সিরিয়ায় রাষ্ট্রব্যবস্থায় পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় হায়াত তাহরির আল-শাম
এইচটিএসের নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের অভিযানের মুখে গত রোববার দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় চলে যান বাশার। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন এইচটিএসঘনিষ্ঠ আমলারা। প্রধানমন্ত্রী হন মোহাম্মদ আল-বশির। গত সপ্তাহেও তাঁরা সিরিয়ার প্রত্যন্ত ইদলিব প্রদেশে এইচটিএসের সরকার পরিচালনা করতেন। এই ইদলিব থেকেই ২৭ নভেম্বর বিদ্রোহীদের অভিযান শুরু হয়।
২০১৬ সালের আগে আল-কায়েদার অংশ ছিল এইচটিএস। দামেস্ক অভিমুখে অভিযানের সময় উপজাতি নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং সাধারণ সিরীয়দের তারা নিশ্চয়তা দিয়েছিল, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। এইচটিএসপ্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানিও একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি বড় পরিসরে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং বাশারের পতনে কাজে এসেছে।
বাশারের আমলের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরাতেও তৎপর অন্তর্বর্তী সরকার। দামেস্কের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ইদলিবের সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্টের মোহাম্মদ গাজাল। সরকারি কর্মচারীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১ মার্চের মধ্যে গাজালের লক্ষ্য সরকারি সেবাগুলো চালু করা। কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তাঁরা মাসে গড়ে ২৫ ডলার বেতন পান। গাজালের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, স্যালভেশন গভর্নমেন্টের সঙ্গে মিল রেখে তা ন্যূনতম ১০০ ডলার করা হবে।
বাশারের পতনের পর দামেস্কে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের অবস্থান দেখা গিয়েছিল। পরে তাদের শহরের বাইরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয় এইচটিএস। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইদলিব থেকে পুলিশ সদস্যদের আনা হয়েছে। তাঁরা ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখভাল করছেন। পরিচয় গোপন করে তাঁদের একজন বলেন, ইদলিবে তাঁরা টহল দেওয়ার কাজ করতেন।
তবে সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্ক ও জর্ডানের সীমান্ত এলাকায় এখনো বিদ্রোহীরা সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ‘আরব বসন্তের’ সময় ২০১১ সালে বাশারবিরোধী লড়াই শুরুর পর থেকে নিজেদের মধ্যেও রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়েছিলেন এই বিদ্রোহীরা। সংঘাতের সেই ইতিহাস বাশার-পরবর্তী সিরিয়ায় অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক ইয়েজিদ সেইগের মতে, সিরিয়ার সমাজ ও বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারে কোনো পক্ষের একক প্রভাব থাকাটা কঠিন হবে।
সরকারে যে একক প্রভাবের কথা ইয়েজিদ সেইগে বলেছেন, তা বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে। সরকার গঠন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এইচটিএসের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ফুটে উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দামেস্কের দুজন কূটনীতিক বলেছেন, বিদেশি দূতাবাসগুলোয় শুধু এইচটিএস সদস্যরাই দেখা করতে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি দেখা যাচ্ছে না; এটা হতাশাজনক।
এ বিষয়ে সিরিয়া বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্টাডিজের প্রধান জোশুয়া ল্যান্ডিস বলেন, সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আল-জুলানিকে অবশ্যই নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে একই সঙ্গে তাঁকে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
সিরিয়ার হোমস শহরে সাঁজোয়া যানের ওপর অপেক্ষমাণ বিদ্রোহী যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স |
No comments