সড়কে প্রাণহানি-নিরাপত্তা এখনো অনিশ্চিত

স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষা দেওয়া হলো না রূপার। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলে পেঁৗছানো সম্ভব হয়নি তার। পথেই রূপার জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে। টিউটরের কাছে যাওয়ার পথে প্রাণ হারিয়েছে দুই বন্ধু মঞ্জুর ও আলামিন। পথেই নিভে গেছে দুই বন্ধুর জীবনপ্রদীপ। তারাও ঘাতক বাসের শিকার। এভাবে প্রতিদিন যন্ত্রদানব কেড়ে নিচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় প্রাণ। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অনেককেই মেনে নিতে হচ্ছে পঙ্গুত্বের অভিশাপ।


প্রিয়জনকে হারিয়ে অনেক পরিবার আজ পথে বসেছে। অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি প্রাণ হারিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। সেই অসহায় পরিবারগুলোর কথা কেউ মনে রাখেনি।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা যে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর পাঁচ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বেসরকারি হিসাবে এসব সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। আহতের সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। বিশ্বব্যাংকের একটি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আমাদের দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। আরেক গবেষণায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে গাড়িপ্রতি দুর্ঘটনার হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। শুধু ঢাকায়ই নাকি প্রতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের এই শীর্ষে অবস্থান নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বিআরটিএর একটি পুরনো হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশে গাড়ি চলে ১৩ লাখ। আর সারা দেশে বৈধ গাড়িচালকের সংখ্যা আট লাখ। এই হিসাব থেকে দেখা যায়, দেশে পাঁচ লাখ গাড়িচালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এই সংখ্যা আরো বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেবল যে চালকরাই দায়ী, তা নয়; অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পথচারীরাও দায়ী হতে পারেন। পথচারীদের অসচেতনতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য পথচারীদের সতর্কতারও প্রয়োজন। কিন্তু সড়কপথে যাদের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়া হয়েছে, তারা যাত্রীদের জন্য নিরাপদ কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। এর পাশাপাশি রয়েছে যানবাহনের ত্রুটি। এ ছাড়া যানবাহন অধ্যাদেশও সঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভেহিকল ট্র্যাকিংয়ের জন্য উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত বছর একটি আদেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশ কি পালিত হয়েছে?
নিরাপদ সড়কের জন্য একটি আন্দোলন চলছে দেশে। কিন্তু সড়কের নিরাপত্তা আজ পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। সড়ককে যান চলাচলের উপযোগী করতে হলে, সড়কপথের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দূর করতে হবে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আন্তরিকতাই নিশ্চিত করতে পারে সড়কপথের নিরাপত্তা।

No comments

Powered by Blogger.