প্রথম চন্দ্রবিজয়ীর বিদায়- মানুষকে চাঁদে নিয়ে অন্যলোকে আর্মস্ট্রং

‘একজন মানুষের একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য এক বিরাট অগ্রগতি।’ প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রেখে যিনি মানবজাতিকে এই বিরাট অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন, সেই নিল আর্মস্ট্রং আর নেই। ৮২ বছর বয়সে গত শনিবার তিনি মারা গেছেন।


আর্মস্ট্রংয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হূৎপিণ্ডের কয়েকটি ধমনিতে রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়ার পর চলতি মাসের প্রথম দিকে আর্মস্ট্রংয়ের বাইপাস সার্জারি করা হয়। এরপর অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতায় তিনি মারা গেছেন। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার এক মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনসিনাটিতে মারা গেছেন আর্মস্ট্রং।
মানুষের চন্দ্রজয়ের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে এবং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রেখে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন আর্মস্ট্রং। সেটা ছিল ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল নভোযান অ্যাপোলো-১১। নভোযান থেকে বেরিয়ে এলেন এই অভিযানের কমান্ডার আর্মস্ট্রং। পা রাখলেন চাঁদের বুকে। আর মুখে বললেন, ‘একজন মানুষের একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য এক বিরাট অগ্রগতি।’ চাঁদের বুকে মানুষের পা রাখার সেই দৃশ্য টেলিভিশনে সরাসরি দেখল বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ।
ওই অভিযানে আর্মস্ট্রংয়ের সহ-নভোযাত্রী ছিলেন এডউইন অলড্রিন। আর্মস্ট্রংয়ের পর দ্বিতীয় মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রাখেন তিনি। অভিযানে আরও অংশ নেন অ্যাপোলোর পাইলট মাইকেল কলিন্স। তবে তিনি নভোযান থেকে বের হননি। চাঁদের পৃষ্ঠে মোট সাড়ে ২১ ঘণ্টা অবস্থান করে অ্যাপোলো। এর মধ্যে আড়াই ঘণ্টা চাঁদের বুকে হাঁটা-চলা করেন আর্মস্ট্রং-অলড্রিন।
আর্মস্ট্রংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যথাতুর স্বজনেরা আশা প্রকাশ করেছেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নতুন প্রজন্মকে আরও কঠোর পরিশ্রমে উৎসাহিত করবে আর্মস্ট্রংয়ের অবদান।
গভীর শোক প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘আর্মস্ট্রং আমেরিকার সবচেয়ে বড় নায়ক। তিনি শুধু তাঁর সময়ের নন, সর্বকালের।’
তবে সর্বকালের সবচেয়ে বড় এই নায়ক তাঁর দুনিয়াজোড়া খ্যাতিতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না। আর্মস্ট্রং নিজেকে সব সময় আড়ালে রাখতে চাইতেন। এমনকি তাঁর অটোগ্রাফ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে—এ কথা জানার পর তিনি স্মরণিকায় স্বাক্ষর করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
আর্মস্ট্রংকে স্মরণ করে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণ করা প্রথম মার্কিন নভোচারী জন গ্লেন বলেন, ‘তিনি এ কথা ভাবতেই পারতেন না যে নিজেকে ফেরি করে বেড়াবেন। খুবই বিনয়ী মানুষ ছিলেন তিনি। চাঁদের মাটিতে পা রেখে বিখ্যাত হওয়ার পরও তিনি আগের মতোই সাদামাটা জীবনযাপন করতেন।’
আর্মস্ট্রংয়ের অ্যাপোলো-১১ অভিযানের সহযাত্রী অলড্রিনের আশা ছিল, ২০১৯ সালে চন্দ্রজয়ের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি, আর্মস্ট্রং ও মাইকেল কলিন্স একসঙ্গে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু সেটা আর হলো না। অলড্রিন বলেন, ‘আমি আজও যখন চাঁদের দিকে তাকাই, তখনই প্রায় চার দশক আগের সেই মুহূর্তটির কথা মনে পড়ে। তখন আমার মনে হয়েছিল, আমরা দুজন মানুষ পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকলেও একা নই।’
আর অ্যাপোলো-১১-এর পাইলট মাইকেল কলিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তিনিই (আর্মস্ট্রং) ছিলেন সেরা, আমি তাঁকে খুব অনুভব করব।’ এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.