আন্দোলন চলবে বাকি দাবি আদায়ে কালো ব্যাজ ধারণ-আন্দোলনের মুখে জাবি প্রক্টরের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া অবশেষে পদত্যাগ করলেন। ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।


এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন প্রক্টর। এদিকে অন্যান্য দাবি আদায়ে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবশ্য কালো ব্যাজ পরে একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন তারা। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল সোমবারও ক্যাম্পাসে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ
মিছিলের কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। 'শিক্ষক সমাজ'-এর ব্যানারে সাধারণ শিক্ষকরা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো কলা ভবনের সামনে থেকে শোক র‌্যালি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা প্রক্টরের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এর কিছু সময় পর শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে পৃথক একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর'-এর ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তারাও প্রক্টরের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এছাড়া একই দাবিতে ইংরেজি বিভাগ একটি র‌্যালির আয়োজন করে।
দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসন। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রক্টর। এ সময় তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা-বানোয়াট, অমূলক ও সুপরিকল্পিত দাবি করে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে সৃষ্ট ন্যক্কারজনক বিবৃতি ও পাতানো রাজনৈতিক খেলার প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রদর্শনপূর্বক এই মুহূর্তে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।' কারও চাপে বা অন্যায় আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের আস্থাভাজন হওয়ায় আরজু মিয়া প্রক্টরের পাশাপাশি সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্য, নবনির্মিত শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এদিকে প্রক্টরের পদত্যাগের ঘোষণার পর উল্লাসে ফেটে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাদের আন্দোলনের প্রথম সফলতায় আনন্দ প্রকাশ করেন। এরপর তারা তাদের অন্যান্য দাবি আদায়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ, মাহি মাহফুজ, মৈত্রী বর্মণ, হাসান আখতার সিনা, হাফিজ আসাদ অঙ্কন, আরাফাত রহমান, আতিয়া ফেরদৌস চৈতি, আফিফা রাজ্জাক মুনা, সাকলাইন আল মামুন, রাইয়ান রাজি। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে জুবায়েরের খুনিদের আজীবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রত্ব বাতিল ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার, খুনিদের মদদদাতা ও ইন্ধনদাতাদের একই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ছবিসহ নাম প্রকাশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের আধুনিকায়ন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা আবারও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তারা বলেন, অন্যান্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলবে। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা চলছিল।
এদিকে গতকাল দুপুর ২টার দিকে সমাজবিজ্ঞান ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক সমাজের সদস্যরা। এ সময় তারা শিক্ষক সমাজের ঘোষিত অন্যান্য দাবি আদায়ে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শিক্ষক সমাজের আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে আমাদের চলমান আন্দোলনের একটি ধাপ অতিক্রম করেছি মাত্র। তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার কালো ব্যাজ ধারণ করে একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পর সকাল সাড়ে ১০টায় শোক র‌্যালি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশ থেকে গিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া হবে। শিক্ষক সমাজের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে জুবায়ের হত্যার ঘটনায় পুনর্তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ও মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, জুবায়েরের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ পুরো প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুনকে লাঞ্ছনাকারী আরজু মিয়ার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি নিশ্চিত করা, 'গণনিয়োগ'প্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল।
সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে উপাচার্যের গৃহীত সব কর্মকাণ্ড অনুমোদন করা হয়। শিগগির উপাচার্য প্রক্টরের নাম ঘোষণা করবেন বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.