ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমি নিবন্ধন মার্চ থেকে by আপেল মাহমুদ
আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আগামী বছরের মার্চ মাস থেকেই জমির দলিল রেজিস্ট্রির (নিবন্ধনের) ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এ পদ্ধতি চালু হলে নিবন্ধন করার দিনই পাওয়া যাবে মূল দলিল।
তা ছাড়া বিগত দিনে নিবন্ধন করা দলিলের সূচি ও বালাম (ভলিউম) বইয়ের ডেটা এন্ট্রির কাজ শেষ হলে পুরনো দলিলের নকল পেতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক মিনিট। এ যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য নিবন্ধন আইন ও বিধিমালা সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত বিল জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হবে বলে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, এ সংশোধনের মাধ্যমে ১৯০৮ সালে প্রবর্তিত দলিল রেজিস্ট্রেশন আইনের বড় ধরনের পরিমার্জন হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছরের ৭ মার্চ ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলিল নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
এর আগে ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। দুই মাস পরীক্ষার পর ৭ মার্চ পাঁচটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং তিনটি জেলা রেকর্ড রুমে এ পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা দেওয়া শুরু হবে। গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটি এ সভা করে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে পাঁচটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং তিনটি জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের মহাফেজখানা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে তাদের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) ফান্ড থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলা রেকর্ড রুমের সাব-রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে জানান, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি সফল হলে সারা দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও মহাফেজখানা দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনা সম্ভব হবে। প্রথমে ঢাকা সদর, তেজগাঁও, উত্তরা, যশোর সদর, কুমিল্লা সদর এবং ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোর জেলা রেকর্ড রুম আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আসবে।
নকলনবিশদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা নেই : এদিকে এ আইন বাস্তবায়িত হলে সারা দেশের ৪৭৬টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ৬১টি জেলা রেজিস্ট্রারের মহাফেজখানায় কর্মরত নকলনবিশরা বেকার হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলিল নিবন্ধন করা হলে হাতে লেখা দলিল থাকবে না। দলিলের নকলও কম্পিউটারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে প্রিন্ট হয়ে বেরোবে। বর্তমানে দলিলের নকল করার জন্য সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার নকলনবিশ রয়েছেন।
দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, হাতে লেখা দলিল না থাকলেও মহাফেজখানার জন্য হাতে লেখা বালাম বই সংরক্ষণ করা হবে। আর তা লেখার জন্য নকলনবিশদের বিকল্প নেই।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) আবু আহমেদ জমাদ্দার কালের কণ্ঠকে জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলিল করা হলেও কোনো কর্মচারীকে কর্মচ্যুত না করার বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলিলের ভাষা সহজপাঠ্য হবে : আবু আহমেদ জমাদ্দার আরো জানান, এ পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে দলিল অবশ্যই কম্পিউটারে লিখতে হবে। এতে দলিলের ভাষা সহজপাঠ্য ও সুশৃঙ্খল হবে। অপ্রয়োজনীয় গৎ ও শব্দ থাকবে না এবং দলিলের স্থায়িত্ব বাড়বে। দলিল লেখার জন্য সারা দেশে একটি নির্দিষ্ট ফরম থাকবে। যেকোনো অল্প শিক্ষিত লোকও সেটি পূরণ করতে পারবেন। সেই ফরম পূরণ করার পর তা দলিল লেখকদের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে উপস্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অনলাইনের মাধ্যমে দলিলের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা নিবন্ধন করে দেবেন। এ জন্য তিনি সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড), ভূমি জরিপ অধিদপ্তর এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এতে কম্পিউটারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে দলিলে উপস্থাপিত সব তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাবেন সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার। তথ্য সঠিক হলে তিনি নিবন্ধনকাজ শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে মূল দলিল দিয়ে দেবেন।
হয়রানি থাকবে না : বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাহফুজুর রহমান খান বলেন, এর মাধ্যমে দেশে দলিল রেজিস্ট্রেশন বিভাগে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে। দলিল রেজিস্ট্রি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে হয়রানি-ভীতি থাকবে না।
জানা যায়, এ পদ্ধতিতে দলিল নিবন্ধন করার আগে কম্পিউটারে কম্পোজ করা দলিলের সঙ্গে খাজনা পরিশোধের রসিদ, খারিজের পর্চা, ডিসিআর ও জরিপের পর্চা পেশ করা বাধ্যতামূলক। এসব কম্পিউটারে স্ক্যান করে নিজস্ব ইউনিক আইডির মাধ্যমে রাখা হবে। এরপর টিপসই এবং দলিল দাতা, গ্রহীতা ও শনাক্তকারীর ছবি নেওয়া হবে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে। এসব কাজ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেই করতে হবে, যেমনটি বর্তমানে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) ক্ষেত্রে করা হচ্ছে। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর মূল দলিল, দাতা-গ্রহীতার স্বাক্ষর, ছবিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় কম্পিউটারে স্ক্যান করে রাখা হবে কেন্দ্রীয় সার্ভারে। এরপর দলিলে উল্লিখিত দাতা-গ্রহীতার নাম-ঠিকানা, মৌজার নাম, জমির দাগ নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ডেটাবেইসের মাধ্যমে একটি ইনডেঙ্ (সূচিপত্র) করা হবে। পরে রেজিস্ট্রি করা দলিল নম্বরের ভিত্তিতে একটি ইউনিক আইডি সংরক্ষণ করা হবে। এ আইডির মাধ্যমে সহজেই বের করা যাবে দলিলটি। সব কাজ শেষ হওয়ার পরই মূল দলিলটি পাওয়া যাবে। এরপর পুরো প্রক্রিয়ার একটি ছাপা কপি বের করা হবে, যা নকলনবিশরা বালাম বইয়ে নথিভুক্ত করবেন।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে থাকবে হেল্প ডেস্ক : ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার বলেন, কাজটি আরো সহজ করার জন্য প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একাধিক হেল্প ডেস্ক থাকবে। মানুষ সেসব হেল্প ডেস্ক থেকেই তাদের দলিল লেখার কাজ শেষ করতে পারবে। তবে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে তাদের একজন দলিল লেখকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে। তিনি জানান, এ জন্য রেজিস্ট্রি অফিসের একটি কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট থাকবে। সে ওয়েবসাইটে মৌজা অনুযায়ী জমির মূল্য, কোন দলিল করতে কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে এবং কোন দলিল রেজিস্ট্রি করতে কী কী কাগজপত্র দরকার হবে সেসব তথ্য জানা যাবে। ইচ্ছা করলে ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্যের প্রিন্ট নেওয়া যাবে। এ জন্য কাউকে কোনো খরচ দিতে হবে না। দেশের যেকোনো স্থান থেকে মানুষ সহজে এ সেবা নিতে পারবে।
অব্যবস্থা ও দুর্নীতি কমে যাবে : দলিল নিবন্ধন আধুনিকায়ন-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান ও আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন, দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা রেজিস্ট্রারের মহাফেজখানা ডিজিটাল হলে কাজে স্বচ্ছতা আসবে। সম্প্রতি তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এতে যেমন রেজিস্ট্রেশন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অব্যবস্থা ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে, তেমনি কাজে গতি আসবে। তবে কাউকে চাকরিচ্যুত করে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে না। তবে যারা দায়িত্বে থেকেও কোনো কাজ করে না এবং অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে, তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেওয়া হবে না।'
দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি আধুনিকায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কাউকে চাকরিচ্যুত করার জন্য নয়, সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য দলিল নিবন্ধন ও নকল পাওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকলনবিশ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন জানান, সরকারের আধুনিকায়ন কর্মসূচির প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হলে দেশের ২০ হাজার নকলনবিশের পথে বসা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না।
সূত্র মতে, এ সংশোধনের মাধ্যমে ১৯০৮ সালে প্রবর্তিত দলিল রেজিস্ট্রেশন আইনের বড় ধরনের পরিমার্জন হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছরের ৭ মার্চ ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলিল নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
এর আগে ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। দুই মাস পরীক্ষার পর ৭ মার্চ পাঁচটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং তিনটি জেলা রেকর্ড রুমে এ পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা দেওয়া শুরু হবে। গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটি এ সভা করে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে পাঁচটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং তিনটি জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের মহাফেজখানা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে তাদের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) ফান্ড থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলা রেকর্ড রুমের সাব-রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে জানান, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি সফল হলে সারা দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও মহাফেজখানা দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনা সম্ভব হবে। প্রথমে ঢাকা সদর, তেজগাঁও, উত্তরা, যশোর সদর, কুমিল্লা সদর এবং ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোর জেলা রেকর্ড রুম আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আসবে।
নকলনবিশদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা নেই : এদিকে এ আইন বাস্তবায়িত হলে সারা দেশের ৪৭৬টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ৬১টি জেলা রেজিস্ট্রারের মহাফেজখানায় কর্মরত নকলনবিশরা বেকার হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলিল নিবন্ধন করা হলে হাতে লেখা দলিল থাকবে না। দলিলের নকলও কম্পিউটারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে প্রিন্ট হয়ে বেরোবে। বর্তমানে দলিলের নকল করার জন্য সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার নকলনবিশ রয়েছেন।
দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, হাতে লেখা দলিল না থাকলেও মহাফেজখানার জন্য হাতে লেখা বালাম বই সংরক্ষণ করা হবে। আর তা লেখার জন্য নকলনবিশদের বিকল্প নেই।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) আবু আহমেদ জমাদ্দার কালের কণ্ঠকে জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলিল করা হলেও কোনো কর্মচারীকে কর্মচ্যুত না করার বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলিলের ভাষা সহজপাঠ্য হবে : আবু আহমেদ জমাদ্দার আরো জানান, এ পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে দলিল অবশ্যই কম্পিউটারে লিখতে হবে। এতে দলিলের ভাষা সহজপাঠ্য ও সুশৃঙ্খল হবে। অপ্রয়োজনীয় গৎ ও শব্দ থাকবে না এবং দলিলের স্থায়িত্ব বাড়বে। দলিল লেখার জন্য সারা দেশে একটি নির্দিষ্ট ফরম থাকবে। যেকোনো অল্প শিক্ষিত লোকও সেটি পূরণ করতে পারবেন। সেই ফরম পূরণ করার পর তা দলিল লেখকদের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে উপস্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অনলাইনের মাধ্যমে দলিলের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা নিবন্ধন করে দেবেন। এ জন্য তিনি সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড), ভূমি জরিপ অধিদপ্তর এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এতে কম্পিউটারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে দলিলে উপস্থাপিত সব তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাবেন সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার। তথ্য সঠিক হলে তিনি নিবন্ধনকাজ শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে মূল দলিল দিয়ে দেবেন।
হয়রানি থাকবে না : বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাহফুজুর রহমান খান বলেন, এর মাধ্যমে দেশে দলিল রেজিস্ট্রেশন বিভাগে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে। দলিল রেজিস্ট্রি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে হয়রানি-ভীতি থাকবে না।
জানা যায়, এ পদ্ধতিতে দলিল নিবন্ধন করার আগে কম্পিউটারে কম্পোজ করা দলিলের সঙ্গে খাজনা পরিশোধের রসিদ, খারিজের পর্চা, ডিসিআর ও জরিপের পর্চা পেশ করা বাধ্যতামূলক। এসব কম্পিউটারে স্ক্যান করে নিজস্ব ইউনিক আইডির মাধ্যমে রাখা হবে। এরপর টিপসই এবং দলিল দাতা, গ্রহীতা ও শনাক্তকারীর ছবি নেওয়া হবে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে। এসব কাজ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেই করতে হবে, যেমনটি বর্তমানে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) ক্ষেত্রে করা হচ্ছে। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর মূল দলিল, দাতা-গ্রহীতার স্বাক্ষর, ছবিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় কম্পিউটারে স্ক্যান করে রাখা হবে কেন্দ্রীয় সার্ভারে। এরপর দলিলে উল্লিখিত দাতা-গ্রহীতার নাম-ঠিকানা, মৌজার নাম, জমির দাগ নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ডেটাবেইসের মাধ্যমে একটি ইনডেঙ্ (সূচিপত্র) করা হবে। পরে রেজিস্ট্রি করা দলিল নম্বরের ভিত্তিতে একটি ইউনিক আইডি সংরক্ষণ করা হবে। এ আইডির মাধ্যমে সহজেই বের করা যাবে দলিলটি। সব কাজ শেষ হওয়ার পরই মূল দলিলটি পাওয়া যাবে। এরপর পুরো প্রক্রিয়ার একটি ছাপা কপি বের করা হবে, যা নকলনবিশরা বালাম বইয়ে নথিভুক্ত করবেন।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে থাকবে হেল্প ডেস্ক : ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার বলেন, কাজটি আরো সহজ করার জন্য প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একাধিক হেল্প ডেস্ক থাকবে। মানুষ সেসব হেল্প ডেস্ক থেকেই তাদের দলিল লেখার কাজ শেষ করতে পারবে। তবে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে তাদের একজন দলিল লেখকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে। তিনি জানান, এ জন্য রেজিস্ট্রি অফিসের একটি কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট থাকবে। সে ওয়েবসাইটে মৌজা অনুযায়ী জমির মূল্য, কোন দলিল করতে কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে এবং কোন দলিল রেজিস্ট্রি করতে কী কী কাগজপত্র দরকার হবে সেসব তথ্য জানা যাবে। ইচ্ছা করলে ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্যের প্রিন্ট নেওয়া যাবে। এ জন্য কাউকে কোনো খরচ দিতে হবে না। দেশের যেকোনো স্থান থেকে মানুষ সহজে এ সেবা নিতে পারবে।
অব্যবস্থা ও দুর্নীতি কমে যাবে : দলিল নিবন্ধন আধুনিকায়ন-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান ও আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন, দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা রেজিস্ট্রারের মহাফেজখানা ডিজিটাল হলে কাজে স্বচ্ছতা আসবে। সম্প্রতি তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এতে যেমন রেজিস্ট্রেশন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অব্যবস্থা ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে, তেমনি কাজে গতি আসবে। তবে কাউকে চাকরিচ্যুত করে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে না। তবে যারা দায়িত্বে থেকেও কোনো কাজ করে না এবং অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে, তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেওয়া হবে না।'
দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি আধুনিকায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কাউকে চাকরিচ্যুত করার জন্য নয়, সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য দলিল নিবন্ধন ও নকল পাওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকলনবিশ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন জানান, সরকারের আধুনিকায়ন কর্মসূচির প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হলে দেশের ২০ হাজার নকলনবিশের পথে বসা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না।
No comments