বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদু মিয়া by এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় মহান দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক নায়ক হচ্ছেন জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া। আজ তার ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিটি সমাজ তার ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই জন্ম দেয় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমাদের সমাজে এমনই একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান হচ্ছেন যাদু মিয়া। জাতীয় রাজনীতির বহু ক্ষেত্রে তার মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
সুবক্তা ও সুচিন্তার অধিকারী। জননেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া সারা জীবন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। মশিউর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য একটি শোষণমুক্ত প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা।
১৯২৪ সালের ৯ জুলাই তত্কালীন রংপুর জেলা আজকের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওসমান গণি ও মা আলহাজ আবিউন নেছা তত্কালীন সমাজে অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাদের জমিদারী ছোট হলেও জোতদারি ছিল বড়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিন বার্মা গমন ও যুদ্ধাহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ৪০ দশকের দুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের চরাঞ্চলে যখন প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপই তার নামানুসারে একটি চরের নামকরণ করা হয় ‘যাদুর চর’। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় সহিংসতার বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে হত্যাযজ্ঞের বীভত্সতার ছবি তুলে যাদু মিয়া একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন, যা তত্কালীন ব্রিটিশ সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেললে ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে। দিল্লিতে তার ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় তিনি নিজেই নিজেকে ডিফেন্ড করেন।
রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনারারি সেক্রেটারি ও ১৯৫৪-৫৮ পর্যন্ত রংপুর জেলা কনজুমারস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বৃহত্তর রংপুরের নির্বাচিত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫০-এর দশকের শেষদিকে রংপুর জেলা বোর্ডের কনিষ্ঠতম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পর পর দু’বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্বপাকিস্তান যুবলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যুব উত্সব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ওই একই সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর চীনে পাকিস্তানি সরকারি সফরে প্রতিনিধি দলের নেতা মওলানা ভাসানী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনিই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য যাদু মিয়া পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এবং জাতীয় পরিষদে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলে ধরেন।
১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৬৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে গণআন্দোলনের যে সূচনা হয়েছিল সেখানেও তিনি পালন করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । ৬০-এর দশকের শেষের দিকে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও আইয়ুব বিরোধী ১১ দফা আন্দোলনে জাতীয় পরিষদের ভেতরে ও বাইরে সোচ্চার দাবি উপস্থাপন করেন এবং মওলানা ভাসানীর আহ্বানে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬৯ সালে টোবাটেকসিং-এ কৃষক সম্মেলনে ইয়াহিয়া খানকে গাদ্দার বলার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পল্টনে স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে যাদু মিয়া মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জনসভায় ন্যাপের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এবং প্রতীকী পতাকা উত্তোলন করেন। যা ২৪ মার্চ তত্কালীন পূর্বপাকিস্তানের সব জাতীয় দৈনিক ও ভারতের কলকাতার সব পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই তিনি দেশ ত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত হন। কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে একটি জাতীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এ লক্ষ্যে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। তখন মওলানা ভাসানী ভারতে গৃহবন্দি ছিলেন। তার এই উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করে ভারতের তত্কালীন সরকার ও মুষ্টিমেয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এ সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হলে ছাত্রলীগ নেতা তবিবুল ইসলাম তাকে নিয়ে ডিমলায় চলে আসেন। সে সময় পাকসেনারা তার গ্রামের বাড়ি, রংপুর শহরের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও তার এক অনুসারীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং তাকে গ্রেফতার করে রংপুরে নজরবন্দি হিসেবে রেখে দেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে গ্রেফতার করে এবং তখন তিনি তিন বছর দুই মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৪ সালে সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৭৪ সালের জুনে আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তিনি কারামুক্ত হন। ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বরের পটপরিবর্তনের পর শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি জিয়াউর রহমানের পাশে এসে দাঁড়ান। ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর ন্যাপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রগতিশীল-দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমন্বয়ে প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দিতে ন্যাপের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী যাদু মিয়া ১৯৭৯ সালের ২১ মাচ আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নেন।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
১৯২৪ সালের ৯ জুলাই তত্কালীন রংপুর জেলা আজকের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওসমান গণি ও মা আলহাজ আবিউন নেছা তত্কালীন সমাজে অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাদের জমিদারী ছোট হলেও জোতদারি ছিল বড়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিন বার্মা গমন ও যুদ্ধাহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ৪০ দশকের দুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের চরাঞ্চলে যখন প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপই তার নামানুসারে একটি চরের নামকরণ করা হয় ‘যাদুর চর’। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় সহিংসতার বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে হত্যাযজ্ঞের বীভত্সতার ছবি তুলে যাদু মিয়া একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন, যা তত্কালীন ব্রিটিশ সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেললে ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে। দিল্লিতে তার ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় তিনি নিজেই নিজেকে ডিফেন্ড করেন।
রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনারারি সেক্রেটারি ও ১৯৫৪-৫৮ পর্যন্ত রংপুর জেলা কনজুমারস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বৃহত্তর রংপুরের নির্বাচিত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫০-এর দশকের শেষদিকে রংপুর জেলা বোর্ডের কনিষ্ঠতম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পর পর দু’বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্বপাকিস্তান যুবলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যুব উত্সব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ওই একই সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর চীনে পাকিস্তানি সরকারি সফরে প্রতিনিধি দলের নেতা মওলানা ভাসানী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনিই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য যাদু মিয়া পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এবং জাতীয় পরিষদে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলে ধরেন।
১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৬৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে গণআন্দোলনের যে সূচনা হয়েছিল সেখানেও তিনি পালন করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । ৬০-এর দশকের শেষের দিকে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও আইয়ুব বিরোধী ১১ দফা আন্দোলনে জাতীয় পরিষদের ভেতরে ও বাইরে সোচ্চার দাবি উপস্থাপন করেন এবং মওলানা ভাসানীর আহ্বানে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬৯ সালে টোবাটেকসিং-এ কৃষক সম্মেলনে ইয়াহিয়া খানকে গাদ্দার বলার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পল্টনে স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে যাদু মিয়া মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জনসভায় ন্যাপের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এবং প্রতীকী পতাকা উত্তোলন করেন। যা ২৪ মার্চ তত্কালীন পূর্বপাকিস্তানের সব জাতীয় দৈনিক ও ভারতের কলকাতার সব পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই তিনি দেশ ত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত হন। কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে একটি জাতীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এ লক্ষ্যে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। তখন মওলানা ভাসানী ভারতে গৃহবন্দি ছিলেন। তার এই উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করে ভারতের তত্কালীন সরকার ও মুষ্টিমেয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এ সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হলে ছাত্রলীগ নেতা তবিবুল ইসলাম তাকে নিয়ে ডিমলায় চলে আসেন। সে সময় পাকসেনারা তার গ্রামের বাড়ি, রংপুর শহরের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও তার এক অনুসারীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং তাকে গ্রেফতার করে রংপুরে নজরবন্দি হিসেবে রেখে দেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে গ্রেফতার করে এবং তখন তিনি তিন বছর দুই মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৪ সালে সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৭৪ সালের জুনে আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তিনি কারামুক্ত হন। ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বরের পটপরিবর্তনের পর শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি জিয়াউর রহমানের পাশে এসে দাঁড়ান। ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর ন্যাপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রগতিশীল-দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমন্বয়ে প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দিতে ন্যাপের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী যাদু মিয়া ১৯৭৯ সালের ২১ মাচ আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নেন।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
No comments