আজ ডব্লিউআইপিওর প্রতিনিধিদল আসছে-স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজ by আবুল হাসনাত

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজটি হয় কম্পিউটার-ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে, তখন বাংলাদেশে এ কাজটি হচ্ছে সনাতনী (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে। এতে প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজে যেমন বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনি উদ্ভাবনী পণ্য বা ধারণা যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে প্যাটেন্ট নিরীক্ষকদের।


তা ছাড়া প্যাটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক (নকশা ও মার্কা) অধিদপ্তরে রয়েছে নিরীক্ষক-সংকট। জনবলের অভাবেও সময়মতো নিবন্ধনের কাজ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজকে আরও সহজ করতে অধিদপ্তরের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তরটি বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলছে।
প্যাটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার (নিবন্ধক) বি এম কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো সময় যদি একসঙ্গে ১০ জন ব্যক্তি প্যাটেন্ট নিবন্ধন করাতে আসেন, তাহলে আমাদের একজন নিরীক্ষক তাঁদের সেবা দিতে পারবেন না। কিন্তু অধিদপ্তরের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করা গেলে একজন নিরীক্ষকই একসঙ্গে ১০ জনকে সেবা দিতে পারবেন।’
অধিদপ্তরের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়করণ হয়ে গেলে প্যাটেন্ট নিবন্ধনে আগ্রহী ব্যক্তিরা অনলাইনে আবেদন, অর্থ পরিশোধ ও সনদ নিতে পারবেন। তবে স্বয়ংক্রিয়করণের এ কার্যক্রম এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্যাটেন্ট অধিদপ্তরের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করতে গত বছর নভেম্বর মাসে বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সঙ্গে অধিদপ্তরের চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় অধিদপ্তরকে স্বয়ংক্রিয় করতে কী কী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে, তার একটি চাহিদা নিরূপণ করবে ডব্লিউআইপিও। তারপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে অধিদপ্তরকে দেবে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ ও ডব্লিউআইপিওর প্রতিনিধিদল আলোচনা করে যৌথ সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। সে আলোকেই অধিদপ্তরের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করার কাজ শুরু হবে।
অধিদপ্তরের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়করণের চুক্তির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার ডব্লিউআইপিওর একটি প্রতিনিধিদল অধিদপ্তর পরিদর্শনে আসছে বলে জানা গেছে।
অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, প্যাটেন্ট নিবন্ধনের জন্য পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়করণ প্রয়োজন। কারণ কেউ যখন তার উদ্ভাবিত পণ্যের স্বত্ব নিবন্ধন করতে চান, তখন নিরীক্ষককে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে হয় যে, এমন পণ্য আর কেউ তৈরি করেছে কি না। এটা খুবই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ।
সরকারের প্যাটেন্ট আইন অনুযায়ী, আবেদনের ১৮ মাসের মধ্যে কোনো পণ্য বা উদ্ভাবনের নিবন্ধন গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন শেষ না হলে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সময় আরও তিন মাস বাড়ানো যায়।
অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা মনে করেন, স্বয়ংক্রিয়করণ হয়ে গেলে প্যাটেন্ট নিবন্ধন দ্রুত ও আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে।
অধিদপ্তরের নিবন্ধক বি এম কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজ স্বয়ংক্রিয় করতে না পারায় আমরা এখনো পিসিটি-ভুক্ত (প্যাটেন্ট কো-অপারেশন ট্রিটি) হতে পারিনি। আমরা যদি স্বয়ংক্রিয় হতে পারি, তাহলে বিশ্বের যেকোনো দেশের উদ্ভাবকেরাই আমাদের এখান থেকে তাদের পণ্য বা উদ্ভাবনের প্যাটেন্ট করাতে পারবেন এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে।’
উল্লেখ্য, প্যাটেন্ট হলো নতুন উদ্ভাবিত কোনো পণ্য বা ধারণার স্বত্বাধিকারের আইনগত স্বীকৃতি। একে বলা হয় সমাজের সঙ্গে উদ্ভাবকের চুক্তি।
নিরীক্ষক-সংকট: অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্যাটেন্ট নিবন্ধনের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য অধিদপ্তরের অগ্রানোগ্রামে প্যাটেন্ট নিরীক্ষকের ১০টি পদ রয়েছে। গত বছর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে পাঁচজনকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দুজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আরেকজন বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে এএসপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও শিগগিরই চাকরি ছেড়ে দেবেন। তাহলে নিরীক্ষক থাকেন মাত্র দুজন।
অধিদপ্তরের সহকারী নিবন্ধক এম ফরহাদ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, প্যাটেন্ট হলো খুব উচ্চ কারিগরি বিষয়। আর বেশির ভাগ আবেদনকারীই বিদেশি। তাই অধিদপ্তরে বিষয়ভিত্তিক নিরীক্ষকের প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.