পবিত্র কোরআনের আলো-যারা চুক্তি রক্ষা করে চলতে চায় তাদের সত্যোপলব্ধির সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ

। ফায়িযা ন্ছালাখাল আশ্হুরুল হুরুমু ফাক্বতুলুল্ মুশরিকীনা হাইছু ওয়াজাদ্তুমূহুম ওয়াখুযূহুম ওয়াহ্সুরূহুম ওয়াক্বউ'দূ লাহুম কুল্লা মারসাদ্; ফাইন তা-বূ ওয়াআক্বা-মুস্ সালা-তা ওয়াআ-তুয্ যাকা-তা ফাখাল্লূ ছাবীলাহুম; ইন্না ল্লা-হা গাফূরুর্ রাহীম। ৬। ওয়াইন আহাদুম্ মিনাল মুশ্রিকীনা ছ্তাজা-রাকা ফাআজিরহু হাত্তা- ইয়াছ্মাআ' কালা-মা ল্লা-হি ছুম্মা আব্লিগ্হু মা'মানাহূ; যা-লিকা বিআন্নাহুম ক্বাওমুল্ লা-ইয়া'লামূন।


৭। কাইফা ইয়াকূনু লিলমুশরিকীনা আ'হ্দুন ই'নদা ল্লা-হি ওয়াই'নদা রাসূলিহী ইল্লা ল্লাযীনা আ-হাদ্তুম্ ই'নদাল মাছ্জিদিল হারাম; ফামা- ছ্তাক্বা-মূ লাকুম ফাছ্তাক্বীমূ লাহুম; ইন্না ল্লা-হা ইউহিব্বুল মুত্তাক্বীন। ৮। কাইফা ওয়াই ইঁয়্যায্হারূ আ'লাইকুম লা-ইয়ার্ক্বুবূ ফীকুম ইল্লা ওঁয়ালা- যিম্মাহ; ইউর্দ্বূনাকুম বিআফ্ওয়া-হিহিম ওয়াতা'বা- ক্বুলূবুহুম; ওয়াআকছারুহুম ফা-ছিক্বূন। [সুরা : সূরা আত্ তাওবা, আয়াত : ৫-৮]
অনুবাদ : ৫. অতঃপর যখন সম্মানিত চার মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন মুশরিকদের (যারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং অবাধ্য হয়েছে) যেখানে পাবে, সেখানেই হত্যা করবে। তাদের বন্দি করবে, অবরোধ করবে এবং তাদের পাকড়াও করার জন্য প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওত পেতে বসে থাকবে। আর যদি তারা তওবা করে (সত্যের পথে ফিরে আসে), নামাজ কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে, তবে তাদের স্বাধীনভাবে চলার সুযোগ দেবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৬. মুশরিকদের মধ্যে কেউ যদি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে সেই সময় পর্যন্ত আশ্রয় দেবেন, যে পর্যন্ত সে আল্লাহর বাণী শুনবে। এরপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পেঁৗছে দেবেন (অর্থাৎ তাকে নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে)। এটা এ কারণে যে তারা তো অজ্ঞ জনগোষ্ঠী।
৭. মুশরিকদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে কোনো চুক্তি কি করে বলবৎ থাকতে পারে? (যেহেতু তাদের কোনো নির্ভরযোগ্যতা নেই)। তবে মসজিদুল হারামে বসে তোমরা যাদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছিলে, তারা যতক্ষণ চুক্তি রক্ষা করে চলবে, তোমরাও ততক্ষণ চুক্তি রক্ষা করে চলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ দায়িত্বনিষ্ঠদের পছন্দ করেন।
৮. এ মুশরিকদের সঙ্গে কেমন করে তোমরা চুক্তি করে চলবে, যখন তাদের অবস্থাটা এ রকম, তারা কখনো তোমাদের ওপর বিজয়ী হলে তারা তোমাদের ব্যাপারে কোনো আত্মীয়তার মর্যাদা দেয় না এবং অঙ্গীকারের প্রতিও সম্মান দেখায় না। তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট রাখতে চায়, কিন্তু অন্তরে কুটিলতা। এদের অনেকেই তো পাপাচারী।
ব্যাখ্যা : ৫ নম্বর আয়াতে সেই মুশরিকদের কথা বলা হয়েছে, যারা চুক্তিভঙ্গের মাধ্যমে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে কঠোর সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই আয়াতে। তবে যারা ইসলামের পথে আসতে চায়, তাদের পথ সুগম করার তাগিদও দেওয়া হয়েছে এই আয়াতে। ৬ নম্বর আয়াতে মুশরিকদের চার শ্রেণীর সবাইকে সাধারণভাবে অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়েছে, তাদের মধ্য থেকে যারা আরব ভূমিতে মুসলমানদের সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য আরো বেশি সময় চায়, তবে তাদের সময় দেওয়া উচিত এই লক্ষ্যে যে তারা ইসলাম ও মুসলিম সমাজের মহত্ত্ব জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করার জন্য। আর সে জন্য প্রয়োজন তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা। ধর্ম নিয়ে চিন্তা করার ব্যাপারে তাদের ওপরে যেন কোনো চাপ না থাকে। এই সুরার প্রথম থেকে ১৬ নম্বর আয়াত পর্যন্ত কুরাইশ কাফিরদের সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের দ্বারা চুক্তিভঙ্গের কারণে বা ইসলামের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্রের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৭ থেকে ১৬ নম্বর পর্যন্ত আয়াতগুলো কখন নাজিল হয়েছিল, সে ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। কেউ কেউ মনে করেন, এ আয়াতগুলো হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নাজিল হয়েছিল। তবে বেশির ভাগ মুফাসসিরের অভিমত হলো, ১ থেকে ৬ নম্বর আয়াতের মতো এই আয়াতগুলোও একই পটভূমিতে নাজিল হয়েছিল। এ সুরার শুরুতে মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেটা মক্কা বিজয়ের এক বছর দুই মাস পরের ঘটনা। সেই ঘোষণায় আরব উপদ্বীপের মুশরিকদের জন্য চার মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। আয়াতগুলো কয়েক দিন আগে নাজিল হলেও মেয়াদকালটা ধরা হয়েছিল হজে আকবার বা মূল হজের (৯ জিলহজ) আরাফাতের ময়দানের ভাষণের সময় থেকে। তখনই সর্বসমক্ষে এই ঘোষণাটা প্রচার করা হয়েছিল। আরবে রেওয়াজ ছিল কোনো চুক্তি বাতিলের বা এ-সংক্রান্ত অন্য কোনো ঘোষণা দিতে হলে খোদ চুক্তি স্বাক্ষরকারী বা তার কোনো নিকটাত্মীয়কে সে ঘোষণা দিতে হতো। সে অনুযায়ী নবী (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে এই ঘোষণা পাঠ করে শোনানোর জন্য মক্কায় পাঠিয়েছিলেন। ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে মুশরিকদের সঙ্গে কোনো চুক্তির ওপর আস্থা রাখার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও যারা চুক্তি রক্ষা করে চলে, তাদের জন্য ইসলামের পথে আসার সুযোগ সৃষ্টি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.