দিনবদল না নামবদল? by হায়দার আকবর খান রনো
প্রায় মাসাধিককাল আমি দৈনিক আমার দেশ-এ নিয়মিত কলাম লিখতে পারিনি। এর মধ্যে অবশ্য এমন নতুন কিছু ঘটেনি, যা নিয়ে লেখা হয়নি বলে দুঃখ করার আছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যা হয়ে আসছে, তাই-ই হচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্তরের দাম বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে। সরকারি দলের টেন্ডারবাজি আগের মতোই দোর্দণ্ড প্রতাপে চলছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রম-অবনতি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘর্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুনাখুনি—এসব নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি যে দুটি ঘটনা বিশেষ করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো, নাম বদলের হিড়িক ও সংসদের ভেতরে সংসদ সদস্যদের আচরণ। এগুলোও নতুন কিছু নয়। তবে অনেক রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপটার পর দেশবাসী আসা করেছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষ করে সরকারি দলের কিছু বোধহয় হবে। আশা করেছিল দেশ ধীরে ধীরে সুস্থ গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাবে। অন্যথায় এক-এগারোর মতো ঘটনা হয়তো আবারও ঘটতে পারে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই, বরং দেশকে আবারও অনেক বছরের জন্য পিছিয়ে দেবে। কিন্তু হায়। সেই সামান্য বোধোদয়টুকুও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের এখনও হয়নি।
গণতন্ত্র মানে সহনশীলতা। পরমত সহিষ্ণুতা। গণতন্ত্র মানে যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে বিতর্ক এবং জনমতকে নিজ মতের দিকে টেনে আনার প্রচেষ্টা। বিতর্ক হবে শালিনতা রক্ষা করে, ভদ্রভাষায়। কঠোর ভাষায় নীতির সমালোচনা, কিন্তু অযৌক্তিক ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। গণতন্ত্র মানে প্রতিহিংসা নয়, বরং সুস্থ প্রতিযোগিতা। কিন্তু হায়! সে সবের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় প্রধান বিরোধী দল সংসদে না এলেও এখন তারা সংসদে আছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা বা প্রাণবন্ত বিতর্ক হচ্ছে না, যা হচ্ছে তা হলো খিস্তিখেউড় এবং এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাব, যা কেবল নিকৃষ্ট সাংস্কৃতিক মানের পরিচয় বহন করে মাত্র।
মনে পড়ে নব্বইয়ের দশকে, তখনও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, পার্লামেন্টে দু’পক্ষ এমন ধরনের কথাবার্তা বলেছিলেন, যা ছাপার অক্ষরে লেখা যায় না, কোনো ভদ্র সমাজে উচ্চারণও করা যায় না। তখন কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছিল পার্লামেন্ট হচ্ছে অশ্লীলতার চর্চাকেন্দ্র। প্রায় দেড় দশক পর একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখছি। তার মানে কিছুই বদলায়নি। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের, সংসদ সদস্যদের সাংস্কৃতিক মান, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা ব্যবহারিক আচরণে কোনো উন্নতিই ঘটেনি।
পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে দাঁড়িয়েছিল যে, একপর্যায়ে স্পিকারও এমন কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, যা আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। আওয়ামী লীগের নেতা স্পিকার সরকারি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন বলে অভিযোগ আছে। সেই স্পিকারও সরকারি ও বিরোধী দল উভয়কেই তিরস্কার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ঝগড়া, মারামারি ইত্যাদি যদি করতেই হয়, তা সংসদের বাইরে গিয়ে করুন। প্রয়োজন হলে কুস্তি লড়ুন। স্পিকার বিরক্ত হয়েছিলেন এটা বোঝা যায়। তবে তিনিও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা ভালো ঠেকেনি। সম্ভবত সংসদ সদস্যদের আচরণে ও ভাষা প্রয়োগে তিনি নিজের রাগ ও বিরক্তি চেপে রাখতে পারেননি। সব মিলিয়ে আমরা সংসদের মান-মর্যাদা নিজেরাই রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। বলাই বাহুল্য, এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। বরং একটা অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
তার মানে কিছুই বদলায়নি। রাজনৈতিক আচরণ বদলায়নি, বিশেষ করে সরকারি দলের আচরণ একেবারেই বদলায়নি, যদিও দিনবদলের স্লোগান দিয়ে তারা বিপুল ভোট সংগ্রহ করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। যা বদলিয়েছে তা হলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম। জিয়াউর রহমানের নামে যে বিমানবন্দরের নামটি ছিল তা বদলিয়ে দিয়ে সরকার সম্ভবত দিনবদলের কর্মসূচি শুরু করতে চেয়েছে। বিমানবন্দরের নাম বদলের কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, বিএনপিকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “অতীত থেকে যারা শিক্ষা নেয়নি তাদের শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাদের শিক্ষা দিতেই জিয়ার নাম বদল করা হয়েছে। তারা একবারও ভেবে দেখেননি নাম বদলের খেলা ভালো হবে না। ভাবেনি, খারাপ দিন তাদেরও আসতে পারে।” প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সত্যিকারের শিক্ষাদানের কোনো উদ্দেশ্য নেই, যা আছে তা হলো প্রতিহিংসার রাজনীতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেছেন যে, বিএনপি আমলে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসহ দুই/আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা দুই-একটা নাম পরিবর্তন করাতেই এতো জ্বালা। তাদের করা আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হলে কেমন লাগবে?’
এ তো ঝগড়ার ভাষা, যুক্তির ভাষা নয়। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বও বলেছেন যে, ক্ষমতায় গেলে তারাও আবার সব নাম বদলিয়ে দেবেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম কোনো স্থায়ী ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। দিনবদলের বদলে আমরা নাম বদল নিয়েই ব্যস্ত থাকব। এতে যে একপক্ষ আরেক পক্ষকে খুব একটা শিক্ষা দিতে পারবে তা-ও মনে হয় না। আর দেশবাসীকে সুশিক্ষার বদলে, উন্নত চেতনায় সমৃদ্ধ করার বদলে স্থায়ীভাবে জড়িয়ে রাখব ঝগড়ার মধ্যে। তাতে আর যাই হোক, গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।
সরকারের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে যখন নাম বদলটাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়, তখন অর্থনীতি, আইন শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, দুর্নীতি—এ ধরনের বিষয় পেছনে পড়ে যেতে বাধ্য। আর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন ঝগড়ার ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য আসে, তখন তা নিম্নস্তরের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে সঞ্চারিত যে হবে তা ধরে নেয়া যায়। সংসদ সদস্যরা যে সংসদের মতো মর্যাদাসম্পন্ন জায়গায় বসে আরও কোমর বেঁধে ঝগড়া করবেন—সেটাও অস্বাভাবিক নয়।
নাম বদলের হিড়িক পড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নাম বদলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে যে ধরনের শিক্ষা দেয়ার কথা বলেছেন, তা গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমার মনে হয় অপরকে শিক্ষাদানের কথা বলার আগে নিজেদের কিছুটা হলেও শিক্ষিত করে তোলা দরকার, কীভাবে রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলতে হয়, কীভাবে সমালোচনার মুখে সহনশীল থাকতে হয়, কীভাবে দেশবাসীকে, বিশেষ করে নিজ দলের কর্মীদের আরও ধৈর্যশীল হতে হয়। প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের এখন যে শিক্ষাটা দেয়া দরকার তা হলো পরমত সহিষ্ণুতা, হুমকির বদলে যুক্তি এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজা। কিন্তু হায়! এ পর্যন্ত যা দেখছি, তাতে সে সবের কোনো লক্ষণ নেই। আমার আশঙ্কা হচ্ছে সামনে আরও বড় দুর্দিন আসছে। তারপরও আশা করব, সবার সুমতি হোক, ভাষা প্রয়োগে সবাই সংযত হোন। গণতন্ত্রের ভিত্তি এখনও বড় নড়বড়ে। একটু শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর প্রয়াস কি এখনও নেয়া যায় না? প্রতিহিংসা নয়, বরং সহযোগিতাই আমাদের কাম্য।
গণতন্ত্র মানে সহনশীলতা। পরমত সহিষ্ণুতা। গণতন্ত্র মানে যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে বিতর্ক এবং জনমতকে নিজ মতের দিকে টেনে আনার প্রচেষ্টা। বিতর্ক হবে শালিনতা রক্ষা করে, ভদ্রভাষায়। কঠোর ভাষায় নীতির সমালোচনা, কিন্তু অযৌক্তিক ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। গণতন্ত্র মানে প্রতিহিংসা নয়, বরং সুস্থ প্রতিযোগিতা। কিন্তু হায়! সে সবের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় প্রধান বিরোধী দল সংসদে না এলেও এখন তারা সংসদে আছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা বা প্রাণবন্ত বিতর্ক হচ্ছে না, যা হচ্ছে তা হলো খিস্তিখেউড় এবং এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাব, যা কেবল নিকৃষ্ট সাংস্কৃতিক মানের পরিচয় বহন করে মাত্র।
মনে পড়ে নব্বইয়ের দশকে, তখনও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, পার্লামেন্টে দু’পক্ষ এমন ধরনের কথাবার্তা বলেছিলেন, যা ছাপার অক্ষরে লেখা যায় না, কোনো ভদ্র সমাজে উচ্চারণও করা যায় না। তখন কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছিল পার্লামেন্ট হচ্ছে অশ্লীলতার চর্চাকেন্দ্র। প্রায় দেড় দশক পর একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখছি। তার মানে কিছুই বদলায়নি। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের, সংসদ সদস্যদের সাংস্কৃতিক মান, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা ব্যবহারিক আচরণে কোনো উন্নতিই ঘটেনি।
পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে দাঁড়িয়েছিল যে, একপর্যায়ে স্পিকারও এমন কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, যা আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। আওয়ামী লীগের নেতা স্পিকার সরকারি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন বলে অভিযোগ আছে। সেই স্পিকারও সরকারি ও বিরোধী দল উভয়কেই তিরস্কার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ঝগড়া, মারামারি ইত্যাদি যদি করতেই হয়, তা সংসদের বাইরে গিয়ে করুন। প্রয়োজন হলে কুস্তি লড়ুন। স্পিকার বিরক্ত হয়েছিলেন এটা বোঝা যায়। তবে তিনিও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা ভালো ঠেকেনি। সম্ভবত সংসদ সদস্যদের আচরণে ও ভাষা প্রয়োগে তিনি নিজের রাগ ও বিরক্তি চেপে রাখতে পারেননি। সব মিলিয়ে আমরা সংসদের মান-মর্যাদা নিজেরাই রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। বলাই বাহুল্য, এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। বরং একটা অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
তার মানে কিছুই বদলায়নি। রাজনৈতিক আচরণ বদলায়নি, বিশেষ করে সরকারি দলের আচরণ একেবারেই বদলায়নি, যদিও দিনবদলের স্লোগান দিয়ে তারা বিপুল ভোট সংগ্রহ করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। যা বদলিয়েছে তা হলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম। জিয়াউর রহমানের নামে যে বিমানবন্দরের নামটি ছিল তা বদলিয়ে দিয়ে সরকার সম্ভবত দিনবদলের কর্মসূচি শুরু করতে চেয়েছে। বিমানবন্দরের নাম বদলের কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, বিএনপিকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “অতীত থেকে যারা শিক্ষা নেয়নি তাদের শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাদের শিক্ষা দিতেই জিয়ার নাম বদল করা হয়েছে। তারা একবারও ভেবে দেখেননি নাম বদলের খেলা ভালো হবে না। ভাবেনি, খারাপ দিন তাদেরও আসতে পারে।” প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সত্যিকারের শিক্ষাদানের কোনো উদ্দেশ্য নেই, যা আছে তা হলো প্রতিহিংসার রাজনীতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেছেন যে, বিএনপি আমলে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসহ দুই/আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা দুই-একটা নাম পরিবর্তন করাতেই এতো জ্বালা। তাদের করা আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হলে কেমন লাগবে?’
এ তো ঝগড়ার ভাষা, যুক্তির ভাষা নয়। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বও বলেছেন যে, ক্ষমতায় গেলে তারাও আবার সব নাম বদলিয়ে দেবেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম কোনো স্থায়ী ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। দিনবদলের বদলে আমরা নাম বদল নিয়েই ব্যস্ত থাকব। এতে যে একপক্ষ আরেক পক্ষকে খুব একটা শিক্ষা দিতে পারবে তা-ও মনে হয় না। আর দেশবাসীকে সুশিক্ষার বদলে, উন্নত চেতনায় সমৃদ্ধ করার বদলে স্থায়ীভাবে জড়িয়ে রাখব ঝগড়ার মধ্যে। তাতে আর যাই হোক, গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।
সরকারের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে যখন নাম বদলটাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়, তখন অর্থনীতি, আইন শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, দুর্নীতি—এ ধরনের বিষয় পেছনে পড়ে যেতে বাধ্য। আর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন ঝগড়ার ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য আসে, তখন তা নিম্নস্তরের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে সঞ্চারিত যে হবে তা ধরে নেয়া যায়। সংসদ সদস্যরা যে সংসদের মতো মর্যাদাসম্পন্ন জায়গায় বসে আরও কোমর বেঁধে ঝগড়া করবেন—সেটাও অস্বাভাবিক নয়।
নাম বদলের হিড়িক পড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নাম বদলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে যে ধরনের শিক্ষা দেয়ার কথা বলেছেন, তা গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমার মনে হয় অপরকে শিক্ষাদানের কথা বলার আগে নিজেদের কিছুটা হলেও শিক্ষিত করে তোলা দরকার, কীভাবে রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলতে হয়, কীভাবে সমালোচনার মুখে সহনশীল থাকতে হয়, কীভাবে দেশবাসীকে, বিশেষ করে নিজ দলের কর্মীদের আরও ধৈর্যশীল হতে হয়। প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের এখন যে শিক্ষাটা দেয়া দরকার তা হলো পরমত সহিষ্ণুতা, হুমকির বদলে যুক্তি এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজা। কিন্তু হায়! এ পর্যন্ত যা দেখছি, তাতে সে সবের কোনো লক্ষণ নেই। আমার আশঙ্কা হচ্ছে সামনে আরও বড় দুর্দিন আসছে। তারপরও আশা করব, সবার সুমতি হোক, ভাষা প্রয়োগে সবাই সংযত হোন। গণতন্ত্রের ভিত্তি এখনও বড় নড়বড়ে। একটু শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর প্রয়াস কি এখনও নেয়া যায় না? প্রতিহিংসা নয়, বরং সহযোগিতাই আমাদের কাম্য।
No comments