কত বছর বাঁচতে চান? by আনোয়ার হোসেন

বাংলাদেশে গড় আয়ু পুরুষদের ৬৮ এবং নারীদের প্রায় ৭২ বছর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি, পুষ্টি-স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে আয়ু ক্রমাগত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯০০ সালে গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮০ বছর।


বাইপাস সার্জারি, ক্যান্সারের ওষুধ এবং এ ধরনের যুগান্তকারী সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আয়ু কত বছর বাড়তে পারে? একদল মনে করে, আরও এক বা দুই দশক বাড়তে পারে। কেউবা মনে করেন, ১৩০-১৪০ বছরও হতে পারে।
জাতিসংঘের এক হিসাবে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরে নারীদের গড় আয়ু উন্নত দেশগুলোতে ১০০ বছরে পেঁৗছাতে পারে। আর উন্নয়নশীল বিশ্বে তা নব্বই বছর ছাড়িয়ে যাবে। পুরুষরা থাকবে নারীদের তিন-চার বছর পেছনে।
ডেভিড ই. ডানকান রোববার নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন, 'গত তিন বছরে আমি প্রায় ৩০ হাজার লোককে এ প্রশ্ন করেছি। তাদের কাছে সম্ভাব্য কয়েকটি উত্তরও রেখেছি_ ৮০ বছর (পাশ্চাত্যে এখন মোটামুটি এটাই গড় আয়ু), ১২০ বছর (এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ এতটা বয়স পর্যন্ত কিছু নারী-পুরুষ বেঁচেছে), ১৫০ বছর (এ ধরনের বয়স পেতে হলে বায়োটেক ব্রেক-থ্রু দরকার) এবং অমরত্ব (আয়ু সীমা বলে কিছু থাকা উচিত নয়, এমন বিশ্বাস)।'
তিনি উত্তরদাতাদের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজ্ঞান 'জরা-ব্যাধি জয় করার' কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কারে নাটকীয় সফলতা দেখাবে, এটা আশা করা ঠিক নয়। তবে তারা এমন সম্ভাবনা ধরে নিতে পারে কিংবা নাও পারে। যেসব উত্তর এসেছে তাতে দেখা যায় প্রায় ৬০ শতাংশ নারী-পুরুষ ৮০ বছর বয়সকেই পছন্দ করছেন। ৩০ শতাংশ ১২০ বছর পর্যন্ত জীবনকে উপভোগ করতে চান। প্রায় ১০ শতাংশ মনে করেন, দেড়শ' বছর বেঁচে থাকাটা দারুণ ব্যাপার হবে। মানুষের আদৌ মৃত্যু কাম্য নয়, এমনটি মনে করেন ১ শতাংশেরও কম। উত্তরদাতাদের মধ্যে ছিলেন স্কুলের ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। বিজ্ঞানীরা বয়স-জয় করার ওষুধ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা চালাচ্ছেন। হৃৎপিণ্ড, লিভার এবং প্রাণী দেহের অন্যান্য অঙ্গের টিস্যু পরিবর্তন করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন এবং এ নিয়ে কাজ চলছে। কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডের কথা আমরা জানি। কিডনি নিয়েও পরীক্ষা কাজে সফলতা আছে। তবে মানুষের মস্তিষ্ক কিংবা স্নায়ুতন্ত্রের সেল ট্রান্সপ্লান্ট এখনও অনেক দূরের বিষয় বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থান মেশিন নিতে পারে কিনা, সেটাও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। পেসমেকার অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছে। বধিরদের জন্য শ্রবণ যন্ত্র সফল প্রমাণিত হয়েছে। কোনো কোনো ধরনের প্যারালাইসিস জয় করাও সম্ভব বলে এখন ধারণা করা হয়। দেখা যায়, এর ধারাবাহিকতায় আর কী কী যন্ত্র আবিষ্কৃৃত হয়।
তবে এসব সম্ভাবনা সত্ত্বেও আয়ু সম্পর্কে মানুষ তাদের মনোভাব খুব একটা পাল্টাতে চায় না। প্রাণের শেষ আছে_ এটা মেনে নিতেই যেন তারা প্রস্তুত। আয়ু বাড়তে থাকলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে যেসব গুরুতর সমস্যা দেখা দেবে, সেটাও অনেককে চিন্তিত করছে। একঘেয়েমি আসতে পারে। চিকিৎসার ঝামেলা থাকবে এবং এটা যে ব্যয়বহুল হবে তাতে সন্দেহ নেই। শতবর্ষী নারী-পুরুষে অনেক দেশ ভরে থাকলে তাদের নাতি-পুতিদের চাকরি পেতেও
সমস্যা হবে।
আবার কেউ কেউ মনে করেন, দীর্ঘজীবন পেলে জিনিয়াসরা মানবজাতির জন্য অনেক অনেক অবদান রাখতে পারবেন। স্টিভ জবসকে আমাদের আরও অনেকদিন প্রয়োজন ছিল। আলবার্ট আইনস্টাইন বেঁচে থাকলে এখন তার বয়স হতো ১৩৩ বছর। তিনি কি এত বছর বেঁচে থাকতে চাইতেন? ১৯৫৫ সালে তার দেহে গুরুতর জটিলতা দেখা দিলে তিনি অস্ত্রোপচারে রাজি হননি। তিনি বলেন, কৃত্তিমভাবে আয়ু বাড়ানো অর্থহীন। আমি আমার যা করার করেছি। এখন সময় হয়েছে
চলে যাওয়ার। এটাকে আমি
সাহসের সঙ্গে মেনে নেব।
 

No comments

Powered by Blogger.