ঈদের কেনাকাটায় প্রযুক্তিপণ্য by রেজা নওফল হায়দার

মানছুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার দুই ছেলের জন্য এবারের ঈদে জামাকাপড়ের পাশাপাশি যে জিনিসটা কিনে দেবার জন্য প্রবল ইচ্ছা জাগছে, সেটা হলো, একটা ল্যাপটপ। আর এমনি করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী অফিস কর্মকর্তা অথবা সে যে কোন পেশার মানুষ হোক না কেন।


প্রযুক্তি পণ্যের দিকে লোভনীয় একটা দৃষ্টি আমাদের রবাবরই থেকেছে। বাজেটে পুষিয়ে গেলে। কিনে ফেলতে নেই কোন ভাবনা। যেমনটা এবারের আনন্দ করেছে। তার এবারের আবদার আমি ঈদে জামাকাপড় চাই না। আমার টাকাটা আমাকে দাও, আমি এবার স্কিনটাচ মোবাইল কিনব। এমন আনন্দ অনেকের বাসায় আছে। আর থাকবে না কেন। ঈদের নতুন জামাকাপড় নেবার ধারণাটা অনেকটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন হাতে টাকা পেলেই কিনতে ছুটে যায়। প্রযুক্তি পণ্যের দিকে কেউ কিনবে ডিজিটাল ক্যামেরা। কেউবা ভাল একটা ল্যাপটপ, অথবা বহুল অপশন যুক্ত মোবাইল, ক্যামেরার আর মনের পর্দায় যদি লাগে দোলা তা হলে তো কথায় নেই। সোজাসুজি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে কিনবে হয়ত ফ্ল্যাটটিভি না হয়ত থ্রিজি টিভি। আর এখন তো ওয়াল টিভির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। যাই হোক নিশ্চিয়ই পাঠক অপেক্ষা করে আছেন, এবারের প্রযুক্তি পণ্যের বাজারদরটা কেমন। আর তা আপনার সুবিধার্থে বলা প্রয়োজন, বাজেটে যাই-ই রাখুক না কেন। প্রযুক্তি পণ্যগুলো এখনও রয়েছে আপনার হাতের নাগালে। এছাড়া দেশী ব্র্যান্ড ওয়ালটন তাদের পণ্য সমাহারে নিয়ে এসেছে থ্রিজি টিভি আর ফ্ল্যাট টিভি। আর ফ্রিজ আর টিভির দাম বরাবরই রয়েছে বিশ হাজার টাকা থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সনি কোম্পানির ব্রাভিয়া অথবা প্যানাসনিকের ফ্রিজ ইন্টারনেট টিভি কিনতে গেলে আপনাকে বেশ কত টাকা গুনতে হবে। আর ভ্যাট দিতে হবে আরো বেশ কত টাকা। এই টিভিগুলোকে বর্তমান সময়ে বলা হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স টিভি। আর দাম পড়বে ষাট হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে ডিভিডি অথবা ভিসিডি প্লেয়ারের দাম এবার বাড়তির দিকে। ব্রান্ডের গিটার কিনতে গেলে প্রথমে আপনাকে চার হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত দামের কথা মাথায় রাখতে হবে। আর এবারের ঈদের বাজারে লক্ষ্য করা গেছে ডিজিটাল ক্যামেরার বাড়তি চাহিদা। যে যখনই পারছে ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে ছুটে যাচ্ছে। এর পিছনে কারণ হলো, বেশ কিছু কোম্পানি তাদের নতুন প্রোডাক্টকে মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য বিভিন্ন ডিসকাউন্ড দিয়ে রেখেছে বছরজুড়ে। আর তাই সর্বনিম্ন ছয় হাজার টাকার মিলবে একটা স্টাইলিশ ডিজিটাল ক্যামেরা। আর এমনি করে আপনি যদি একটা ল্যাপটপ কিনতে চান তবে চটজলদি কিনে ফেলুন কারণ এই ঈদে প্রতিযোগিতার বাজারে বেশ নামী দামী ব্রান্ডগুলো তাদের ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। তবে পাঠক ইদানীং ল্যাপটপ না কিনে নেটবুক কেনার জন্য অনুরোধ করব। তার কারণ বহন সহজ ওজন কম নেটবুকের। আর সব কাজ করা যায় নিমেষেই। আপনি একটা নেটবুক কিনতে পারবেন একুশ হাজার টাকা সর্বোচ্চে। তাছাড়া ল্যাপটপ কেনা যাবে একত্রিশ হাজার টাকা থেকে ষাট হাজার টাকার মধ্যে।
ঈদে দেখতাম স্পিকার অথবা সাউন্ডবক্স দিয়ে রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে উঠতি বয়সের ছেলেরা বিভিন্ন খোশগল্পে মেতে উঠেছে। যদি বলি এখন এই সাউন্ডবক্স আপনার ঘরের একটি অংশ। পোটেবল সাউন্ডবক্স আর হোম বেইজড সাউন্ডবক্স মানুষের মনের বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ছিল। তেমনিভাবেই আপনি মাত্র দু’হাজার টাকায় নামকরা এবং ভাল গুণগতমানসম্পন্ন সাউন্ডবক্স পাবেন খুব সহজেই। টিনএজদের সর্বদাই মনের চাহিদা ছিল এমপি থ্রি অথবা ফোর। আর মোবাইল ফোনের বাজার দর এখন সবাই জানে। রাখে তার খোঁজখবর। তার একটা বিশেষ কারণ আছে। যেটা হলো প্রিয় জিনিসটার কত সহজে আরো এপ্লিকেশনসহ কোন ব্রান্ড কি অফার করছে।
আর বাজেট আর মনের চাহিদা মিললেই কিনে ফেলতে নেই সময়ের অপচয়। নকিয়া এবার নতুন একটা সেট নিয়ে এসেছে ‘আশা’ যার দাম আপনার হাতের নাগালেই। আর রয়েছে সব এপ্লিকেশন। এছাড়া স্যামসাং নিয়ে এসেছে স্বল্পমূল্যের গ্যালাক্সি ফোন। যার দাম হলো দশ হাজার টাকার উপরে। ডেক্সটপ দাম বলছি যা এই কারণে যে ডেক্সটপের দিকে খুব কম মানুষ ঝুঁকছে। তাহলে পাঠক এবার আপনার ঈদ কাটুক সুন্দর আর নিরাপদ।


ঈদে চাই ফ্যাশনেবল
সু



ড্রেসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঈদে সময়োপযোগী ফ্যাশনেবল জুতা মার্কেটে ও শপিংমলে সরবরাহ করে থাকে। এরই মধ্য থেকে তরুণ-তরুণীরা বিশেষ কিছু জুতা পছন্দ করে থাকে পোশাকের মতো করে। জুতা ব্যবসায়ীরা খেয়াল রাখে শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রডাক্ট সরবরাহ করতে। অনেক সময় দেখা যায় প্রিয় সিনেমার নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, লেখক বা বিশেষ ব্যক্তিত্বের অনুকরণে সুন্দর আঙ্গিকে ফ্যাশনটা বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে থাকে। যেমন গতবার ছিল প্রিয় জুতা সাকিরা। এবার আওয়ারা, বিপাশা, শিলা, মুন্নী বিভিন্ন ফিল্ম স্টারের অনুকরণে জমকালো জুতা তরুণীদের চাহিদা বেশি। তরুণরা ঈদে পাঞ্জাবির সঙ্গে দুই ফিতার স্যান্ডেল, স্যান্ডেল সু এবং সাইকেল সু-এর চাহিদা বেশি। ঈদের জুতা হওয়া চাই ঈদ পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন থ্রিপিস-শাড়ি যদি জমকালো, কাতান, পাতর পুঁতি-চুমকির কাজ করা থাকে তাহলে জুতা জোড়ায় পাথর-পুঁতির কাজ করা হলে মানায় ভাল। আর সুতির মধ্যে শৈল্পিক ডিজাইনের জামাকাপড়ের সঙ্গের জুতায় জমকালো ভাব বর্জন করা অতি আবশ্যক। এসব ড্রেসের মাল্টিকালারের ফিতার জুতা বা বড় জোড় কাঠের বোতাম পুঁতি বসানো জুতা মানানসই। ছেলেদের পাঞ্জাবির সঙ্গে চিকন ফিতা বা নকশি ফিতার স্যান্ডেল, সু, পরে ঈদ উৎসবের পুরোদিন কাটিয়ে দেয়া যায়। এছাড়া ছেলেদের শার্ট-প্যান্টের সঙ্গে পার্টি সু, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খুব মানানসই। পুরুষদের ফ্যাশন জগতে হাসপাপিস (ঐটঝঐ চটচওঊঝ) সব সময় এগিয়ে। পাশাপাশি কলিজন (ঈড়ষবুরড়হব) সু এবং এক্সক্লুসিভ সু তরুণ ও মধ্যবয়সীদের পছন্দের। এলিফ্যান্ট রোডের ফ্যালকন ও স্প্যারোসহ রাজধানীর হাতেগোনা কয়েকটি শোরুমে দেশী জুতার চমৎকার সমাহার রয়েছে। চামড়ার জুতার বাহারি ডিজাইন পাবেন এলিফ্যান্ট রোডের লিবার্টিতে। এখানে সম্পূর্ণ চামড়াজাত জুতার বিপুল সমাহার। পুরুষদের পার্টি সু এবং ক্যাজুয়েল সু পাবেন কয়েকটি রঙে বিভিন্ন ডিজাইনে। দাম পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে।
সাইকেল সু এবং স্যান্ডেল সু খাঁটি চামড়ার মধ্যে ২/৩ রঙের পাবেন। দাম পড়বে ১৪৫০-১৬৫০ টাকার মধ্যে। মেয়েদের সেমিহিল ৬৫০-৯৫০ টাকার মধ্যে। পেন্সিলহিল ১৪৫০-২৫০০ টাকার মধ্যে। শিশুদের ক্যাডস ও স্যান্ডেল সু ৪০০-১০৫০ টাকার মধ্যে। মেয়েদের চটিজুতা, সিøপার চিকন ফিতায় জড়ানো ছাত্রীদের জন্য চমৎকার। ঈদ উৎসব শেষ হওয়ার পর জুতার যতœ যেন শেষ না হয়। শখের জুতা জোড়া সাইনিং দিয়ে শো আলমিরা বা বক্সে তুলে রাখুন। পারিবারিক বা সামাজিক উৎসবে যাওয়ার সময় মনে হবে সদ্য সংগ্রহ। কোন জুতা ভিজে গেল বা বৃষ্টির ছাট লাগলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বা বাতাসে দিয়ে দ্রুত শুকিয়ে নিন। ঈদের পথ চলা আরামদায়ক করতে বেছে নিতে হবে পছন্দসই জুতো। যা আপনার ব্যক্তিত্ব এবং ফ্যাশন দুটোকেই প্রকাশ করবে।

No comments

Powered by Blogger.