অনুসরণীয় রাজনীতিক by শেখ রফিক

ড়াই-সংগ্রাম আর ভালোবাসার নাম জ্যোতি বসু। আমৃত্যু লড়াই করেছেন তিনি মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। মার্কসবাদী রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে গড়ে তুলেছিলেন নিজেকে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সর্বভারতীয় রাজনীতিতেই অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব জ্যোতি বসু। তার বাবা নিশিকান্ত বসু লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য। কিন্তু ছেলে জ্যোতি ফিরেছিলেন কমিউনিস্ট হয়ে।


জ্যোতি বসু ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গের তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ যার নাম ভারতের প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য বারবার আহ্বান আসা সত্ত্বেও দলের সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন অকপটে। তার ইমেজের ওপর ভর করেই পশ্চিমবঙ্গে তিন দশকেরও বেশি ক্ষমতায় থেকেছে বামফ্রন্ট।
জ্যোতি বসুর আদি বাসস্থান বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারোদী গ্রামে। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় জ্যোতিকিরণ বসু। স্কুলে ভর্তির সময় 'কিরণ' ছেঁটে দেওয়া হয়। কিন্তু মেধা ও কৃতিত্বের কারণে কিরণ শব্দটি তার জীবনেরই সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভূপেশ গুপ্ত ১৯৩৬ সালে পড়তে এলেন লন্ডনে। লন্ডনের একটি বাড়িতে ভূপেশের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়। মূলত এ সময় থেকেই জ্যোতি বসু কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। লন্ডনে ভারত লীগ ও ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস ইন গ্রেট ব্রিটেনের সদস্য এবং ভারত মজলিসের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে তা যথাযথভাবে পালন করেন।
জ্যোতি বসু ১৯৪৪ সালে গড়ে তোলেন বেঙ্গল আসাম রেল রোড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। তিনি ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের হুমায়ুন কবীরকে আট হাজার ভোটে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন।
জ্যোতি বসু ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিধানসভায় ভাষণ দেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিবারণে কাজ করেন। স্বাধীন দেশে বিধানসভা অধিবেশনের প্রথম দিনেই তিনি জনসাধারণের ওপর কংগ্রেসি সরকারের পুলিশি দমন-পীড়নের সমালোচনা করেন। কিছুদিন পর কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
জ্যোতি বসু ১৯৬৭ সালে বরানগর কেন্দ্রে কংগ্রেসের অমরেন্দ্র ভট্টাচার্যকে হারিয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে জনগণ আবারও তাকেই জয়ের মালা পরায়।
বামফ্রন্ট সরকারের আবির্ভাব ঘটে ১৯৭৭ সালে। সাতগাছিয়া কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিধানসভায় ফিরে এলেন জ্যোতি বসু। এবার তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেন। তখন তার বয়স ৬৩ বছর।
জ্যোতি বসু মন্ত্রিসভার কাজে অগ্রাধিকার পেয়েছিল ভূমি সংস্কার। চালু হয় অপারেশন বর্গা। ফিরিয়ে দেওয়া হয় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার।
যুক্তফ্রন্টের আমলে ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব উঠলেও তাতে তার দল সায় দেয়নি। পরে তাকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে তাতেও সায় দেয়নি তার দল।
জ্যোতি বসু ২০০০ সালের নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে অবসর নেন। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার গঠিত হয় বামপন্থিদের বাইরে থেকে সমর্থনের ভিত্তিতে। এ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তিনি ও হরকিষেন সিং সুরজিতের বিশেষ ভূমিকা ছিল। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'যত দূর মনে পড়ে'।
জ্যোতি বসু ৯৭ বছর বয়সে ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি সল্ট লেকের আমরি হাসপাতালে মারা যান।

No comments

Powered by Blogger.