কার অপেক্ষায় by আল মাহমুদ
অদ্ভুত সব দুশ্চিন্তা নিয়ে আমি বেঁচে থাকি। কেবল কেন যে মনে হয় একটা ভূমিকম্প হবে। কোনো যুক্তি নেই। কোনো সঠিক প্রমাণ উত্থাপন করতে পারব না। এ রকম কেন মনে হয় সেটা বার বার নিজেকে জিজ্ঞেস করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কারণ নেই। অকারণও খুঁজে পাই না।
অথচ আমার মন এমন সব অদ্ভুত সিদ্ধান্ত কোথায় খুঁজে পায় সেটাও ঠিকমত বুঝতে পারি না। প্রায়ই আমার মানসিক চিন্তা-ভাবনাকে আমি একপাশে রেখে চলতে চাই। চলেও তো এসেছি বহুদূর। তবুও অদ্ভুত উদ্ভট নানা দৃশ্যকল্প আমাকে উত্ত্যক্ত করে মারে। কী যে দেখি আর কী যে লিখি তার কোনো সঠিক কার্যকারণ খুঁজে পাই না। তবুও তো আমি একদা পছন্দ করেই লেখকের বৃত্তি গ্রহণ করেছিলাম। আজ এর জন্য আফসোস করি বটে। কিন্তু কোনো অনুশোচনা করি না। আমি যা কিছু পেয়েছি লিখেই পেয়েছি। আর মনে হয় যা কিছু পাইনি সেটা না লিখতে পারার জন্যই পাইনি। কথাটার মধ্যে সত্য থাকতে পারে। মিথ্যা থাকলেও আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার আশা কখনও আমার ভাষাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। আমি কবি। এতে আমি তৃপ্ত। যারা বলেন, আর উনি তো কবি আমি তাদের থেকে দশ হাত দূরে থাকি।
আমি কবি বটে। কিন্তু নির্জলা মিথ্যার উপর আমি কোনো কিছুই গড়ে তুলতে চাই না। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে কবিতার জগত্ তৈরি হয়। কিন্তু কবিতার জগতে মানুষ বসতি স্থাপন করে না।
আমি একদা ভাবতাম, আমি আমার জন্য একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থা নির্মাণ করব। আমার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমি নিজের জন্য কোনো আলাদা আবাস গড়ে তুলতে পারিনি। বরং আর দশজন যেভাবে জীবন কাটায় আমি তেমনি একটা পরিস্থিতির মধ্যে বেঁচে আছি। পার্থক্য শুধু এই আমি স্বপ্ন দেখি।
আমার স্বপ্ন একজন কবির স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। স্বপ্ন কি কাউকে কোথাও পৌঁছে দেয়? তবুও আমি আশা করি আমার স্বপ্নই আমাকে একদিন সবার মধ্যে সম্মানজনক একটি পরিস্থিতি তৈরি করে দেবে।
কারণ, আমি শুধু স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন লিখিও। সব মিলিয়ে আমি কোথাও না কোথাও একদিন পৌঁছে যাব। আমি কারও কোনোদিন অনিষ্ট করিনি। অনিষ্ট চিন্তা করিনি। সব সময় ভালোবাসার মধ্যে হৃদ্যতা এবং স্নেহ-মমতার মধ্যে বাস করতে চেয়েছি। এতে অবশ্য অযাচিত দুঃখ পেতে হয়। তবে আমার হজম করার ক্ষমতা আছে। আমি দুঃখ খেয়ে ফেলি। বিনিময়ে যদিও হাসি ছিটকে পড়ে না তবুও দুঃখকে গিলে ফেলার একটা তৃপ্তি আছে। আমি সেই তৃপ্তির মধ্যে এখন অবস্থান করছি।
আমি মানুষকে সব সময় ভালোবাসার কথা বলেছি। মানুষ মুচকি হেসে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবুও তো আমি একই কথা একই প্রস্তাবনা এবং একই সম্ভাবনার কথা ক্রমাগত বলে যেতে চাই। এতে কে কোথায় পৌঁছুবে সেটা আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আমার কথা হলো আমি কবির দায়িত্ব পালন করেছি। বলা যায়, আমার চেয়ে অধিক পরিমাণে নিজের কবিত্বশক্তির ব্যবহার আর কেউ করেছে কিনা আমি তা জানি না। আমি করেছি এতেই আমি পরিতৃপ্ত।
সবাই সর্বাগ্রে ভালোবাসার কথা বলে। যখন বলে আমি তখন বক্তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। পর মুহূর্তেই ওই মুখে কেমন যেন অপ্রেমের ঘনঘটা ওই মুখে আবছা কালিমা ছড়িয়ে দেয়।
আমি জানি না কেন মানুষ এত প্রেমের কথা বলে। অথচ অপ্রেমের পাটাতনে দাঁড়িয়ে কেবল মিথ্যারই প্ররোচনা ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ভালোবাসা একটা ব্যাপার বটে। প্রেম ছাড়া সেটা হয় না। যারা প্রেমের চর্চা করে তাদের চেহারা দেখলেই বোঝা যায় এই লোকটি বা মহিলাটি বোকামির চর্চা করছে। তবে তাদের উপর মানুষের ক্রোধ জন্মায় না। কেউ এ ধরনের নর-নারীর প্রতি কোনো দোষারোপ বা অনিষ্টকর কোনো কিছুই চাপিয়ে দেয় না।
এভাবেই তো আমি জগত্ সংসারকে এ পর্যন্ত অবলোকন করে এসেছি। যারা ভালোবাসার চর্চা করে তারা মাঝেমধ্যে দুঃখ পায় বটে। তাদের মুখে থাকে এক সর্বজয়ী প্রশান্ত হাসির ফোয়ারা। তারা যখন হাসে তখন চতুর্দিক কাঁপিয়ে পরিবেশটা হাস্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মনে হয় হাসি ছাড়া জগত্ বুঝি চলছে না।
এহেন হাসি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন স্বপ্নদ্রষ্টা কবির আগমন। কারণ, কবিরাই আসলে প্রেমের পৌরহিত্য করে এবং হাসি হলো একজন কবির সবচেয়ে মূল্যবান আয়োজন।
তাহলে শুধু হাসিতে তো জগত্ চলে না। মাঝে মাঝে চোখের জলও দরকার হয়। এটা বুঝতে হবে। চোখের জলের দাম কত? যারা চোখের জলের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে তাদের কাছে পৃথিবীর সব হাসি-কান্নারই একটা পটভূমি থাকে। কখন চোখের জল না হলে জগত্ আর সামনের দিকে গড়ায় না সেটা বোঝার জন্যও সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো পুরোহিত দরকার। আর সেই পৌরহিত্য করেন একজন কবি। কোথা থেকে তিনি আসবেন তা আমরা জানি না। আমরা জানি একজন কবি আসবেন। তার আগমন বার্তা আপনা থেকেই জগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কেবল অপেক্ষা। এই যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, কার জন্য দাঁড়িয়ে আছি?
সবাই জানে। কিন্তু কেউ বলে না। সবাই ভাবে অনিবার্য। কিন্তু কেউ শব্দ করে না। সবটাই হলো নৈঃশব্দের নীরবতা মাত্র। সবাই দাঁড়িয়ে থাকবে অপেক্ষায়, উত্তেজনায় এবং ভালোবাসায়।
লেখক : কবি
আমি কবি বটে। কিন্তু নির্জলা মিথ্যার উপর আমি কোনো কিছুই গড়ে তুলতে চাই না। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে কবিতার জগত্ তৈরি হয়। কিন্তু কবিতার জগতে মানুষ বসতি স্থাপন করে না।
আমি একদা ভাবতাম, আমি আমার জন্য একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থা নির্মাণ করব। আমার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমি নিজের জন্য কোনো আলাদা আবাস গড়ে তুলতে পারিনি। বরং আর দশজন যেভাবে জীবন কাটায় আমি তেমনি একটা পরিস্থিতির মধ্যে বেঁচে আছি। পার্থক্য শুধু এই আমি স্বপ্ন দেখি।
আমার স্বপ্ন একজন কবির স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। স্বপ্ন কি কাউকে কোথাও পৌঁছে দেয়? তবুও আমি আশা করি আমার স্বপ্নই আমাকে একদিন সবার মধ্যে সম্মানজনক একটি পরিস্থিতি তৈরি করে দেবে।
কারণ, আমি শুধু স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন লিখিও। সব মিলিয়ে আমি কোথাও না কোথাও একদিন পৌঁছে যাব। আমি কারও কোনোদিন অনিষ্ট করিনি। অনিষ্ট চিন্তা করিনি। সব সময় ভালোবাসার মধ্যে হৃদ্যতা এবং স্নেহ-মমতার মধ্যে বাস করতে চেয়েছি। এতে অবশ্য অযাচিত দুঃখ পেতে হয়। তবে আমার হজম করার ক্ষমতা আছে। আমি দুঃখ খেয়ে ফেলি। বিনিময়ে যদিও হাসি ছিটকে পড়ে না তবুও দুঃখকে গিলে ফেলার একটা তৃপ্তি আছে। আমি সেই তৃপ্তির মধ্যে এখন অবস্থান করছি।
আমি মানুষকে সব সময় ভালোবাসার কথা বলেছি। মানুষ মুচকি হেসে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবুও তো আমি একই কথা একই প্রস্তাবনা এবং একই সম্ভাবনার কথা ক্রমাগত বলে যেতে চাই। এতে কে কোথায় পৌঁছুবে সেটা আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আমার কথা হলো আমি কবির দায়িত্ব পালন করেছি। বলা যায়, আমার চেয়ে অধিক পরিমাণে নিজের কবিত্বশক্তির ব্যবহার আর কেউ করেছে কিনা আমি তা জানি না। আমি করেছি এতেই আমি পরিতৃপ্ত।
সবাই সর্বাগ্রে ভালোবাসার কথা বলে। যখন বলে আমি তখন বক্তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। পর মুহূর্তেই ওই মুখে কেমন যেন অপ্রেমের ঘনঘটা ওই মুখে আবছা কালিমা ছড়িয়ে দেয়।
আমি জানি না কেন মানুষ এত প্রেমের কথা বলে। অথচ অপ্রেমের পাটাতনে দাঁড়িয়ে কেবল মিথ্যারই প্ররোচনা ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ভালোবাসা একটা ব্যাপার বটে। প্রেম ছাড়া সেটা হয় না। যারা প্রেমের চর্চা করে তাদের চেহারা দেখলেই বোঝা যায় এই লোকটি বা মহিলাটি বোকামির চর্চা করছে। তবে তাদের উপর মানুষের ক্রোধ জন্মায় না। কেউ এ ধরনের নর-নারীর প্রতি কোনো দোষারোপ বা অনিষ্টকর কোনো কিছুই চাপিয়ে দেয় না।
এভাবেই তো আমি জগত্ সংসারকে এ পর্যন্ত অবলোকন করে এসেছি। যারা ভালোবাসার চর্চা করে তারা মাঝেমধ্যে দুঃখ পায় বটে। তাদের মুখে থাকে এক সর্বজয়ী প্রশান্ত হাসির ফোয়ারা। তারা যখন হাসে তখন চতুর্দিক কাঁপিয়ে পরিবেশটা হাস্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মনে হয় হাসি ছাড়া জগত্ বুঝি চলছে না।
এহেন হাসি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন স্বপ্নদ্রষ্টা কবির আগমন। কারণ, কবিরাই আসলে প্রেমের পৌরহিত্য করে এবং হাসি হলো একজন কবির সবচেয়ে মূল্যবান আয়োজন।
তাহলে শুধু হাসিতে তো জগত্ চলে না। মাঝে মাঝে চোখের জলও দরকার হয়। এটা বুঝতে হবে। চোখের জলের দাম কত? যারা চোখের জলের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে তাদের কাছে পৃথিবীর সব হাসি-কান্নারই একটা পটভূমি থাকে। কখন চোখের জল না হলে জগত্ আর সামনের দিকে গড়ায় না সেটা বোঝার জন্যও সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো পুরোহিত দরকার। আর সেই পৌরহিত্য করেন একজন কবি। কোথা থেকে তিনি আসবেন তা আমরা জানি না। আমরা জানি একজন কবি আসবেন। তার আগমন বার্তা আপনা থেকেই জগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কেবল অপেক্ষা। এই যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, কার জন্য দাঁড়িয়ে আছি?
সবাই জানে। কিন্তু কেউ বলে না। সবাই ভাবে অনিবার্য। কিন্তু কেউ শব্দ করে না। সবটাই হলো নৈঃশব্দের নীরবতা মাত্র। সবাই দাঁড়িয়ে থাকবে অপেক্ষায়, উত্তেজনায় এবং ভালোবাসায়।
লেখক : কবি
No comments