বৃহস্পতিবার আদালতে যাচ্ছেন-আস্থা ভোটে গিলানির জয়

সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখে পড়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে পাকিস্তানে আস্থা ভোট ডেকেছিল প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির সরকার। তাদের উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে আস্থা ভোটে জিতে গেছে সরকার। গিলানি বলেছেন, ‘আজকের দিনটি পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে স্বাগত জানানোর দিন।’


পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ভোটের আগে ভাষণে গিলানি বলেন, ‘নিজেদের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট স্বাধীন। যদি কেউ আমাদের না চান, তাহলে অনাস্থা ভোট দিতে পারেন।’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আস্থা ভোটে জিতে গিলানি সরকার অন্তত একটি কৌশলগত অস্ত্র হাতে পেল, যা দিয়ে নৈতিকভাবে তারা সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের বৈরিতা মোকাবিলার চেষ্টা করতে পারবে। তারা বলতে পারবে, সরকারের পেছনে জনসমর্থন আছে। সরকার ঠিক পথেই চলছে, ঠিক কাজই করছে।
পার্লামেন্টে ভোটের আগে দিনের বেলা, আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গিলানিকে আদালতে তলব করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশমতো প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের হওয়ার মামলাগুলো পুনরায় চালু করতে সরকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁকে আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রুলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গিলানি পার্লামেন্ট বলেন, ‘আমি আদালতকে সম্মান করি। ১৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হই, আমার প্রথম সিদ্ধান্ত কী ছিল? আমি গৃহবন্দী বিচারকদের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলাম। আমরা পার্লামেন্টের দায়িত্বশীল সদস্য এবং আমরা গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আস্থা ভোটের জন্য জাতীয় পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিক বিধিনিষেধের আওতায় থেকে কাজ করতে হবে এবং দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রদর্শন করতে হবে।’ প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতার তিন স্তর অর্থাৎ আইন বিভাগ বা পার্লামেন্ট, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সবার ওপরে পার্লামেন্ট।
ভোটের পর গিলানি বলেন, প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, পার্লামেন্টই সবার ওপরে ও সার্বভৌম এবং গণতন্ত্র স্থিতিশীল।
তবে আস্থা ভোটের আগে পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করেন প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ শেরপাওয়ের সদস্যরা।
পার্লামেন্টে পিএমএল-এন নেতা চৌধুরী নাসির আলী বলেন, ‘বাগাড়ম্বর দিয়ে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা যায় না। এই অযোগ্য সরকার একটি অসার প্রস্তাবে নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখানোর চেষ্টা করছে।’ দলের অপর নেতা এহসান ইকবাল দিনটিকে ‘পার্লামেন্টের ইতিহাসে একটি কালো দিন’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আস্থা ভোটের প্রস্তাবে গত শনিবার তিনটি সংশোধনী দিয়েছিল পিএমএল-এন। তাদের সে সংশোধনী গৃহীতও হয়। কিন্তু এর পরও গতকাল দলটি পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করে।

No comments

Powered by Blogger.