স্বাধীন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল- ট্রাইব্যুনাল যেন স্বাধীনভাবে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মিটাতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে

দু’টি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। ইতোমধ্যেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজ শুরু করায় মানুষ আশান্বিত হয়েছেন যে, দীর্ঘদিন


হলেও একাত্তরের ঘাতকদের বিচার হবে। কিন্তু যেভাবে বিচার কাজ চলছে তাতে শেষ পর্যন্ত তা কতদূর এগোয় এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জনবল সঙ্কট এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য সমস্যার কারণে বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বিচার কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে এবং দ্রুত শেষ হতে পারে সেজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ী এবং প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে স্বাধীন করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে পাঁচ সংগঠন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সহায়ক মঞ্চ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সোমবার এ দাবি জানায়। সরকারের কর্তব্য হচ্ছে দাবিগুলোর যথার্থতা বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী, সাক্ষী ও প্রসিকিউশনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনীয় জনবল ও রসদের যোগান দেয়া ইত্যাদি।
জানা যায়, ট্রাইব্যুনালে প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ৭৫ জন কর্মকর্তা ও দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল পরিচালনার জন্য ১১৩ জন কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হলে প্রত্যাশিত এ জনসম্পদও যথেষ্ট নয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এছাড়াও পুরো ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম মনিটরিং করতে কমপক্ষে ১৫টি সিসি ক্যামেরা ও ১০ জন অপারেটর প্রয়োজন। এ পর্যন্ত ১৫ জন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের কেউ কেউ নিয়মিত ট্রাইব্যুনালে আসেন না।
যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন যুদ্ধাপরাধ বিচারের সঙ্গে জাতির অস্তিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কালবিলম্ব হলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত। এমনিতেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিচার বানচালের জন্য দেশে বিদেশে নানা তৎপরতায় লিপ্ত। কাজেই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাতে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারে এটা নিশ্চিত করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপের কারণে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। কারু মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে ট্রাইব্যুনাল যেন স্বাধীনভাবে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মিটাতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.