ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান ও এম জি কিবরিয়া সরকার-ইভিএম পর্যবেক্ষণের নীতিমালা জরুরি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন রাজনীতির মাঠ আবার গরম করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ না হলেও নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্য রকম একটি চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে তারা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ মোট ২৭টি ওয়ার্ডের ১৬৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডের ৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ৪৫০টি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ ও গণনার ব্যবস্থা করেছে।
এত বৃহৎ আকারে বাংলাদেশে এটিই প্রথম ইভিএম নির্বাচন, যেখানে মোট প্রায় চার লাখ ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৩২ হাজারের বেশি ভোটার এই পদ্ধতিতে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এখানে একদিকে থাকবে পুরনো ব্যালট ব্যবস্থা, আরেকদিকে আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থা। দুই ব্যবস্থার মধ্যে সুবিধা-অসুবিধা তুলনা করা খুবই সহজ হবে। কারণ নতুন ও পুরনো_দুই ব্যবস্থাই পাশাপাশি থাকবে। যেসব সুবিধার কথা আমরা এত দিন শুনে আসছি, ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা বাস্তবে কতটুকু কার্যকর, তা ব্যবহারিক দিক থেকে কতটুকু কার্যকর তার প্রমাণ আমরা পেতে যাচ্ছি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের জন্য এটিই বড় চ্যালেঞ্জ এই নির্বাচনে। যে ধরনের নির্বাচন-পূর্ব প্রস্তুতি থাকে নির্বাচনী এলাকার জন্য, তার চেয়ে ভালো প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের জন্য নিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। আস্থার জায়গায় আমাদের কোনো কমতি নেই, কিন্তু আশঙ্কা আছে। গণমাধ্যমের সজাগ দৃষ্টি থাকবে এই নির্বাচনের দিকে। যদি সামান্যতম অসুবিধাও ইভিএমে ভোগান্তির কারণ হয়, তাহলে এই আধুনিক পদ্ধতিটি ভোটাররা প্রশ্নবিদ্ধ করবেন, তাতে সন্দেহ নেই।
দুই. নির্বাচন সফল করার পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেমন অবদান থাকে, তেমনি অবদান থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে যাঁরা নিয়োজিত থাকেন অর্থাৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের। পুরনো কাগজি ব্যালট ব্যবস্থায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেসরকারি সংগঠনের জন্য একটি সাধারণ নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু ইভিএম ব্যবহারের ফলে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো আলাদা নীতিমালা এখনো করা হয়নি। একজন পর্যবেক্ষক কিভাবে বুঝবেন সঠিকভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে কি না কিংবা বোঝার জন্য তিনি কী করতে পারবেন, ভোটকেন্দ্রে তার একটি সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা অবশ্যই থাকা উচিত। ইভিএম ব্যবহারে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার। তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা বিভিন্ন কক্ষে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন। তাঁরা অনুমতি না দিলে কেউ ভোট দিতে পারবেন না। ইভিএমকে এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট গ্রহণ করার পর স্বল্প সময় পর্যন্ত বিরতি নিয়ে পরের ভোট গ্রহণ করতে ইভিএম একটি নির্দিষ্ট সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকবে। সেই সিগন্যাল প্রদান করার ক্ষমতা থাকবে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে। তিনি সুইচ অন না করা পর্যন্ত কেউ ই-ভোট দিতে পারবেন না। একজন পর্যবেক্ষক যে দায়িত্ব পালন করবেন, তাতে নির্বাচনের এই অংশটুকু খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গিয়ে আমরা দেখেছি, কিছু ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা সহযোগিতামূলক আচরণ করেন না। যেহেতু নীতিমালায় এমন কোনো নিয়ম নেই, যাতে তিনি বাধ্য হবেন সহযোগিতা করতে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কি না, তা নিয়ে পর্যবেক্ষকের মনে সন্দেহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। যেহেতু তাঁরা ই-ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন, সে কারণে পর্যবেক্ষকরা তাঁদের কাছ থেকে কী সহযোগিতা পাবেন, তার একটি স্পষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
তিন. বিরোধী দল বরাবর ইভিএমের বিপক্ষে কথা বলে আসছে। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে তারা নমনীয় নীতি গ্রহণ করলেও জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই ইভিএমের ব্যবহার মেনে নেবে না, সেটিও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে, ইভিএমে ব্যাপক কারচুপি সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ইভিএমে কিভাবে সেটি সম্ভব, তা আজ পর্যন্ত পরিষ্কার করেনি। বিএনপির নেতৃস্থানীয়রা মাঝেমধ্যে তাঁদের বক্তব্যে বলে থাকেন, বিভিন্ন দেশে এই ইভিএম বাতিল করা হয়েছে কারচুপির কারণে।
কিন্তু কোন কোন দেশে হয়েছে এবং কী ধরনের ইভিএমের ক্ষেত্রে, তা তাঁদের বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়নি। মাঝেমধ্যে সুধীসমাজের কোনো কোনো সদস্য ইভিএমে কারচুপির উদাহরণ টেনে ইউটিউবে ঢুকে ভিডিওগুলো দেখতে বলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁরা নিজেরা কখনো ভিডিওগুলো দেখেছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ভারত যে ইভিএম ব্যবহারে সফল এবং এ বিষয়ে তারা বিশ্বে একটি মডেল দেশ, এটি নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতের একজন প্রযুক্তিবিদ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, সে দেশের ইভিএমে ভোট জালিয়াতি করা সম্ভব। তাঁর সেই চেষ্টা ধোপে টেকেনি। সেই ভিডিওটি ইউটিউবে আছে। এর জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। ভারতের মতো বিশাল ভোটারসমৃদ্ধ একটি দেশে যদি ইভিএমে জালিয়াতি হতো, তাহলে তা কোনোভাবেই টিকে থাকত না।
চার. পৃথিবীর হাতে গোনা যে কয়টি দেশে ইভিএম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, সেসব দেশ মূলত অনুন্নত এবং তাদের রাজনীতিতে পারস্পরিক আস্থার অভাব রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশকে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো আগে থেকেই ইভিএম বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে নিরুৎসাহ করেছে। কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলেও আস্থার অভাবের কারণে তা বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব ছিল না। আমাদের এখানেও এই আস্থার অভাব রয়েছে। আমরা যারা ইভিএম মানছি না, তাদের যুক্তি হলো, এই যন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপি করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কারচুপি করা হচ্ছে সেই উদাহরণ হাতে না নিয়ে একটি আধুনিক এবং অনেক সুবিধাসম্পন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি কেন আমরা বাস্তবায়নে বাধা দেব? পৃথিবীর অন্য দেশে কী হলো না হলো, তা আমার দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে না। কারণ অন্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আর আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ আলাদা। তা ছাড়া এই যন্ত্র ভারত থেকে আসেনি, এমনকি আমেরিকা থেকেও না; এটি এ দেশের আস্থাভাজন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বুয়েটের মতো খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই যন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপি করা সম্ভব তা প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ এর বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই।
পাঁচ. বিএনপি এই প্রশ্নের আলোকে আজ পর্যন্ত তাদের বক্তব্য দেয়নি। তারা ইভিএম মানেই কারচুপির একটি যন্ত্র_এভাবেই বক্তব্য তুলে ধরছে। যদি তা-ই হবে তাহলে পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই কেন কমবেশি ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে? শুধু তা-ই নয়, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশও কেন ইভিএম ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছে? বিএনপির কথা যদি আমরা মেনে নিই, তাহলে ইভিএম বাস্তবায়ন হলো না।
কিন্তু বিএনপি কখনো ক্ষমতায় গিয়ে ইভিএম বাস্তবায়ন করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মানবে না_একই ইস্যুতে এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে বিরোধিতার সংস্কৃতি এ দেশে কখনোই ইভিএম প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেবে না। বিরোধিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সাধারণ মানুষ, যারা চায় দেশটি এগিয়ে যাক, দেশে আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ঘটুক। তাই বলব, এসব কথায় কান না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্ভয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া। ভোট গ্রহণ ও গণনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের প্রধান কর্তব্য। একইভাবে এই গণপ্রযুক্তিকে আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী করাও তাদের দায়িত্ব।
লেখকবৃন্দ : যথাক্রমে ডিরেক্টর-ইন-চার্জ, জাপান স্টাডি সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সহযোগী অধ্যাপক, বিসিএস শিক্ষা এবং এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দুই. নির্বাচন সফল করার পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেমন অবদান থাকে, তেমনি অবদান থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে যাঁরা নিয়োজিত থাকেন অর্থাৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের। পুরনো কাগজি ব্যালট ব্যবস্থায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেসরকারি সংগঠনের জন্য একটি সাধারণ নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু ইভিএম ব্যবহারের ফলে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো আলাদা নীতিমালা এখনো করা হয়নি। একজন পর্যবেক্ষক কিভাবে বুঝবেন সঠিকভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে কি না কিংবা বোঝার জন্য তিনি কী করতে পারবেন, ভোটকেন্দ্রে তার একটি সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা অবশ্যই থাকা উচিত। ইভিএম ব্যবহারে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার। তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা বিভিন্ন কক্ষে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন। তাঁরা অনুমতি না দিলে কেউ ভোট দিতে পারবেন না। ইভিএমকে এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট গ্রহণ করার পর স্বল্প সময় পর্যন্ত বিরতি নিয়ে পরের ভোট গ্রহণ করতে ইভিএম একটি নির্দিষ্ট সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকবে। সেই সিগন্যাল প্রদান করার ক্ষমতা থাকবে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে। তিনি সুইচ অন না করা পর্যন্ত কেউ ই-ভোট দিতে পারবেন না। একজন পর্যবেক্ষক যে দায়িত্ব পালন করবেন, তাতে নির্বাচনের এই অংশটুকু খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গিয়ে আমরা দেখেছি, কিছু ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা সহযোগিতামূলক আচরণ করেন না। যেহেতু নীতিমালায় এমন কোনো নিয়ম নেই, যাতে তিনি বাধ্য হবেন সহযোগিতা করতে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কি না, তা নিয়ে পর্যবেক্ষকের মনে সন্দেহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। যেহেতু তাঁরা ই-ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন, সে কারণে পর্যবেক্ষকরা তাঁদের কাছ থেকে কী সহযোগিতা পাবেন, তার একটি স্পষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
তিন. বিরোধী দল বরাবর ইভিএমের বিপক্ষে কথা বলে আসছে। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে তারা নমনীয় নীতি গ্রহণ করলেও জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই ইভিএমের ব্যবহার মেনে নেবে না, সেটিও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে, ইভিএমে ব্যাপক কারচুপি সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ইভিএমে কিভাবে সেটি সম্ভব, তা আজ পর্যন্ত পরিষ্কার করেনি। বিএনপির নেতৃস্থানীয়রা মাঝেমধ্যে তাঁদের বক্তব্যে বলে থাকেন, বিভিন্ন দেশে এই ইভিএম বাতিল করা হয়েছে কারচুপির কারণে।
কিন্তু কোন কোন দেশে হয়েছে এবং কী ধরনের ইভিএমের ক্ষেত্রে, তা তাঁদের বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়নি। মাঝেমধ্যে সুধীসমাজের কোনো কোনো সদস্য ইভিএমে কারচুপির উদাহরণ টেনে ইউটিউবে ঢুকে ভিডিওগুলো দেখতে বলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁরা নিজেরা কখনো ভিডিওগুলো দেখেছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ভারত যে ইভিএম ব্যবহারে সফল এবং এ বিষয়ে তারা বিশ্বে একটি মডেল দেশ, এটি নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতের একজন প্রযুক্তিবিদ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, সে দেশের ইভিএমে ভোট জালিয়াতি করা সম্ভব। তাঁর সেই চেষ্টা ধোপে টেকেনি। সেই ভিডিওটি ইউটিউবে আছে। এর জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। ভারতের মতো বিশাল ভোটারসমৃদ্ধ একটি দেশে যদি ইভিএমে জালিয়াতি হতো, তাহলে তা কোনোভাবেই টিকে থাকত না।
চার. পৃথিবীর হাতে গোনা যে কয়টি দেশে ইভিএম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, সেসব দেশ মূলত অনুন্নত এবং তাদের রাজনীতিতে পারস্পরিক আস্থার অভাব রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশকে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো আগে থেকেই ইভিএম বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে নিরুৎসাহ করেছে। কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলেও আস্থার অভাবের কারণে তা বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব ছিল না। আমাদের এখানেও এই আস্থার অভাব রয়েছে। আমরা যারা ইভিএম মানছি না, তাদের যুক্তি হলো, এই যন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপি করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কারচুপি করা হচ্ছে সেই উদাহরণ হাতে না নিয়ে একটি আধুনিক এবং অনেক সুবিধাসম্পন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি কেন আমরা বাস্তবায়নে বাধা দেব? পৃথিবীর অন্য দেশে কী হলো না হলো, তা আমার দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে না। কারণ অন্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আর আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ আলাদা। তা ছাড়া এই যন্ত্র ভারত থেকে আসেনি, এমনকি আমেরিকা থেকেও না; এটি এ দেশের আস্থাভাজন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বুয়েটের মতো খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই যন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপি করা সম্ভব তা প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ এর বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই।
পাঁচ. বিএনপি এই প্রশ্নের আলোকে আজ পর্যন্ত তাদের বক্তব্য দেয়নি। তারা ইভিএম মানেই কারচুপির একটি যন্ত্র_এভাবেই বক্তব্য তুলে ধরছে। যদি তা-ই হবে তাহলে পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই কেন কমবেশি ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে? শুধু তা-ই নয়, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশও কেন ইভিএম ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছে? বিএনপির কথা যদি আমরা মেনে নিই, তাহলে ইভিএম বাস্তবায়ন হলো না।
কিন্তু বিএনপি কখনো ক্ষমতায় গিয়ে ইভিএম বাস্তবায়ন করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মানবে না_একই ইস্যুতে এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে বিরোধিতার সংস্কৃতি এ দেশে কখনোই ইভিএম প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেবে না। বিরোধিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সাধারণ মানুষ, যারা চায় দেশটি এগিয়ে যাক, দেশে আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ঘটুক। তাই বলব, এসব কথায় কান না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্ভয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া। ভোট গ্রহণ ও গণনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের প্রধান কর্তব্য। একইভাবে এই গণপ্রযুক্তিকে আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী করাও তাদের দায়িত্ব।
লেখকবৃন্দ : যথাক্রমে ডিরেক্টর-ইন-চার্জ, জাপান স্টাডি সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সহযোগী অধ্যাপক, বিসিএস শিক্ষা এবং এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments