অভিমতঃ সীমান্ত বিরোধের অবসান চাই
বাংলাদেশ ও ভারত দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুটি দেশের ভূখণ্ড একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছে। যেন কেউ কাউকে ছাড়া চলে না। কিন্তু ভারত শুধু নামের বন্ধু, কাজের দিক দিয়ে সব সময় আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে থাকে বাংলাদেশের সঙ্গে। তার প্রমাণ সীমান্তের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, বাংলাদেশীদের দেখামাত্র পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
তারা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় না, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঢুকে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে টেনে-হেঁচড়ে ভারত ভূখণ্ডে নিয়ে নির্যাতন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসী আচরণ বাংলাদেশ সরকার চুপ করে শুনে যাচ্ছে, কোনো জবাব দিচ্ছে না, প্রতিবাদ করছে না। সীমান্তে বিএসএফের আরেকটি আগ্রাসন ছিল ২০০১-এ, রৌমারী জেলার বড়াইবাড়ি সীমান্তে ১ ব্যাটলিয়ন সৈন্য নিয়ে বিডিআর ক্যাম্প দখলের অপচেষ্টা চালায় বিএসএফ, সেই আগ্রাসন প্রতিহত করে শোচনীয়ভাবে হারিয়েছিল বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বীর জওয়ানরা। তখন বিডিআর মহাপরিচালকের নির্দেশেই দেশ রক্ষায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ৩ বিডিআর। তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। প্রতিবেশী দেশ হামলা চালালো অথচ তখনকার আ’লীগ সরকার, কোন জবাব দিল না। সেই পরাজয়ের পরও নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ভারত। মাত্র ২১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক চালুর কথা বলে দীর্ঘ ৩৫ বছরেও বন্ধ করেনি ভারত ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধ। যার ফলে তিস্তা নদী আজ ধু ধু বালুচর।
বরাক নদীর উপর টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ভারত, যার পরিণামে সিলেট অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে, মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতি হলেও সরকারি দলের মন্ত্রীরা ভারতের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘টিপাই বাঁধ বাংলাদেশের জন্য লাভবান’—এ নিয়ে বিরোধী দল বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিলে পুরনো অভিযোগ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় এবং বিএনপিকে জঙ্গিজোট বলে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে সমুদ্রসীমা নিয়ে সমস্যা। সমুদ্র সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বার বার বৈঠক হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এরই জের ধরে গত নভেম্বরে ভারতীয় রণসজ্জিত ৩টি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশের দাবিকৃত সমুদ্র এলাকায় প্রবেশ করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করে। বাংলাদেশও তার রণসজ্জিত ২টি যুদ্ধজাহাজ বিরোধপূর্ণ এলাকায় পাঠিয়ে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ৩ দিন বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতের ৫টি সাবমেরিন মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় এক যুদ্ধ আতঙ্ক বিরাজ করছিল উপকূলের মানুষের মধ্যে। পরে ভারত তার যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নেয়। গত ডিসেম্বরেও বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নিয়ে শেষ বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ইকোডিস্ট্যান্স পদ্ধতিতে সীমারেখা টানতে চায় এবং ভারত ইকুইটি পদ্ধতিতে রেখা টানতে চায়। ইকুইটি পদ্ধতিতে রেখা টানলে সমুদ্রের বড় একটি অঞ্চলের ওপর থেকে সার্বভৌমত্ব হারাবে বাংলাদেশ। সমুদ্রের ওপর আরেকটি আগ্রাসী নজরের নাম মিয়ানমার। মিয়ানমার বাংলাদেশের যে সমুদ্র এলাকাই দাবি করেছে, যা অবাক হওয়ার মতো। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বার বার সমঝোতার চেষ্টা করে আসছে বাংলাদেশ, কিন্তু আজও তা সফল হয়নি। তেল-গ্যাসপূর্ণ সাগর পাওয়ার জন্য তর সইছিল না মিয়ানমারের। তাই তো তড়িঘড়ি করে ১২টি যুদ্ধজাহাজ ও দাইয়ু তেল কোম্পানির রিগ নিয়ে বাংলাদেশের পানিসীমায় ঢুকে সমুদ্র দখলের জন্য। পরে চীন ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মিয়ানমার যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে, অথচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘একটি মহল চায় মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে।’ সেই মহলটির পরিচয় জানতে চাই, পাশাপাশি এসব সমস্যার সমাধান চাই।
আবদুর নূর হাসিব
লালবাগ রোড, ঢাকা
No comments