হুবহু-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করলে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে
ঢাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি। সম্প্রতি জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারসহ যুদ্ধাপরাধের বিচারসংক্রান্ত বিভিন্ন দিকের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে_ যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মসূচি মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে সরকার সম্পন্ন করতে পারবে বলে মনে করেন কি?
মহাজোট সরকার বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। নতুন প্রজন্মের বিরাট একটি অংশ তাদের নির্বাচিত করেছে, কারণ দলটি ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার ঘোষণা ছিল। সুতরাং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করলে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। কিন্তু এই ধিক্কৃত মানবতাবিরোধী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলেই হবে না, দ্রুত তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রায়ের বাস্তবায়নও এ সরকারকেই করতে হবে। এর সঙ্গে দেশের প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীর বিচারপ্রক্রিয়াও শেষ করতে হবে। সরকার যদি আন্তরিক হয় তাহলে এ সরকারের মেয়াদকালেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে। ৪০ বছর হলো আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। অথচ এখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। তাই আমরা আর কোনো বিলম্ব দেখতে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব বিচারকাজ শেষ করতে হবে। সরকার যদি তাদের এই মেয়াদে কাজ করতে না পারে তাহলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য কারণ থাকতে হবে_কেন তারা কাজটি করতে পারেনি।
দেশের বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপির যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিপক্ষ শিবিরে অংশগ্রহণকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
বিএনপির এ ধরনের পক্ষপাত জাতির জন্য কলঙ্কজনক। কোনো সুস্থ জাতিই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেবে না। কিন্তু বিএনপি এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এ জন্য জনগণ তাদের ধিক্কার জানিয়েছে। দেশের একটি বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপির উচিত মানুষের চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুধাবন করা। এটি করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। তারা বিরোধী দল হিসেবে একেবারেই ব্যর্থ। সব সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার পরও তারা সংসদে যাচ্ছেন না। শুধু সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার জন্য সংসদে যাচ্ছে। এটি কোনো দেশের জন্য শুভ হতে পারে না। আমরা চাই বিএনপি তাদের সব অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে সংসদে যাক। জনগণের কল্যাণে কাজ করুক।
আমরা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকাই_দেখব হিটলারের পক্ষে একটা টুঁ শব্দ করার মতো কেউ এখন আর অবশিষ্ট নেই। মিত্রশক্তি যুদ্ধের পর পরই সম্ভাব্য সব অপরাধী বিচারে সন্মুখীন করেছে। আইন তৈরি করা হয়েছে, যাতে হিটলার বা নাজিদের পক্ষে বিতর্ক তৈরির কোনো সুযোগ না থাকে। দেশে দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর বিজয়গাথাকে মিউজিয়াম আর স্থাপত্যের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো একদল মানুষ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, যাতে নাজিদের অবশিষ্ট কোনো নেতা বা যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করা যায়। তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখে, যাতে কেউ ইতিহাস নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরির সুযোগ না পায়। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রিয়ায় কার্টিজ ব্রাউন নামের একজন ইতিহাসবিদ কারাবাস করছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপরাধে। জানডাল নামের এক জার্মান হিটলারের পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য একটা ওয়েবসাইট খুলে বিচারাধীন।
কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের শক্তিশালী পদ্ধতি এখনো গড়ে ওঠেনি কেন?
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে কোনো গণতান্ত্রিক দল ছিল না। যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করেছে। তাদের নানাভাবে ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। এভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বারবার বিকৃত করা হয়েছে। অথচ ওই সব বিকৃতকারীকে শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। এ ধরনের কোনো আইনও হয়নি দেশে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে হবে, নাকি মানবাধিকার আইনে হবে_এ ধরনের নানা মতের ভিন্নতা সরকার পক্ষের নেতাদের মধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে! এটা কি সরকারের যথোপযুক্ত পদক্ষেপের ঘাটতি?
কোন প্রক্রিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে সেটা বড় কথা নয়। তবে সেটি হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই যুদ্ধাপরাধী। তবে এটি কিন্তু আইনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। তাহলেই তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের আরো কার্যকরী কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন?
এ বিষয়ে অবশ্যই সরকারের আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন করা উচিত। কারণ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিরা এখন অনেক শক্তিশালী।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সফেদ সিরাজ
দেশের বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপির যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিপক্ষ শিবিরে অংশগ্রহণকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
বিএনপির এ ধরনের পক্ষপাত জাতির জন্য কলঙ্কজনক। কোনো সুস্থ জাতিই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেবে না। কিন্তু বিএনপি এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এ জন্য জনগণ তাদের ধিক্কার জানিয়েছে। দেশের একটি বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপির উচিত মানুষের চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুধাবন করা। এটি করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। তারা বিরোধী দল হিসেবে একেবারেই ব্যর্থ। সব সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার পরও তারা সংসদে যাচ্ছেন না। শুধু সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার জন্য সংসদে যাচ্ছে। এটি কোনো দেশের জন্য শুভ হতে পারে না। আমরা চাই বিএনপি তাদের সব অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে সংসদে যাক। জনগণের কল্যাণে কাজ করুক।
আমরা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকাই_দেখব হিটলারের পক্ষে একটা টুঁ শব্দ করার মতো কেউ এখন আর অবশিষ্ট নেই। মিত্রশক্তি যুদ্ধের পর পরই সম্ভাব্য সব অপরাধী বিচারে সন্মুখীন করেছে। আইন তৈরি করা হয়েছে, যাতে হিটলার বা নাজিদের পক্ষে বিতর্ক তৈরির কোনো সুযোগ না থাকে। দেশে দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর বিজয়গাথাকে মিউজিয়াম আর স্থাপত্যের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো একদল মানুষ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, যাতে নাজিদের অবশিষ্ট কোনো নেতা বা যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করা যায়। তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখে, যাতে কেউ ইতিহাস নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরির সুযোগ না পায়। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রিয়ায় কার্টিজ ব্রাউন নামের একজন ইতিহাসবিদ কারাবাস করছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপরাধে। জানডাল নামের এক জার্মান হিটলারের পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য একটা ওয়েবসাইট খুলে বিচারাধীন।
কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের শক্তিশালী পদ্ধতি এখনো গড়ে ওঠেনি কেন?
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে কোনো গণতান্ত্রিক দল ছিল না। যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করেছে। তাদের নানাভাবে ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। এভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বারবার বিকৃত করা হয়েছে। অথচ ওই সব বিকৃতকারীকে শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। এ ধরনের কোনো আইনও হয়নি দেশে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে হবে, নাকি মানবাধিকার আইনে হবে_এ ধরনের নানা মতের ভিন্নতা সরকার পক্ষের নেতাদের মধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে! এটা কি সরকারের যথোপযুক্ত পদক্ষেপের ঘাটতি?
কোন প্রক্রিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে সেটা বড় কথা নয়। তবে সেটি হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই যুদ্ধাপরাধী। তবে এটি কিন্তু আইনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। তাহলেই তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের আরো কার্যকরী কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন?
এ বিষয়ে অবশ্যই সরকারের আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন করা উচিত। কারণ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিরা এখন অনেক শক্তিশালী।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সফেদ সিরাজ
No comments