নরসিংদী মেয়র উপনির্বাচন-বাদী-আসামি ভোটযুদ্ধ সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ by শাহেদ চৌধুরী ও প্রীতিরঞ্জণ সাহা
নরসিংদী পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচনে সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। জেলা রিটার্নিং অফিসার আবদুল অদুদ সমকালের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নির্বাচন শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
নরসিংদীর উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে সমধিক পরিচিত মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ লোকমান হোসেনের মৃত্যুর কারণে আগামী ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন লোকমান হোসেন।
এ ব্যাপারে শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়াসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন লোকমান হোসেনের ছোট ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি নির্বাচনে লড়ছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া। অর্থাৎ এই নির্বাচনে বাদী ও আসামি পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়েছেন। দু'জনই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। কামরুজ্জামান কামরুলকে সমর্থন করেছেন তিন সাংসদ নরসিংদী-১ আসনের লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক, নরসিংদী-২ আসনের ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী-৩ আসনের জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট আসাদোজ্জামান এবং পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সরকার সমর্থন করছেন মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়াকে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন না করলেও মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার প্রতি তার কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি সমর্থিত ভোটাররাই জয়-পরাজয় নির্ধারণে ফ্যাক্টর হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের মূল দুই প্রার্থীর মধ্যে যিনি বিএনপির ভোটারদের টানতে পারবেন, তিনিই জয়ী হবেন। এ ক্ষেত্রে জেলা বিএনপি সভাপতি খায়রুল কবির খোকন ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহীর দিকে তাকিয়ে আছেন কামরুজ্জামান কামরুল এবং মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে এই নির্বাচন হবে। এ কারণে নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় তুলনামূলকভাবে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য চার প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের হাজী আফজাল হোসেন মোল্লা, আমজাদ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক সাংসদ শামসুদ্দিন আহমেদ এছাকের ছেলে মোসাবি্বর আহমেদ নাসির এবং স্বতন্ত্র আরিফুল হক।
জেলা রিটার্নিং অফিসার আবদুল অদুদ জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে মোট ভোটার ৭৭ হাজার ৫৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮ হাজার ২৬৫ এবং নারী ৩৯ হাজার ৩১৬। কেন্দ্রের সংখ্যা ৩১টি। বুথ থাকবে ১৯৮টি। নির্বাচন চলাকালে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাবের চারটি স্ট্রাইকিং ফোর্সের প্রায় আড়াইশ' সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ পাহারায় থাকবেন। পুলিশের ১৬টি মোবাইল টিমও দায়িত্ব পালন করবে।
সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করায় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই ফল ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ওয়েব ক্যামেরা থাকবে। এর মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ওয়েব ক্যামেরা স্থাপনের ঘটনা ঘটবে। এর মাধ্যমে ঢাকায় অবস্থান করে নির্বাচন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রচার কার্যক্রম শেষ হবে।
মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়াকে শোকজ, ৪ জনকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড : নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নরসিংদীর সেবা সংঘ মন্দিরে গত রোববার সন্ধ্যায় ৪-৫শ' লোক নিয়ে নির্বাচনী সভা করার অভিযোগে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী (আনারস প্রতীক) মোন্তাজ উদ্দিন ভঁূইয়াকে শোকজ করা হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি ৬ ও ১৩-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে রিটার্নিং অফিসার মু. আবদুল অদুদ তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে মেয়র পদপ্রার্থী হাজী আফজল হোসেন (টেলিফোন) সমর্থক রিজভী এবং মোন্তাজ উদ্দিন ভঁূইয়ার (আনারস) তিন সমর্থক কানাই লাল দেব, এনামুল হক ও খালিদ হাসান সরকারকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
No comments