, সম্পত্তি অর্জন ও চলাফেরা করার অধিকার রাখেন। এখন কেউ বা কোনো সংস্থা যদি তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে চায়, তাহলে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করবেন। এ কথাগুলো আজ ইউএনডিপি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন। সংসদে বিরোধীদল, এমনকি সরকারিদলও ইউএনডিপির কর্মকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করতে পারে। আট. পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে, যা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে গেল ১০ মার্চ। তারা অভিযোগ করেছে, পাহাড়ি এলাকায় সাম্প্রতিক সংঘাত ও সহিংস ঘটনায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন আছে এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বেই ঘটানো হয়েছে। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমি ধারণা করছি, সংসদীয় কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য ও উপাত্ত রয়েছে। একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় নাক গলাবে, তা আমরা সমর্থন করতে পারি না। আমরা চাইব এই তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা হোক। একদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়েও সংসদে আলোচনা হতে পারে। এজন্যই তো সংসদ। বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টিমও পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটিও ভালো। মোট কথা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে হাল্কাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একজন উপজাতীয় নেতা থাঙ্গা পাঙ্খো (যিনি চাকমা নন) নিজে বলেছেন বাঙালি ও পাহাড়িরা মিলেমিশেই যুগ যুগ ধরে সেখানে বসবাস করে আসছেন। সমস্যা সেখানে এতদিন হয়নি। আজ কেন হচ্ছে? আমরা মনে করি পাঙ্খোর কথার মধ্যেই সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে। আর তা হচ্ছে ‘স্ট্যাটাস কো’—অর্থাত্ যে যেখানে আছে সে সেখানে থাকবে। কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তথাকথিত ‘গণশুনানির’ আয়োজন করে বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অধ্যাপক
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
No comments