চরাচর-বিলুপ্তির পথে সরাইলের 'গ্রে-হাউন্ড' কুকুর by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

দেখতে অনেকটা শেয়ালের মতো। হালকা-পাতলা গড়ন। স্বভাবটা বাঘের। চোখেমুখে যেন শুধু শিকারের নেশা! উপমহাদেশজুড়ে এর খ্যাতি। প্রাণীটির নাম 'গ্রে-হাউন্ড' কুকুর। আদি আবাসের রেশ ধরে 'সরাইলের কুকুর' বলেই বেশি পরিচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার বিখ্যাত এ 'গ্রে-হাউন্ড' কুকুর অবশ্য এখন বিলুপ্তির পথে। উপজেলার একটি মাত্র বাড়িতে বাণিজ্যিকভাবে এ কুকুর লালন-পালন করা হয়।


তবে আশার বিষয়, সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুকুর প্রজননকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের অজিতলাল রবি দাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয় 'গ্রে-হাউন্ড' কুকুর। দুধ-ভাত, মাছ আর মাংস এ প্রাণীর প্রিয় খাবার। ছোট একটি কুকুর ছানার (তিন মাস বয়স পর্যন্ত) জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হয় প্রায় আধা কেজি দুধ। বড় আকারের কুকুরগুলোকে দুধের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ ও মাংস দিতে হয়। এ ছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক খাবারও খায় এরা। 'গ্রে-হাউন্ড' কুকুর শিয়াল, বন বিড়াল, বাগডাস শিকারে বেজায় পারদর্শী। এগুলো সাদা-কালো, লালসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। শখের বশেই কুকুরপ্রেমীরা এগুলো লালন করে থাকেন। বাড়িতে থাকা কুকুর অপরিচিত কাউকে দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। কুকুর লালনকারী নোয়াগাঁও গ্রামের অজিতলাল রবি দাস জানালেন, বর্তমানে তাঁর বাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি কুকুর আছে। পাঁচটি ছোট কুকুর ছানার জন্য তাঁর প্রতিদিন প্রয়োজন হয় দুই কেজি দুধ। সুস্বাস্থ্যের হয়ে বেড়ে ওঠা ও ভালো দাম পেতে মাংসসহ উন্নত খাবারও তিনি দেন মাঝেমধ্যে। অজিত রবি জানান, তিন থেকে পাঁচ মাস বয়সের একটি কুকুর ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর একেকটি বড় কুকুরের দাম ওঠে ৬০-৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু কৌশলগত কারণে তিনি বড় কুকুর খুব একটা বিক্রি করতে চান না। বাড়িতে থাকা কুকুরগুলোকে নাম ধরে ডাকেন অজিত। টাইগার, মধু, পপি, কালি, লালি, টমি, কালা ইত্যাদি নামে ডাক দিলে কুকুরগুলো চলে আসে তাদের 'প্রভু' অজিতের কাছে। জন্মের কিছুদিন পরই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদের নাম দেওয়া হয়। তবে কিভাবে এই কুকুর সরাইলে এলো, এর সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। অনেকের মতে, বহুকাল আগে এক দেওয়ান সাহেব হাতি নিয়ে সরাইল থেকে কলকাতা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি কুকুর দেখে তিনি এটি নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বাধ সাধেন কুকুরের মালিক। দেওয়ান সাহেব হাতির বিনিময়ে কুকুরটি নিয়ে যান। ওই কুকুর নিয়ে দেওয়ান শিকারে যান জঙ্গলে। কেউ বলেন সেখানে বাঘের সঙ্গে, কেউ বলেন শিয়ালের সঙ্গে কুকুরটির মিলন হয়। পরে ওই কুকুরটি আবার সরাইলে চলে আসে। এভাবেই এ প্রজাতির কুকুরের বিস্তার ঘটতে শুরু হয়।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.