সাংসদ ও প্রশাসনের যোগসাজশে কত নদী রুদ্ধ হবে?-বাঁধ দিয়ে নদী দখল
দখল বিভিন্ন রকমের, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ তেমনই এক রকম। সারা দেশের ছোট-বড় অনেক নদীই এখন এ রকম দখলের শিকার। গত নভেম্বরে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদের পর এর নতুন শিকার হয়েছে সিলেটের সুরমার শাখানদী। স্থায়ী দখল হিসেবে নদী ভরাটের পাশাপাশি মাছ চাষের জন্য বাঁধ দিয়ে অস্থায়ী দখল এখন মোটামুটি নিয়মিত কর্মকাণ্ড হয়ে উঠেছে।
বাঁশ-বেত ইত্যাদির মাধ্যমে বাঁধ দিয়ে নদীটিতে নৌ-চলাচল বন্ধ করার এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সোমবারের প্রথম আলোয়। বরাবরের মতোই এসবের হোতা বা সুবিধাভোগী হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও আঞ্চলিক নেতারা; আর প্রশাসন হয়েছে সহযোগী।
বাঁধের কারণে নৌপথ বন্ধ ছাড়াও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার মৎস্যজীবীরা। তাদের প্রতিবাদ ঠেকাতে বাঁধের পাশে বসানো হয়েছে সশস্ত্র প্রহরা। সবই করা হচ্ছে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের নামে। নদীটি কাউনাই-কালোপানি জলমহালে গিয়ে মিশেছে আর এই জলমহালটি যে মৎস্যজীবী সমিতির তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়েছে, সেই সমিতির অন্যতম কর্তা হলেন সাংসদের ঘনিষ্ঠ লোক এবং স্থানীয় যুবলীগের নেতা। যেখানে তিতাস নদীর ওপর মাল পরিবহনে মাটির বাঁধ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা যে উৎসাহিত হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
জলমহালের দায়িত্ব সরকারিভাবে ধরমপাশা উপজেলা কর্তৃপক্ষের এবং উপজেলার ইউএনও মনে করেন, জলমহালটি ওই মৎস্যজীবী সমিতির নামে খাস-কালেকশনে দেওয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি। কিন্তু নদীতে বাঁধ দেওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি এই প্রথম জানলাম।’ এই হলো সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্বশীলতার নমুনা। অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু মাছ চাষের নামে নদীর কী ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে, সেই খোঁজ রাখার প্রয়োজন মনে করেননি। অন্যদিকে ইজারা দিলে যে রাজস্ব আয় হতো, খাস-কালেকশনের মাধ্যমে তা থেকেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নদীর যেকোনো স্থানে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহের পথ রুদ্ধ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বাঁধদাতারা সেই অপরাধ নিশ্চিতভাবেই করেছেন এবং উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা এতে সহযোগীর। সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন এই অপকর্মের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও বাঁধ অপসারণে ভূমিকা রেখে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি নির্দোষ।
No comments