পবিত্র কোরআনের আলো-অশ্লীলতা ও পাপ কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা প্রকাশ্য হোক বা গোপন
৩২. ক্বুল মান হার্রামা যীনাতাল্লা-হিল্লাতী আখরাজা লিই'বা-দিহী ওয়াত্ত্বায়্যিবা-তি মিনার্ রিয্কি্ব; ক্বুল হিয়া লিল্লাযীনা আ-মানূ ফিল হাইয়া-তিদ্ দুনিয়া খা-লিসাতান ইয়াওমাল কি্বইয়া-মাতি্; কাযা-লিকা নুফাস্সিলুল আয়া-তি লিক্বাওমিন ইয়া'লামূন। ৩৩. ক্বুল ইন্নামা হার্রামা রাবি্বয়াল ফাওয়া-হিশা মা যাহারা মিনহা ওয়া মা বাত্বানা ওয়ালইছমা ওয়ালবাগইয়া বিগাইরিল হাক্কি ওয়া আন তুশরিকূ বিল্লা-হি মা লাম ইউনায্যিল বিহি ছুলত্বা-নান ওয়া আন তাক্বূলূ আ'লাল্লা-হি মা লা-তা'লামূন।
৩৪. ওয়া লিকুলি্ল উম্মাতিন আজালুন; ফায়িযা জা-আ আজালুহুম লা-ইয়াছতা'খিরূনা ছা-আ'তাওঁ ওয়ালা- ইয়াছতাক্বদিমূন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৩২-৩৪]
অনুবাদ : ৩২. (হে নবী!) আপনি বলুন, আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের জন্য যে সুন্দর পোশাক ও পবিত্র খাবার উদ্ভাবন করে দিয়েছেন, তা কে হারাম করে দিল? আপনি বলে দিন, এগুলো ইমানদারদের জন্য পার্থিব জীবনেও প্রাপ্য এবং পরকালে তো এগুলো বিশেষভাবে তাদের জন্যই। এভাবেই আমি আমার আয়াতগুলো জ্ঞানীদের জন্য বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি।
৩৩. আপনি (আরো) বলুন, আমার প্রভু অশ্লীল কাজগুলো হারাম করে দিয়েছেন। সেগুলো প্রকাশ্য হোক বা গোপনীয়। তা ছাড়া সব রকমের পাপ কাজ হারাম করা হয়েছে। (যেমন) সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বাড়াবাড়ি করা, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, যে ব্যাপারে তিনি তোমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নাজিল করেননি এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যার ব্যাপারে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই।
৩৪. প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য (উত্থান-পতনের) একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, যখন তাদের কাছে সেই নির্ধারিত সময় আসবে, তখন তারা একদণ্ড বিলম্ব করতে পারবে না বা একদণ্ড এগিয়েও আনতে পারবে না।
ব্যাখ্যা : ৩২ নম্বর আয়াতটি আগের প্রসঙ্গের ধারাবাহিকতায় এসেছে। আরবের অকুরাইশ গোত্রের লোকদের জন্য কাবাঘর তাওয়াফকালে বস্ত্র পরিধান যেমন হারাম মনে করা হতো, তেমনি জাহেলি যুগের লোকরা কোনো কোনো খাদ্যসামগ্রীকেও অকারণে হারাম সাব্যস্ত করেছিল। তা ছাড়া হুমস বা ধর্মীয় পুরোহিত গোত্রগুলো নিজেদের স্বাতন্ত্র্য ও আভিজাত্য বজায় রাখতে কোনো কোনো ধরনের মাংস নিজেদের জন্য হারাম করেছিল। অথচ এগুলো ছিল হালাল, আল্লাহর পক্ষ থেকে এগুলোর ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
এই আয়াতে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় খোলাসা করা হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, এই পৃথিবীতে আল্লাহর অবাধ্য ও গোনাহগার লোকরা বিস্তর ধন-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভবের মালিক। বিশেষ করে কাফেররা বিপুল প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আরাম-আয়েশে জীবন যাপন করে। এই আয়াতে এ প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়া হয়েছে। এ দুনিয়ায় আল্লাহর রিজিকের ভাণ্ডার সবার জন্য অবারিত। এতে মুমিন-কাফেরের কোনো ভেদাভেদ নেই। তবে আখিরাতে এসব নিয়ামত কেবল মুমিনদের জন্যই প্রাপ্য। সুতরাং দুনিয়ায় কারো প্রাচুর্য দেখে মনে করা উচিত নয় যে এটা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিদর্শন।
হারামকে হারাম এবং হালালকে হালাল বলার নৈতিকতা মেনে চলার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ৩৩ নম্বর আয়াতে প্রকৃতপক্ষেই হারাম এমন কতকগুলো বিষয়ের কথা আবারও উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতে যাবতীয় অশ্লীলতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে_সেটা প্রকাশ্য হোক বা গোপন। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে আমাদের কোনো গোপন বিষয় আল্লাহর কাছে গোপন নয়। তিনি সব দেখেন, বোঝেন ও জানেন। এরপর সব রকম গোনাহর কাজ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা_শিরকের পক্ষে কোনো দলিল কোনোকালেই নাজিল করা হয়নি। এরপর নিষিদ্ধ করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা কথা চাপিয়ে দেওয়াকে। এমনিতে তো যে কারো নামে অসত্য কথা চালিয়ে দেওয়া চরম অন্যায়, তদুপরি আল্লাহর নামে মিথ্যা কথা চাপানো অত্যন্ত বড় ধরনের পাপ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments